somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবীর বহুবিবাহ ও বর্তমান সমাজে প্রচলিত বহুবিবাহ

১০ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা) এর একাধিক বিবাহ নিয়ে অনেকে নেতিবাচক প্রশ্ন তুলে থাকেন এবং একে ঘৃণ্য বহুগামিতা হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। কিন্তু বোঝার দরকার আছে, কুরআনে পুরুষের একাধিক বিবাহ সম্পর্কে কি বলা আছে। কুরআনে বহুবিবাহকে এমন এক সময় বৈধতা দেয়া হয়েছে যে সময়ে মুসলিমরা মক্কার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্রমাগত প্রাণ হারাচ্ছিল এবং যার ফলে নারীরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছিল। জেনে রাখা ভাল, মহানবী (সা) ৬২২ সালে মদিনায় হিজরতের পূর্বে কেবল একবারই বিবাহ করেছিলেন। পরবর্তিতে আল্লাহর নির্দেশে মাত্র ৭০টি পরিবার নিয়ে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায় সে সময় ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বাস করত যারাও মুসলমানদের মতই একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। এবং তাদের ধর্মও মৌলিকভাবে ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ থাকায় মহানবী (সা) আশা করেছিলেন যে তিনি সহজেই ওইসকল ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তর করতে সমর্থ হবেন। কিন্তু সেই সময় ব্যাপারটা এতখানি সহজ হয়নি। প্রথমদিকে অধিকাংশ ইহুদি ও খ্রিস্টানই মহানবী (সা) এর দাওয়াত দেয়া ইসলাম ধর্মকে বর্জন করে। ফলে মক্কার কুরাইশদের সাথে মুসলমানদের প্রথম কয়েকটি যুদ্ধের প্রাক্কালে সবমিলিয়ে খুব স্বল্প সংখ্যক পরিবারই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এবং ওইসকল যুদ্ধে মুসলমানদের ব্যর্থতায় অধিকাংশ মুসলমান পরিবারই পুরুষ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। ঠিক এমন এক সময় নারীদের অসহায়ত্ব ও অভিভাবকহীনতা হতে বাঁচাতেই মহান আল্লাহ কুরআনে পুরুষের বহুবিবাহের বৈধতা দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কেবল তখনই পুরুষদের চারজন পর্যন্ত স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়, যদি তারা সকলের সাথে সমান ব্যবহার করতে পারে এবং কারো প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।

যাইহোক, উপর্যুক্ত কারণ ছাড়াও আরও একটি কারন ছিল বহুবিবাহের। সেটি হল, তখনকার দিনে মদিনার ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের বর্জন করায় বিবাহযোগ্য পুরুষ ও নারী মুসলিমদের বিবাহের সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। পুরুষের তুলনায় মুসলিম সমাজে নারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বহুবিবাহ আবশ্যক হয়ে ওঠে।

মূলত এসকল কারণেই মহানবী মদিনায় থাকাকালীন ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী আবু বকর (রা) এর কন্যা আয়েশা (রা) ও উমর (রা) এর কন্যা হাফসাসহ মক্কা যুদ্ধের ফলে বিধবা হওয়া একাধিক বয়স্কা নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তবে জেনে রাখা ভাল, মক্কা যুদ্ধের ফলে অসহায় হয়ে পড়া যেসকল অসহায় নারীকে মহানবী (সা) সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন, তারা কেউই মহানবীর সন্তান ধারণ করেন নাই। তাই মহানবীর বহুবিবাহকে প্রচলিত অর্থে বহুগামিতা বলা চলে না।

যাইহোক, আজকের দিনে ইসলাম ধর্মের শরিয়তকে পুঁজি করে অনেকে বহুবিবাহ ও বহুগামিতায় লিপ্ত হলেও তা কিন্তু সকলক্ষেত্রে বৈধ নয়। কোন ব্যক্তি যদি তার সকল স্ত্রীর অধিকার আদায়ে সমর্থ না হন, তবে তার বহুবিবাহ কোনমতেই জায়েজ না। আর বিশেষ করে কোন ব্যক্তি যদি স্রেফ ব্যক্তিগত জৈবিক বা অন্য যেকোন স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে বহুবিবাহ বা বহুগামিতায় লিপ্ত হয় এবং তা ন্যুনতম কারণেও ইসলামী শরিয়ত পরিপন্থী হয়, তবে তা অবশ্যই নাজায়েজ।

আমাদের আজকের বাংলাদেশে নারী পুরুষের আনুপাতিক হার ৫০। দেশে যুদ্ধ বা অন্য কোন প্রাকৃতিক কারণে নারীজাতি খুব বিপদেও পড়েনি যা থেকে তাদের রক্ষায় বিপুল পরিসরে বহুবিবাহে লিপ্ত হতে হবে। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের বহুবিবাহের পেছনে যদি যথাযোগ্য কারন থেকে থাকে, তবে কেবল তখনই বহুবিবাহ যুক্তিযুক্ত, অন্যথায় নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×