হ্যালো মা তুমি এখন ও বাসায় আসছনা ।আমার একটু তারা আছে জলদি এসো ।দুঃখিত আমি আপনার মা নই, হাসপাতাল রেচিপ্সান ডেস্ক থেকে বলছি ।আপনি কি অনিতা বলছেন? হ্যাঁ ।আপনি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসুন ।আপনার মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ।ওনাকে বাসায় নিয়ে যান। মাত্রীছায়া ক্লিনিক অ্যান্ড হস্পিতাল ,ধানমণ্ডি ।দুশ্চিন্তা করবেন না আপু ।আপনি আসেন ।
হিমু তার বন্ধুদের বিদায় দিয়ে রাজুর দেয়া জুতা একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে আর চিন্তা করছে নিজের মার কথা।চিন্তা করছে হসপিটালে রেখে আসা মার কথা । আজ নেহায়েত না পেড়ে রাজুর দেয়া জুতা পড়ে বেড়িয়েছে ।দুদিন আগে জুতার পিন পায়ে ঢুকে হাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ।দম আঁটকে আসার উপক্রম তাই ব্যেথা নিয়ে মনোবল পূঁজি করে সামনের হাঁটছে এগুচ্ছি ।যাহ্ এইবার ছিঁড়ছে জুতা ।ভাই এভাবে কেউ জুতাই পারা দেয়...বলতে বলতে পেছনে ফিরে দেখি বিপরিত লিঙ্গ ।কিছু বলার আগেই আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাল আমারি সরি বলা দরকার ।সরি না বলায় অনেক অপরাধ হয়ে গেছে আমার ।পরিস্থিতি টা এরকম ।যাক পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেলো ‘’ কোত্থেকে যে এরা আসে ‘’ ।আমি অবাক হলাম না কারন যতক্ষন আমার সামনে মেয়েটি ছিল তার চেহারা ছিল বিধ্বস্ত এবং অস্থির ।তারপরেও অপরাধ বোধ নেই বা ছিলোনা ।মনে হয় এটায় নগরের নিয়ম।
এক্সকুজমি ফাতেমা খায়রুন্নাহার।জি আমি অনিতা আমার মা.. ও আপু এসেছেন ঐযে আপনার মা। কি হয়েছিল মা তোমার ।মাথা আর হাতে ব্যান্ডেজ। শোকর আদায় কর আল্লাহ্ তালার কাছে তোর মা এখনও বেঁচে ।
আমি ডক্টর তৈয়ব এখানে একটা সাইন করুন ।তার পর মা কে নিয়ে বাসায় চলে যান ।মা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ।আপনার মা মনে হয় অনেক দুশ্চিন্তা করেন ।ওনাকে একটু রিলেক্স রাখবেন ।
আপনাদের বিল এসেছে কত ।কোন বিল পরিশোধ করতে হবেনা ।আমার মা কে এখানে কে এনেছে ৩/৪ জন ছেলে ।ওনারা সব ফরমালিটি পূরণ করেছেন।
আমি কিভাবে যোগাযোগ করতে পারি ।কোন ফোন নাম্বার কোন নাম ...না শুধু বলেছে সেবক বন্ধু সংগঠনের সেচ্ছাসেবী ওরা ।
এই রুপা ,রুপা... একটু দাড়াও ...।ওহ আমার ভুল হয়ে গেছে ,দুঃখিত কিছু মনে করবেন না আমি মনে করেছিলাম...থাক আর সাফাই দিতে হবেনা... এটা কোন ধরনের ভদ্রতা । কিসের ক্ষমা কি হিমু সেজেছেন? খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁট বেন আর মেয়েদের রুপা রুপা করে ডাকবেন ।নিজেকে পাগল মনে হলে পাবনা চলে যান।কি হয়েছেরে অনিতা কি আর হবে
উনি হিমু সেজে রাস্তায় মেয়েদের রুপা রুপা করে ডেকে বেড়ান ।স্যারের সম্মান আপনাদের মত কিছু ছেলের জন্য খুন্ন হচ্ছে ইদানীং ।স্যার কি এই হিমু সৃষ্টি করেছিলেন ?আরে ভাইয়া শোন ফেইসবুক তো কয়েক হাজার নাকি হিমু...সবাই মহাপুরুষ হয়ে যাচ্ছে ফেইসবুকের কল্যাণে ।
ভাই এসব নখরামি ছাড়েন। আর বাড়িতে যাইয়া মা বাবার সেবা করেন...যত্তসব ।
আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিলে খুব বেশি ক্ষতি হতনা...তবে আমার অনেক কিছু বলার ছিল ...।শুধু এই টুকু বলব পরিস্থিতি মানুষকে অসহায় করে কিন্তু হিমুকে না ।
আমি কিছু না বলে আমার মত হেঁটে যাচ্ছি ...।আমি...আমার মা আমার বাবা...আমার জগত...
