এরপরে বেশ কয়েক মাস পার হয়ে গেছে, এর মাঝে মোনার বাবা-মা ওর জন্য পাত্র খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছেন। হয় পাত্র পছন্দ হয়না, আর যদিবা হয় তো মোনাই নাকচ করে দেয়। মোনার বান্ধবীরা বলে যে ওর মনে গল্প বসে আসে। এখন যদি সে বাবা-মার দেয়া ছেলেও পছন্দ করে তো তাকেও গল্পর মতই হতে হবে।
মোনা কিছু বলেনা। সে আশা ছাড়েনা। এদিকে গল্প পড়েছে বিপদে। একদিকে যেমন সে মোনাকে সহ্য করতে পারেনা তেমনি আবার মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ভালবাসা উথলে উঠে মোনার জন্য। বাচ্চাকালের প্রেম কি এতই ভুগায় !
ফলাফল, সে উঠতে বসতে মোনাকে অপমান করা শুরু করল। বিধি বাম, মোনা ততই আরো জেদী হয়ে যায়। ওদের অন্য সহকর্মীরা ওদের পিছে হাসাহাসি করে। তবে বেশিরভাগেরই মত, এরা দুইটা শেষমেশ 'একসাথেই' হবে।
কারো কারো মত ভিন্ন, ' আরে একদিন দেখি দুইটা হেভী রোমান্টিক মুডে নদীর ধারে বসে আছে। পরের দিনই ঝগড়া করে মুখ কালো আর লাল করে ঘুরছে। এদের বেশিদিন টিকবেনা।'
গল্পর চিন্তা 'এ মেয়ে বিয়ে করছে না ক্যান??? '
মোনার চিন্তা 'আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তাহলে কেন দূরে থাক?'
মোনার আশাবাদী বান্ধবী, ' আরে ধুত, একটু সময় দে। ও ঠিকই তোকে হ্যাঁ বলবে।'
নিরাশাবাদী বান্ধবী,'শুন, ভালবাসা দিয়ে সবকিছু পাওয়া যায়না। অযথা সময় নষ্ট করিসনা। অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেল। কষ্ট কম পাবি।'
বন্ধুরা বিপদে কারণ ওরা না পারে মোনাকে ডাই হার্ড সাপোর্ট দিতে, না পারে গল্পকে 'ভুল' বলতে।
হটাত একদিন মোনা আর গল্পকে একই কমিটির সদস্য করে এক অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজে লাগিয়ে দেয়া হল। ওদেরকে জুনিয়র পেয়ে বাকিরা সব বিটকেল বিটকেল কাজ ওদের ঘাড়ে চাপাতে লাগলেন।
মোনা যারপরনাই খুশি আর গল্প ততটাই বিপাকে।
ব্যানার বানাতে বসে দুজনে এক কম্পিউটার শেয়ার করছিল। তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। মোনা একমনে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়েছিল। মেয়েটা খুবই খুঁতখুঁতে। ছাত্রী অবস্থাতে দেখা যেত সবার থেকে আগলে নিয়ে ল্যাব রিপোর্ট জমা দিত। পরিছন্ন রিপোর্ট। কেউ চাইলে সহজে দিতনা, দিলেও পইপই করে বলে দিত ' দেখিস, যেন ধুলা না লাগে'। এস এস সি/ এইচ এস সি-এর জীববিজ্ঞানের ব্যবহারিক খাতা যে মোনা কিভাবে তৈরি করেছিল গল্প চিন্তাও করতে ভয় পেল।
'কিছু খাবে?'
মোনা চমকে ঘুরে তাকাল,'কি খাব?'
'আরে সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কিছু আনব তাহলে।'
'যেটা তোমার ইচ্ছা'
গল্প বিরক্ত হয়ে বিল্ডিং থেকে বের হল। এই মেয়ের নিজের ইচ্ছা প্রকাশের ক্ষমতা কম, শুধু গল্পকে বিয়ের ব্যাপারেই একাট্টা। আর সব কিছু ভাবে অন্যরা ঠিক করে দেবে ! ধুত!
১০ মিনিট পর যখন গল্প আলুর চপ আর ডালমুট নিয়ে ফেরত এল, মোনাকে পিসির সামনে পেলনা। আরে গেল কোথায় !
দুই রুম পর ওদেরই ব্যাচের একজন বসে বসে নেট ব্রাউজ করছে। ওর কাছে গিয়ে দেখে আসল গল্প, না মোনা তো নেই।
'এই সুজন, মোনা কই?'
'অ্যাঁ ! জানিনাতো। তুইতো ওর সাথেই ছিলি।'
'না বেরিয়েছিলাম।'
'তাহলে মোনা কার সাথে কথা বলছিল একটু আগে?'
'আমিতো দশ মিনিট আগে বের হয়েছিলাম।আর তুই এতদূর থেকে টের পেলি কেমনে? খুব জোরে কথা বলছিল?'
'আরেনা মোনা কঁকিয়ে উঠেছিল। আমি পাত্তা দেইনি তোদের মধ্যে খুনশুটি হচ্ছে ভেবে ..'
গল্প ধপ করে বসে পড়ল। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ডায়াল করল। হাল্কা একটা রিং শুনা গেল। ফোনটা মোনা পিসির পাশেওই ফেলে গেছে। গল্পর মনে পড়ল মোনার ব্যাগটা সে পিসির পাশেই দেখেছে।
পুরো বিল্ডিং তন্ন তন্ন করে ওরা মোনাকে খুঁজে পেলনা।
(চলবে)