অদৃষ্টের পরিহাসে আজ গল্প আর মোনা একই জায়গায় চাকরি করে। দুজনেরই বয়স ২৫ বছর। মোনার বাবা-মা ওর জন্য ছেলে খুঁজছেন। এদিকে মোনা অসহায়ের মত গল্পকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যে সে আসলেই গল্পকে ভালবাসে এবং প্রতিদিন আরো নতুন করে ওর প্রেমে পড়ছে।
গল্প যতই মোনাকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে, ততই মোনা ওকে আরো পাকড়ে ধরতে চায়। গল্পর ভাষায় মোনা হল 'মিস স্টকার'।
মোনা যখন ওকে না বলেছিল গল্পর মনটা চুরমার হয়ে গিয়েছিল। সে আর মোনার সাথে একটা কথাও বলেনি। বালিশে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিল।
পরদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে যখন রাস্তায় দেখল ওর মহা ফেরেব্বাজ এক বন্ধু ৩ নম্বর 'জিএফ' নিয়ে ঘুরছে, ওর মাথায় প্রথম যে চিন্তাটা এল, মেয়েরা আসলে লুচ্চা ছেলেদেরই পছন্দ করে।
কয়েকমাস নারীবিদ্বেষী হয়ে প্রেমের গুষ্টি উদ্ধার করার পর গল্প ধাম করে এক মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল, নাম তার নীলা।
মেয়েটি খুবই সুন্দর আর মিষ্টি দেখতে, গলা আরো মিষ্টি। রাতের বেলা রঙ নাম্বার রঙ নাম্বার খেলতে খেলতে মেয়েটি গল্পকে পাকড়ে ফেলল।
গল্প ভাবেনি এইভাবে সম্পর্ক এগুতে পারে। কিন্তু আসলে যে সে ভালবাসা পাওয়ার জন্য ভিতরে ভিতরে কিরকম উন্মুখ ছিল যে তিন সপ্তাহের মাঝেই তাদের প্রথম দেখা হয়ে গেল।
এরপরের কিছু সময় ভালোই কেটেছিল যতক্ষণ না তাদের বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেল। গল্পর বাবা রাজি হলেননা। নীলার বাবা মেয়ের মুখ চেয়ে রাজি হলেন প্লাস ছেলে ভাল পরিবারের।
নীলা পরবর্তী পরিক্ষায় করল ফেল, গল্পর বাবা করলেন পরিহাস। ফলশ্রুতিতে গল্প রেগে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। টানা এক সপ্তাহ বন্ধুর বাড়ি, রাস্তা আর রেলস্টেশনে ঘুরার পর মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে গল্প যখন বাড়ি ফিরে মাকে শয্যাশায়ী দেখল, ওর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
ও নীলাকে বলল ওকে ভুলে যেতে। সম্ভব না হলে অন্তত আরো ৫-৬ বছর অপেক্ষা করতে যাতে গল্প নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নীলার বাবা গল্পকে হুমকি দিলেন যে হয় সে ওর পরিবারকে নীলাকে মেনে নিতে রাজি করাবে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই সপরিবারে এসে বিয়ের কথা পাকা করে যাবে নইলে নীলার বিয়ে উনি এক মাসের মাঝেই অন্য কোথাও দিয়ে দিবেন।
রাগের মাথায় 'তাই করুন' বলে গল্প নীলার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
দুইদিন পর নীলা বলল 'চল পালিয়ে যাই'। গল্প রাজি হলনা। ওর কেন জানি আগের মত নীলাকে আর ভালোও লাগছিলনা। আর অসহ্য একটা রাগ হচ্ছিল মোনার উপর। সে নীলার ফোন ধরাও ছেড়ে দিল। নীলার বান্ধবী মারফত একটা সংবাদ শুধু পেল যে নীলা ঘরবন্দী হয়ে আছে, পড়াশুনা শিকেয় উঠেছে।
ঠিক এক মাস পর ...
সকাল নয়টার দিকে গল্পর বাসায় পুলিশ এল, সাথে নীলার বড় ভাই উদ্ভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়। নীলা গলায় দড়ি দিয়েছে।
পুলিশ অবশ্য নীলার ভাইয়ের অভিযোগ সত্ত্বেও গল্পকে ধরে নিয়ে যায়নি, সব ঘটনা শুনার পর নীলার ভাইকে শান্ত হতে বলে উঠে গেল। নীলার ভাই গল্পকে হুমকি দিয়ে বসল যে সে দেখে নেবে ওকে। গল্পর বাসায় নীলাকে নিয়ে রাগারাগি হল মেলা। গল্প শুধু চুপচাপ শুনল। ওর বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। কেন সে সেরাতে নীলার ফোনটা ধরেছিল, না হত নীলার সাথে ওর পরিচয়।
এত ঘটনা গল্পর ২-১ জন কাছের বন্ধু আর কিছু আত্মীয় ছাড়া কেউ জানতোনা, স্বাভাবিকভাবেই মোনাও না।
(চলবে)