বাংলাদেশে প্রতিবেশী একটি দেশের ঘাতক বাহিনী কাজ করছে বলে গণমাধ্যমের খবর এবং বিরোধী দলের অভিযোগের মধ্যেই রাজশাহীতে প্রকাশ্য দিবালোকে একে-৪৭ সহ একজন বিদেশি ঘাতকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। র্যাব ওই ঘাতককে নিজেদের সদস্য বলে দাবি করলেও রাজশাহীর মানুষ তা মানতে নারাজ। তারা তাকে ভিনদেশি ঘাতক বলেই দাবি করেছেন। তার নির্বিচার গুলিতে শনিবার ছাত্রশিবিরের এক নেতা নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল র্যাবকে ‘কিলার বা ঘাতক’ আখ্যা দেয়ার মধ্যেই আবারও এই অভিযোগ উঠল।
সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণে র্যাবকে এলিট ফোর্স হিসেবে গঠন করা হলেও এটি এখন রাজনৈতিক হত্যা ও গুমসহ বহু অপকর্মে জড়িত বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে।
এদিকে পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে জনগণকে যেভাবে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে শুরু করেছে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের পোশাক পরে গতকাল বিএনপির মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। এ সময় পুলিশকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
রাজশাহীতে র্যাবের সঙ্গে ভিনদেশি কিলার!
রাজশাহী েথকে আমাদের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানান, গত শনিবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় হরতালের সমর্থনে আয়োজিত ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভে র্যাব ও পুলিশের গুলিতে রাশেদুল ইসলাম রান্টু (২৩) নামে ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক নেতা নিহত হন। এছাড়া ১৮ দলীয় জোটের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় র্যাবের পাশে থেকে সিভিল ড্রেসে একে-৪৭ নিয়ে গুলি চালায় এক ব্যক্তি।
এ ঘাতকের পরিচয় নিয়ে মহানগরবাসীর মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার এটাই ছিল রাজশাহী মহানগরীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। র্যাব তাকে তাদের সদস্য দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন। অনেকে ওই ব্যক্তিকে সরকারি দলের পক্ষের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিলার মনে করছেন। আবার অনেকে তাকে ভিনদেশি কিলার বলেও সন্দেহ করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার বিকালে মহানগরীর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় মতিহার থানা ১৮ দলের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়ে পথসভার জন্য প্রস্তুতি নেয় নেতাকর্মীরা। এ সময় হাঠাত্ করেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, শটগানের গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।
এতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ।
এর কয়েক মিনিট পর পুলিশের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয় র্যাব-৫-এর সদস্যরা। এর একপর্যায়ে দেখা যায় সিভিল ড্রেসে মাথায় বড় বড় চুল, বড় গোঁফ, জিন্সের প্যান্ট, বুকের বোতাম খোলা ফুল হাতা শার্ট এবং বেল্ট জুতা পরা এক ব্যক্তি ফিল্মি কায়দায় র্যাবের গাড়ির পাশ থেকে একে-৪৭ বন্দুক নিয়ে র্যাবের পেছন দিক থেকে ছুটে এসে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়তে থাকে।
একে-৪৭ বন্দুক ব্যবহারকারী অজ্ঞাত এ ব্যক্তিকে নিয়ে সব মহলে নানা গুঞ্জন চলছে। র্যাব-৫-এর সিও লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, ওই ব্যক্তি তাদেরই একজন সদস্য। তবে তিনি ওই সদস্যের নাম প্রকাশ করতে চাননি। রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের মেজর শফিক দাবি করেন, তাদের গাড়ি থেকে নেমে ওই সদস্য তাদের সঙ্গে অভিযানে অংশ নেন।
তবে ওই ব্যক্তির চেহারা ও পোশাকের ধরনে অনেকে তাকে ভিনদেশি নাগরিক হিসেবেও সন্দেহ করছেন। সিভিল ড্রেসে এত বড় অস্ত্র ব্যবহারে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সাধারণত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সিভিল ড্রেসের সদস্যদের ছোট অস্ত্র বহনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু একে ৪৭-এর মতো ভারি অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করায় ওই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে।
অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির গুলিতে রাশেদুল ইসলাম রান্টু নিহত হন। এ সময় ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসিকের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম বাচ্চুসহ অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে ১৮ দলের নেতারা জানিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন জানান, ‘১৮ দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ও র্যাব-৫ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আ.লীগ ক্যাডারদের হাতে দামি দামি বিদেশি অস্ত্র হাতে তুলে দিয়েছে। যাতে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থেকে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমাতে পারে।’
স্থানীয় ১৮ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, র্যাব-পুলিশ অস্ত্রধারী ক্যাডারদের
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