somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিছ চৌধুরী নিখোঁজ

২৩ শে মে, ২০১১ সকাল ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব দোর্দণ্ড প্রতাপশালী হারিছ চৌধুরী পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ! কত বছর নিখোঁজ থাকতে পারবেন তিনি? বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হারিছ চৌধুরী কোথায়, দলের কেউ জানে না! জানে না তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেরা গোয়েন্দা সংস্থা। দেশের ৪০ বছরের শাসনামলের ইতিহাসে তার মতো কাউকে নিখোঁজ দেশান্তরী হয়নি কলঙ্কের ঢোল গলায় নিয়ে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়কদের অন্যতম হারিছ চৌধুরী বিএনপি জামানায় নানা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে ওয়ান-ইলেভেন আসতে না আসতেই ঢাকার গুলশানের আলিসান বাড়ি, দামি গাড়ি, শখের হরিণ, বেসাত সম্পত্তি সব ফেলে গ্রামের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে ওপারে ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়ি পালিয়ে যান। ওয়ান-ইলেভেনের ঝড়ে পতিত সবাই একে একে ঘরে ফিরলেও একজন ফিরেননি, তার নাম হারিছ চৌধুরী। করিমগঞ্জে গিয়েও প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সন্ধান চালিয়ে হারিছ চৌধুরীর খোঁজ পাননি। যারা মনে করতেন ভারত না হলে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এখন তারাও বলছেন, হারিছ চৌধুরী ওইসব দেশেও নেই। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সফরকালেও পাননি তার সন্ধান। সেখানকার দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন কোথায় হারিছ চৌধুরী? ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই বলে জানান দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সিলেটে প্রায়ই খবর রটে হারিছ চৌধুরী নাকি মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন কিন্তু তার সত্যতাও মিলেনি। কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ওই হত্যার সঙ্গে হারিছ চৌধুরীর নাম নিয়ে সন্দেহের তীর ছুড়লে অনেকেরই চোখ কান খুলে। তখন নানা মহলে হারিছ চৌধুরীর প্রতি কিবরিয়া হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ তীব্র হয়। কারণ তখন প্রভাবশালী এ রাজনৈতিক সচিবের নির্দেশেই হবিগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার বদলি, হত্যা তদন্তের পুলিশি কর্মকর্তা রদবদলের ঘটনা ঘটে। সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে এই হারিছ চৌধুরীই দেশের প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসন ছিল তারই হুকুমের দাস। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কাঁধে বন্দুক রেখে নানা অপরাধ সংঘঠিত করার নেপথ্য নায়কও নাকি ছিলেন এই হারিছ চৌধুরী। হারিছ চৌধুরী জানেন, তার পাপের বোঝা কতটা ভারী। প্রতিমন্ত্রী বাবরের রিমান্ড ও জেলজীবন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় দেশে ফিরলে কী হতে পারে তার করুন পরিণতি। তাই তার দল ও দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি জমানায় দাপুটের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করা এই মানুষটি পৃথিবীর যেখানেই আছেন আঁধারেই লুকিয়ে রয়েছেন। গতকাল সিআইডি প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করেছে একুশ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হানিসাকে হত্যার উদ্দেশেই যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয় তার নেপথ্যে ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান জকিগঞ্জ সফরকালে বেসরকারি কলেজের শিক্ষক হারিছ চৌধুরীকে তার বক্তৃতা শুনে দলে টানেন। ঢাকায় এসে যুবদল করে নানা তদবির, ফন্দি-ফিকিরে শুরু হয় তার নতুন জীবন। এরশাদ জামানায় শাহজাহানপুরে ছোট্ট স্টিলের ফার্নিচারের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে বিজয়নগরে আশা কারভিশন নামে গাড়ির শোরুম খুলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক চেযারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীর ভাই খসরু চৌধুরী ছিলেন পার্টনার। ওই সময় এক ব্যাংক কর্মকর্তার বদলির তদবিরে গিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের কাছে নাজেহাল হন। '৯১ সালের নির্বাচনে তার গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জ আসনে ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েই জামানত হারান। এরশাদের বন্যার সময় তার শরীরে ভয়াবহ চর্মরোগ দেখা দিলে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে চিকিৎসা সংকটে পড়েন। সে সময় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস পয়সা কড়ি দিয়ে তার চিকিৎসা করান। ২০০১ সালে নির্বাচনের সময় তিনি বিএনপির হাওয়া ভবনের মন জয় করেন। নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে হারিছ চৌধুরীর নতুন চেহারায় আবির্ভাব ঘটে রাজনৈতিক সচিব হিসেবে। তখন অনেক মন্ত্রীই নন, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাও তার মন জুগিয়ে চলতে তটস্থ থাকতেন। রাতারাতি বিত্ত বৈভবের জৌলসপূর্ণ জীবনের অধিকারী হন হারিছ চৌধুরী। দেশে বিশাল সম্পদের বাইরে তার লুটপাটের টাকায় যুক্তরাজ্য বিএনপির রিক্ত নিঃস্ব এক নেতার নামেই পাঁচটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালু করান। কিনেন মূল্যবান বাড়ি। ওয়ান-ইলেভেনের বিপর্যয় কেটে যাওয়ার পর কী নির্বাচন, কী দলীয় কাউন্সিল কোনোকিছুরই খবর নেননি হারিছ চৌধুরী। তাই বিএনপির কমিটি থেকেও কাউন্সিলে মুছে যায় হারিছ চৌধুরীর নাম। জানা যায়, বিএনপি হাই কমান্ডও এই বিতর্কিত মানুষটির দায় নিতে নারাজ।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারাভান-ই-গজল - তালাত আজিজ

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৬:৩১


ভারতীয় অন্যতম গজল শিল্পীদের তালিকায় তালাত আজিজের নাম অবশ্যই থাকবে বলে আমার ধারনা। তার বেশ কিছু গান আমার শোনা হয়েছে অনেক আগেই। জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস ও গুলাম আলী সাহেবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×