পরীক্ষা নিয়ে সবাই খুব ব্যস্ত ছিলো। তাই ঈদ পালন করা হয়নি কারো। উপরন্তু অনেকের ঈদের দিনও পরীক্ষা ছিলো। তাই বি.টি.এইচের প্রায় চলি্লশ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের একসাথে ঈদ উৎসব করাও হয়ে উঠেনি। হঠাৎ করেই সেদিন তানিম ভাই বলে উঠলো- চলো আজ সবাই একসাথে ঈদ পুনর্মিলনী করি। তারিখটা ছিলো 3 নভেম্বর। যেই কথা সেই কাজ। মিনিট বিশেকের মধ্যেই ফোন করে মোটামুটি সবাইকে দাওয়াত দেয়া হলো। আয়োজন শুরু হলো অনুষ্ঠানের। মেনু্য তেমন বড় না। খিচুরি সাথে খাসি ভুনা আর মুরগীর রোস্ট। সন্ধ্যা হতে না হতেই সবাই জড় হতো লাগলো আসাদ ভাইয়ের রুমে। ওদিকে রান্নায় ব্যস্ত তানিম ভাই, রনি ভাই, তৌহিদ ভাই আর রেজা ভাই। কিন্তু যখন বন্ধুরা সবাই এসে পৌঁছাতে লাগলো তখনো আমরা কমন রুমের চাবি পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও চাবি পাওয়া গেলো না। শেষে সিদ্ধান্ত হলো আসাদ ভাইয়ের রুমেই পার্টি হবে। কারণ উনারটা ফ্যামিলি এপার্টম্যান্ট। সবাই আসাদ ভাইয়ের রুমেই জমিয়ে আড্ডা শুরু করলো। এগারটার দিকে শুরু হলো খাওয়া পর্ব। তুমুল খানাপিনা শেষে সবাইকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে দেখা গেলো। রাঁধুনী মসলা না থাকতেই যা হলো, থাকলে যে কি হতো আল্লাহ মালুম!
এরপরই আমাদের সুদর্শন বালক (!) ইবু ভাই ঘোষণা দিলেন- সবাইকে থাকতে হবে। ছয় তারিখের ইউনিক্স ল্যাবের তিনটা এসাইনমেন্ট আর সাত তারিখের সফটওয়্যার আর্কিটেকচারের রিপোর্ট জমা দেয়ার ভাবনা শিকোয় তুলে বসে গেলাম বসের আহ্বানে। বস ঘোষণা দিলেন- এখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সবাইকে এসে একটা একটা চিরকুট তুলতে হবে যার ভাগ্যে যা পরে তা পারফর্ম করে দেখাতে হবে। শুরু হলো ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স। শুরুতেই চপল ভাই মাতালের অভিনয় করতে গিয়ে ধুন্ধুমার লাগিয়ে দিলেন। বেশি মাতাল হয়ে যাওয়ায় মদ (পানি ভর্তি বোতল) ঢেলে ঘর ভাসিয়ে দিলেন। এরপর একে এক বাকিরা পারফর্ম করলেন। কেউ হকার, কেউ মুরগী বিক্রেতা, কেউ হিজড়া, কেউ শাবনুরের নাচ এরকম খুব মজার মজার অভিনয় করে দেখালেন। কেউ কেউ শুনালেন আঞ্চলিক ভাষায় প্রেমিকার সাথে টেলিফোন আলাপ, প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কবিতা- 'আর পারছি না গুরু'। আসাদ ভাই আর শিল্পী আপা একমাত্র দম্পতি ছিলেন আমাদের অনুষ্ঠানে। তারা শোনালেন তাদের মধুর প্রেম কাহিনি। যদিও এখন আসাদ ভাইয়ের প্রিয় গান- আমি ফাঁইসা গেছি মাইনক্যার চিপায়!!! তবে উপস্থাপক ইবু ভাই যখন শাবনুরের নাচ নেচে দেখাচ্ছিলেন তখন ডাকসাইটে চলছিল সাকিরার গান। আমরাও তাতেই ওয়াও ওয়াও বলে উৎসাহ দিয়ে গেলাম। কি আর করা ! শালার সুজন-সখী গানটা তখন ল্যাপিতে খুঁজেই পাওয়া গেলো না। নইলে . . . . . ব্যাটাকে . . . .!
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স শেষে শুরু হলো গানের আসর। মাহবুব ভাই প্রথমেই শুরু করলেন হাত বাড়ালেই বন্ধু পাওয়া যায় কি? তখন তো সবাই পুরা পাংখা। এমন দরাজ গলায় গাইছিলেন হেড়ে গলা নিয়েও তাল না মিলিয়ে পারলাম না। এরপর সবার অনুরোধে গাইলেন বাপ্পার 'আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে'। মাহবুব ভাইয়ের গান শেষ হওয়ার পর অনেক অনুরোধের পর গান গাইলেন রাজিয়া সুলতানা। গাওয়ার আগে তিনি ঘোষণা দিলেন এমন রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবো যেটা কেউ শুনেনি। আমি ভেবেছিলাম এ নিশ্চয় বাতুলতা। কিন্তু গান শুরু করলে দেখি আসলেই দাড়িওয়ালা বুড়োর এতো এতো গান শোনার পরেও অনেক বাকী রয়ে গেছে বই কি! রাজিয়ার গানের সময় পুরো রুম জুড়ে ছিলো পিনপতন নীরবতা। সত্যিই অসাধারণ গেয়েছেন তিনি। এরপর কিছুক্ষণ হইচই। এর মাঝে হ্যাপি (মেয়ে ভাবলে হতাশ হবেন) শোনাল 'কবিতা গল্প তুমি'। হঠাৎ করেই দাদা (হিন্দোল) শুরু করলেন 'তোমার বাড়ির রঙের মেলায়'। এই গানেই সবার অংশগ্রহণ ছিলো সবচেয়ে বেশি।
মাঝে কিছু সময় মেহেদি ভাইয়ের প্যারোডি, লিও-র কৌতুকের পরে আবার মাহবুব ভাই শুরু করলেন মাহিনের ঘোড়াগুলির 'তোমায় দিলাম আজ'। আমি তো তখন রাপুখাপাং। একে একে গাইলেন অঞ্জনের কাঞ্চনজঙ্গা, চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো। রাত অনেক হয়েছে এরি মাঝে। প্রায় তিনটে। সবাই যার যার রুমে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেছে। মোরশেদ ভাই আচমকা ঘোষণা দিয়ে শুরু করলেন "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।" আমরা সবাই উঠে দাঁড়ালাম। বাতাস প্রকম্পিত করে সবটুকু আবেগ দিয়ে গাইলাম- 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে, ওমা আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।' আরো একবার বুঝলাম যতদূরে যাই, যেখানেই যাই, যেখানে থাকি, যেভাবে থাকি- হৃদয়ে রাখি শুধু একটি নাম- বাংলাদেশ।
হোক গরীবের-ই দেশ
হোক অবহেলিতের-ই দেশ
তবুও আমার বাংলাদেশ।
মাকসুদের গান ! আর মনে পড়ছে না। আজ যখন লেখাটা লিখছি তখন ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে ঘোর অমানিশা। জানি না কে জ্বালাবে দীপ! আছে কি তেমন কেউ?
** এটা বাঙালি কমিউনিটির প্যাঁচাল। যাদের সময়ের অনেক দাম তারা দয়া করে এই মাকাল পরিবেশনার পেছনে সময় নষ্ট করবেন না। বিফলে মূল্য ফেরত দেয়া হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০০৬ রাত ৯:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