ওহ ভাইয়া তোকে কাল মার ফোন থেকে নাহলেও ২০ টা কল দিয়েছে তুই ধরলিনা কেন । মা তো আমাকে ১০০ বার ও ফোন করে আমি কি ধরি ? আমাকে বেশী ভালবাসে তাই কল করে আমি সেটা জানি ।তুই জানিস মা কাল সারা রাত হসপিটালে ছিল। মা মারাত্তক এক্সিডেন্ট হয়েছে ।মার এক ব্যগ রক্ত লেগেছে ।আর কত মাকে কষ্ট দিবি ভালবাসার সুযোগ নিয়ে ।ভাই তুই ঐ লোককে যে উপদেশ দিয়েছিস তার একটুও কি করিস ।স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আ বলতে ভুলে গেছি মা খালার বাসা থেকে ফেরার সময় রিক্সা থেকে পরে যায়।পেছনে থেকে হোন্ডা ধাক্কা মারে ।আর কত নেশার টাকা যোগান দেবে মা ।আর কত হাত পাতবে তোর জন্য ।ডাক্তার বলেছেন ওনার মেন টালি বিশ্রাম দরকার ।তোকে এসব বলে কি লাভ ।তোর মায়ের প্রয়োজন নেই তোর দরকার নেশার টাকার ।
একমাস পর হ্যাঁরে অনিতা আমাকে যারা হসপিটালে নিল তাদের কোন খোঁজ নিয়েছিস ,না মা ওরা কোন ঠিকানা বা ফোন নাম্বার রেখে যাইনি । তবে শুনেছি সেবক বন্ধু সংগঠনের ৪/৫ জন ছেলে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে গেছে ।জানিস অনিতা একটা ছেলের চেহারা আমার একটু মনে আছে ।কিন্তু গভির ভাবে মনে করতে গেলে আমার মাথা কেমন জানি ব্যথা করে । এখন মনে করার কোন দরকার নাই ।আসিকের সাথে দেখা হয়েছে ? হ্যাঁ ভাইয়া আজ বাসায় আস্তে পারে ।আসতে পারে বলছিস মানে ! আমার কথা শোনেনি ও আজ শুনেছে ।আমার ছেলে বেরায় নেশা করে এদিকে আর এক মা এর ছেলে আমাকে হসপিটাল নেয় আমাকে রক্ত দেয় ।
তুমি কিভাবে জানলে মা ওদের কেউ একজন তোমাকে রক্ত দিয়েছে ।না একটু আবছা আবছা কথা শুনেছিলাম। একটি ছেলে রক্ত দেয়ার জন্য খুব জরাজুরি করছিলো । আচ্ছা এখন থাক।তুমি ঘুমোয় । আমাকে একটা বই দে চোখ বুলাতে বুলাতে ঘুমাই ।এই আমার প্রিয় একজন লেখকের বই ।কার হুমায়ুন আহমেদ দে পড়ি ।আসলে ওনার চলে যাওয়া এখন ও মানতে পারছিনা রে ।নাম কি ? বইটার দরজার ওপাশে .২/৩ পাতা পড়া না হতেই অনিতা অনিতা বলে জোরে জোরে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল ।অনিতা দৌড়ে এলো মার কাছে ।আমার মনে পড়েছে হলুদ পাঞ্জাবী পড়া একটা ছেলে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আগে এসে আমাকে ধরেছিল আর কয়েক জন বলছিল হিমু তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চল ।মা তুমি এসব কি বলছ ।হ্যাঁ এই বইয়ে যে নাম লিখা সেই নামেই আমি ডাকতে শুনেছি ।হলুদ পাঞ্জাবী পরা ছিল আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল ।অনিতা মা এর হাত চেপে ধরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে । মা জিজ্ঞেস করলেন তুই কাঁদছিস কেন অনিতা ।কাউকে বলতে পারবনা মা কাউকে না কোন দিন না ।
অনিতা ওর ভাই আশিক কে ফোন দিল ।হ্যাঁ অনিতা বল ।কি বলব ভাই তুই পারলে এখনি বাসায় আই ।আহ কি হয়েছে বল ।ভাইরে আমরা বড় ধরনের একটা ভুল করে ফেলেছিলে ।যা করা উচিত হয়নি। ফোন রাখ আমি আসছি ।
অনেক দিন পর আশিক বাসায় আসলো মা খুশী সন্তানের মুখ দেখে ।আশিক নির্লিপ্ত একটা ভাব নিয়ে মার কাছে গেলো ।কেমন আছ কথা এখানেই শেষ ।বোনের রুমের করা নারতেই অনিতা ভাইকে ধরে কেঁদে উঠল । আর বলল ভাইরে আমি আর তুই দুদিন আগে যাকে অকথ্য ভাষায় অপমান অপদস্ত করেছি সেই ছেলেটি মাকে ওর বন্ধুরা সহ হসপিটালে নিয়ে যাই ।আর ওই ছেলেটি রক্ত দিয়েছে মাকে ।আশিক সব শুনল কিন্তু কোন পতিক্রিয়া নেই ।তুই কিছু বল ভাইয়া ।
মা আমাকে ৩০০/= টাকা দাও ।ভাইয়া এত কিছু বলার পরেও তুই আবার টাকা চাস । তোর মনুসত্ত টা ও নেশার দাস হয়ে গেছে ? ছি ভাইয়া ছি ?
