'আপনি... মানে তুমি ... মানে তুমি আমার বাইকে কেন মিলা? তোমার তো কামরুলের বাইকে উঠার কথা ! মোনা কোথায়?'
'আমার কি দোষ ভাইয়া, মোনা আপু আছড়ে পড়ল তখন, একবার টেনে তুললাম তো খানিক পরে আবার হুমড়ি খেল, ঠিক তক্ষুনি কালো হয়ে গেল চারপাশটা। কামরুল আমি ভেবে উনাকে টান মেরে নিয়ে গেল, আমি ভেবেছি আপনি। তাই আপনার বাইকটার পিছনটা খালি দেখে আপনাকে কামরুল ভেবেছি।'
'এই মেয়ে এত আছাড় খায় কেন?? আর মরতে দুইজনে একই রঙের জামা পরেছ কেন, তুমি বিয়ের দিন লাল পরে থাকতে !!! আর আমি যে শেরওয়ানিতে সেটা টের পেলেনা !!'
'বারে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম যে খেয়াল করব ! খালি বাইকটা যে টের পেয়েছি সেটাই ঢের।'
'কিন্তু মোনা আর তোমার কামরুল কই ?'
'আমাদের তো বাড়ির দক্ষিণদিক দিয়ে একটা এবড়োখেবড়ো গলি দিয়ে পালানোর কথা। কামরুল সোজা ওর বোনের বাড়ি নিয়ে যেত। আজই বিয়ে পড়ানো হবে। আমাকে জলদি নিয়ে চলুননা ভাইয়া প্লীজ !'
'তাহলে তো মুশকিল। আমি তো সে রাস্তা পেরিয়ে এসেছি। এখন ওদিকে যেতে হলে তোমার ভাইয়ের মুখে পড়তে হবে, রাস্তাতেই আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিবে।'
'ভাইয়ের কাজই খারাপ, খালি ধরেপিটে বিয়ে দিতে চায়। নিজের বিয়েও মেয়েকে ধরে এনে করা !'
'সাবাস! তা মেয়ের বাবা কিডন্যাপিং এর কেস ঠুকেনি ? নাকি নুরুলের হুমকিতে চুপ হয়ে গেছিল।' গল্প বাইকের মুখ ঘুরাল।
'আরে নাহ ! ভাবীর বাবা ভয় পাওয়ার লোক না। উনি পুলিশ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। আপু আপনাকে গল্প শুনায়নি? ভাবীর সৎ-মা উনাকে দুচক্ষে দেখতে পারতনা। উনি ভাবীর চরিত্র নিয়ে সবার সামনেই ভাবীকে এমন কথা শুনালেন যে ভাবী খেপে গিয়ে বলে বসল উনি পালিয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন। ব্যাস খেল খতম।'
গল্প হেসে ফেলল। নুরুল আমিন নিজেও ভাল সৎমা পায়নি, বউও জুটিয়েছে তেমন। ঘড়ি দেখল পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে। চারটা বেজে ১২ মিনিট। মিলা লাফ মেরে বাইক থেকে নামল।
' আরে বলবেন তো যে আপনার কাছে ফোন আছে। আমাকে দিন কামরুলকে কল করি।'
মিলা ফোন কানে নিয়ে অস্থিরভাবে পায়চারী করছে। ওরা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে একটা বড় গাছের নিচে। এতক্ষণে এই রাস্তা ধরে শহরে পৌঁছে যাওয়া যেত, ইস মোনাটা যে কি আকাম্মার ঢেঁকি। মিলাই বা করছে কি? এতক্ষণ লাগে কথা বলতে!
ঝাড়া ৫ মিনিট কথা বলে মিলা এগিয়ে আসল।
' কামরুল আর মোনা আপু ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে ।'
' কি বল?? '
'হ্যাঁ, ওরা ওই গলির মাঝে ঢুকার সময় নুরুল ভাইয়ের এক চেলাকে মেরেছে ধাক্কা। সে ওদের চিনে ফেলে চিৎকার শুরু করায় ওকে আরেক ধাক্কায় অজ্ঞান করে বাইক নিয়ে যেই এগুবে দেখে আরো কিছু লোক আসছে যারা বাবার পোষা লোক। অতএব রুট বদলাতে হয়েছে।'
'কি সাঙ্ঘাতিক !! এখন ওরা কোনদিকে গেছে? আর কোনও রাস্তা আছে কামরুলের বাড়ি যাবার? '
'নাইতো। গল্প ভাইয়া আপনি একটা বড় করে নিঃশ্বাস নিন তো'
'কেন?'
'দু-দুটো খারাপ খবর আছে। এক, আপনার ফোনের ব্যালান্স শেষ। আর দুই, কামরুল আর মোনা আপু রুট চেঞ্জ করে এখন গা ঢাকা দিয়ে আছে আমাদের বাড়িরই পিছনে রান্নাঘরের পাশে।'
----------------------------- ----------------------------------
গল্প যতই মানা করুক আর সময় বেঁধে দিক, সুজনের পক্ষে ব্যাপারটা চেপে রাখা দুঃসহ হয়ে যাচ্ছিল। তার উপরে পুলিশ তাকে হাজারটা প্রশ্ন করেছে। গল্পর হটাত নিখোঁজ হয়ে যাওয়াটা তারা মোটেও ভালভাবে দেখছেনা। সুজন যখন টের পেল গল্পর মোবাইল ট্রেস করা হবে তখন শেষমেষ বলেই ফেলল যে গল্প মোনাকে উদ্ধার করতে গেছে। রাত নয়টার আগে ওকে খোঁজ করতে বারণ করে গেছে।
অতঃপর পুলিশের একগাদা ধাঁতানি, মোনার মায়ের ফোঁপানি আর বাপের রাগ ভরা চাহনি সামলিয়ে সুজন নীলার বাড়ির ঠিকানা বলল। পুলিশ মোনার বাবাকে নিয়ে রওনা হল। তবে তারা ঠিক করল যে দুপুর একটার আগে বড় কোন স্টেপ নিবেনা।
গল্পর বাবা এত হয়রানিতে রেগে গিয়ে ঘোষণা দিলেন ওকে ত্যাজ্য করবেন। সুজনকেও মেলা কথা শুনালেন কেন সে গল্পকে যেতে দিয়েছে ওই বাজে জায়গায়। তার ঝাড়ি খেতে গিয়ে সুজন টের পেল যে সে পুলিশকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে। পাশাপাশি দুটো উপজেলার মধ্যে সে নীলার বাড়ি ভুল করে ফেলেছে। কি মুশকিল !
কি ভেবে সুজন আর মোনার বাবা বা পুলিশকে বিষয়টা জানাল না। গল্প সময় চেয়েছে। পুলিশের জন্য যদি ওদের কোন বিপদ হয় !
গল্পর ফোনটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কাজেই কেউ তাকে আর এগারোটার পর যোগাযোগ করতে পারেনি। আর তার আগে গল্প নিজেই ফোন ধরছিলনা।
ঠিক বিকেল সাড়ে চারটায় যখন ফোনটা অন পেল সুজন, ওর ধড়ে যেন জান ফিরে এল। গল্প কলটা রিসিভও করল।
'সুজন শুন ভাল করে, তোকে একটা কাজ করতে হবে।'
(চলবে)