ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় ১লা বৈশাখে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রা নামে বিশাল আকারের হাতি ঘোড়া, বাঘ ও মুখোশ বানিয়ে একটি র্যালীর আয়োজন করেন চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা। সৌভাগ্যক্রমে আমি তখন সেখানে প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে সেই র্যালীতে অংশগ্রহণ করি। নিছক নববর্ষের আনন্দ উদযাপনের উদ্দেশ্যেই ওই শোভাযাত্রা বা র্যালী হয়েছে।
পরবর্তীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বৃহত্তর পরিসরে এর আয়োজন করা হয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশা, শ্রেণির মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে যোগ দিয়ে পরিবেশকে ক্রমশঃ আরো বর্ণীল ও উৎসবমুখর করে তোলে। কোন ধর্মীয় কৃষ্টির ধারক বাহক হিসেবে নয়। বাঙালি যেমন সংগ্রাম করতে জানে, তেমনি আনন্দ করতে জানে, উৎসব করতে জানে। ওই শোভাযাত্রা তারই বহিঃপ্রকাশ। হিন্দু বা মুসলিম কোন ধর্মের সংস্কৃতি বলে এতে রঙ চাপানো অন্যায়। কেউ কেউ ধর্মীয় ফতোয়ার লেবাস দিয়ে একে বিতর্কিত করে তুলছেন। যে যার ধর্মকর্ম স্বাধীনভাবে করুন। কেউ তো বাধা দিচ্ছে না। বাঙালী তরুণ সমাজ নতুন বছরকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করবে। সার্বজনীনভাবে এই উৎসবটুকু করার স্বাধীনতা তাদের দিন।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় তো কোন উন্মাদনা বা অশ্লীলতা নেই। তবু কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে লেগেছেন? বস্তুতঃ যাদের মাথায় এখনো পাকিস্তানি ভুত চেপে রয়েছে, যারা বাঙালি জাতিকে হিন্দু মুসলিম বিভেদে রাখতে চায়, তারাই বিভিন্ন ফতোয়া ফিকির করে এর বিরুদ্ধে কথা বলে। রাষ্ট্রীয় উৎসব ছাড়া বাঙালির সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক কোন উৎসব থাকলে এখন এই একমাত্র ১লা বৈশাখের অর্থাৎ নববর্ষের উৎসবটিই আছে। যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক উৎসব আর ভ্রাতৃত্বের চেতনায় মেতে উঠে সবাই। এমন একটি সম্মিলনে বিভাজন না টানলেই কি নয়?
(সপ্তাহাধিককাল পেরিয়ে যাবার পরও ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বিতর্কিত কথাবার্তা চলছে। কেউ কেউ ট্রলও বানিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে এই লেখা।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:০৮