আশিক মাকে বলে গেল আমি রাতে আসবো ।এরকম আশা তুই প্রতিদিনি আসিস।আচ্ছা মা গেলাম ।আর ছেলেটাকে ফেরান গেলনা।
অনিতার ফোন বাজচ্ছে অনিতা দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরল।আমি হিমু...মা ভাল আছে...? তারপর লাইন কেটে দিল ।আর কোন দিন অনিতার আর ফোন আসেনি ।
আশিক একটা হলুদ পাঞ্জাবী পরে ঘরে ঢুকল মাকে বলল আমি আর কোনোদিন নেশা করবনা ।আর কোনদিন কোন টাকা চাইবনা মা ।অনিতা মার ঘরে ঢুকে যা দেকলো তা সপ্নেও ভাবেনি ।ভাইয়া তুই হিমু হবি ।আমার সেই যোগ্যতা নেই রে বোন ।আমি ঐ হিমুকে আজ থেকে খোঁজা শুরু করব ।রাতের পর রাত এই নিয়নের আলর শহরে আমি হাঁটবো যদি কন দিন দেখা পাই বুকে জরিয়ে ধরব ।ঠিক আমি আমার বাবাকে জরিয়ে ধরতাম। চোখ মুছতে মুছতে আশিক ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ।
অনিতা প্রতিদিন একবার করে ঐ পথে দাঁড়িয়ে থাকে যে পথে প্রথম দেখা হয়েছিল ।ওর বিশ্বাস হিমুরা রাতে খালি পায়ে হাঁটে ।এই পথে একদিন না একদিন তো আসবেই ।এই বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর কাটিয়ে দিল। হিমু আর ঐ পথ দিয়ে আসেনি কোনদিন ।আর কোন ফোন আসেনি ।কারন সিমটা ঐ একটা কল করে তারপর ভেঙ্গে ফেলেছিল ।হিমু কখনো অনিতার ভুল ভাঙ্গাতে আসেনি ।আশিকের ভুল ভাঙ্গাতে আসেনি ।ইচ্ছা করলে হিমু সব বলে দিত পারত ।বলে দিতে পারত ওর মা বাবা নেই ,বলে দিতে পারত ওরও একজন রুপা ছিল ...যে রুপা ওরই চোখের সামনে এক্সিডেন্ট হয়ে মারা গেছে ।চলে গেছে কন দুরপারাবারে ।না ফেরার দেশে । চেতনে অবচেতনে হয়ত ভুল করে কাওকে রুপা নামে পেছন থেকে ডেকে ফেলে ।হিমুর কাছে রুপা এখন ও অমর ।হিমু হাঁটে আর রুপার সাথে কথা বলে ।আসলে একা একা কথা বলে ।কথা শোনে শুধু হিমুর ছায়া ।হঠাৎ একদিন ঐ রাস্তা দিয়ে হিমু যাচ্ছে ...অনিতা পেছন থেকে ডাকছে হিমু...এই হিমু...এতক্ষন ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছনা ...।হিমু পেছন ফিরেনা...কিন্তু অবচেতনে অনিতা শুনছে এবং বুঝতে পারছে অনিতা পরিস্থিতির কাছে অসহায় ।খুব চেষ্টা করেও হিমুর হাত ধরল।আজ আমি তোমার সব কথা শুনবো। কি শুনবে অনিতা আমি অনিতা না আমি রুপা।আমাকে রুপা বলে ডাকো একবার ওই দিনের মত...অনিতার মা জোরে জোরে ডাকছে এই রুপা এই রুপা ...।অনিতা ঘুম ভেঙ্গে দেখে ওর মার হাত ধরে আছে শক্ত করে হিমুর হাত মনে করে..তারপর.........???