somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারিগরি শিক্ষা

০৩ রা জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জুবায়ের আহমেদ

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাশা শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মতোই বাংলাদেশ কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড নামে স্বতন্ত্র একটি সংস্থা আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। আমরা যে কর্মমুখী শিক্ষার কথা বলি, এই বোর্ডই সেই কর্মমুখী শিক্ষা দেয়। কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড এর কথা সকলে জানলেও এটির কার্যক্রম ও কি কি বিষয়ে পাঠদান করে, তা অনেকেরই অজানা এবং এটি অন্যান্য বোর্ডগুলোর মতো আলোচিত না হওয়ায় বাংলাদেশ কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড এর অধীনে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থী খুব বেশি পাওয়া যায় না অথচ কারিগড়ি শিক্ষার মাধ্যমেই বিশ্বের বহু দেশ তাদের অবস্থার পরিবর্তন করেছে দারুণ ভাবে।

কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করে কোন শিক্ষার্থীকেই বেকার জীবন যাপন করতে হয় না। কারন কর্মদক্ষ চাকুরী প্রার্থীদের চাহিদা বেশি দেশের শ্রমবাজারে। সরকারী চাকুরী ব্যতীত বেসরকারী খাতে শুধুমাত্র শিক্ষা দিয়ে সহজে চাকুরী পাওয়া সহজ নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যায় যেমন কলেজভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, তেমনি কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ডও দেশব্যাপী নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। কারিগড়ি শিক্ষার সুবিধা ও লাভজনক দিক হলো, একই সাথে শিক্ষা গ্রহণ এবং কর্মজীবনের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ভূমিকা রাখে।

কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষা কার্যক্রমের মধ্যে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স অন্যতম। এই কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা যেকোন স্বীকৃত বোর্ড হতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাশ হতে হবে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার/ফিসারিজ/লাইভস্টক/ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন কমার্স, সার্টিফিকেট ইন মেরিন ট্রেডকোর্স অন্যতম। এসএসসি (ভোকেশনাল) ও এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি), পর্যায় সহ স্বল্পমেয়াদী অসংখ্য কোর্স বিদ্যমান। উক্ত কোর্সগুলোর মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান সকল প্রকার কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ কৃষি, টেইলরিং, পোল্ট্রি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, মৎস্য চাষ, কল কারখানায় কাজ, ডেইরী ফার্ম, কম্পিউটার টেকনোলোজি সহ বিদ্যমান সকল কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা দেয়া হয়। এসএসসি (ভোকেশনাল) শিক্ষাμমের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, কম্পিউটার এপ্লিকেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং, আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগ, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এবং খেলাধুলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, উচ্চতর গণিত, হিসাব বিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, কৃষি শিক্ষা কার্যক্রম আছে অর্থাৎ বাংলাদেশ কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ড এর কাজই হলো প্রয়োজনীয় শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা।

বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরও প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশব্যাপী। এছাড়াও বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউট, রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট এর অধীনে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে কোর্স সম্পন্ন করে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখাকে শিক্ষার মূল গতিপথ হিসেবে দেখানো ও প্রচারের ফলে একজন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়। এর মধ্যে যারা মেডিকেল, এলএলবি, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাংবাদিকতায় পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম শেষে তাদের একটা গতি হয়ে গেলেও যারা সাধারণ বিষয়ে পড়ে, তাদেরকে সরকারী চাকুরীর দিকে তাকিয়ে ছাড়া উপায় থাকে না। সরকারী চাকুরীতে ব্যর্থ হলে বেসরকারী চাকুরী কিংবা শিক্ষকতায় মনযোগী হয়। অন্যথায় বেকার জীবন যাপন করতে হয়। যাদের ব্যবসা করার মতো পূঁজি থাকে, তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায় নিয়োজিত হয়। তবে আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে দারিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি হওয়ায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের অধিকাংশকেই পরিবারের হাল ধরতে হয়, ফলে ভালো কোন চাকুরী না পেলে তাদের জীবন কঠিন হয়ে যায়।

বাংলাদেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নতির জন্য কারিগড়ি শিক্ষা সময়ের দাবী এবং বাংলাদেশে কারিগড়ি শিক্ষার সুব্যবস্থা থাকলেও প্রচার ও প্রসার এবং পরিবারের অভিভাবকদের কারিগড়ি শিক্ষা নিয়ে বিশেষ ভাবনা না থাকায় খুব কম সংখ্যক নাগরিকই কারিগড়ি শিক্ষা গ্রহণ করে। অথচ এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাশ করেই কারিগড়ি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা সহ বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহন করা যায়। যার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ শেষে চাকুরী কিংবা ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়া সহজ হয়। কারিগড়ি শিক্ষা বিষয়ে সরকারের আরো বেশি প্রচার প্রচারনার প্রয়োজন। অপরদিকে সবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রয়োজন নেই, কিন্তু সকলের জন্যই কর্মমুখী শিক্ষা জরুরী, এই বিষয়টি অনুধাবন করে কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে নিয়োজিত হওয়া সময়ের দাবী।



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×