somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগামী ৩১ আগস্ট মহাজাগতিক নির্জনতায় জেগে উঠবে নীল চাঁদ বা ব্লু মুন (২য় পর্ব)

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ণিমা এমন একটি নিয়মিত মহাজাগতিক ঘটনা যার সাথে আমরা ছোটবলা থেকেই পরিচিত। তবে আগামী ৩১ আগস্ট, ২০১২ তারিখে যে পূর্ণিমাটি ঘটবে তা সাধারণ দৃষ্টিতে গতানুগতিক পূর্ণিমা মনে হলেও এর রয়েছে খানিকটা বিশেষত্ব, এদিনের পূর্নিমাটি হবে নীল চাদেঁর পূর্ণিমা বা ব্লু মুন। গড়ে প্রতি ২.৭ বছরে একবার ব্লু মুন সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই এইদিনের পূর্ণিমাটি আমাদের জন্য কিছুটা হলেও অনন্য।
সাধারণত প্রতি মাসে একটিমাত্র পূর্ণিমা হলেও কখনো কখনো একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা হতে পারে। কোন মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিকেই ব্লু মুন বলা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া অন্য যেকোন মাসেই দুইটি পূর্ণিমা ঘটতে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের দৈর্ঘ্য চান্দ্রমাসের (২৯.৫ দিন) চেয়ে কম।
এবিষয়ে ৩১ আগস্ট, ২০১২ তারিখে দেখা যাবে ব্লু মুন বা নীল চাঁদের জোছনা... (পর্ব ১) শিরোনামে ব্লু মুনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে। আজ পূর্ণিমার কিছু বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।

অমাবস্যা-পূর্ণিমার রসায়ন
চাঁদ নিজ অক্ষের উপর আবর্তনের সাথে সাথে পৃথিবীকেও প্রদক্ষিণ করে চলছে। নক্ষত্রের পটভূমিতে পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে চাঁদের সময় লাগে ২৭.৩ দিন। এটি হচ্ছে চাঁদের নাক্ষত্রিক কাল বা সিডেরিয়াল পিরিয়ড। তখন সূর্য প্রতিদিন ১ ডিগ্রী করে পূর্ব দিকে এগুতে থাকে। অর্থাৎ এই সময়ে পৃথিবীও নিজের কক্ষপথে ১ ডিগ্রী করে এগিয়ে যায়। এ কারণে চাঁদ ২৭.৩ দিনে তার পূর্বের নতুন চাঁদের অবস্থায় যেখানে ছিল আকাশের সেই অবস্থানে ফিরে এলেও সূর্য ততদিনে ২৭ ডিগ্রী পূর্বে এগিয়ে গেছে। তাই সূর্যের পটভূমিতে চাঁদকে নিজের কলা পূর্ণ করবার জন্য এই অতিরিক্ত ২৭ ডিগ্রী পরিভ্রমন করতে হয়। এর জন্য চাঁদের সময় লাগে ২৯ দিন ১২ ঘন্টা ৪৪ মিনিট ৩ সেকেন্ড বা সহজভাবে বললে ২৯.৫ দিন, যা সাইনোডিক পিরিয়ড।
নতুন চাঁদের দিন অর্থাৎ অমাবস্যা থেকেই চাঁদের মাস গনণা করা হয়ে থাকে। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের সাথে সাথে চাঁদের কলা পরিবর্তিত হতে থাকে। অমাবস্যার দিন চাঁদ সূর্যের মুখোমুখি অবস্থান করায় পৃথিবী থেকে চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন পিঠটি আমরা দেখতে পাই। এদিনের পর থেকে চাঁদ সূর্যের মুখোমুখি অবস্থান থেকে একটু একটু সরে যেতে থাকে। শুরু হয় শুক্লপক্ষ। সপ্তম দিনে চাঁদ সূর্য থেকে ৯০ ডিগ্রী সরে যায়। তখন আমরা অর্ধেক চাঁদ দেখতে পাই। চৌদ্দ থেকে পনেরোতম দিনে আমরা পূর্ণিমা দেখতে পাই। এসময়ে চাঁদ সূর্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করায় পৃথিবী থেকে চাঁদের আলোকিত পিঠকে দেখা যায়। এদিনের পর থেকে শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষের। পরিবর্তিত হতে শুরু চাঁদের কলা। বাইশতম দিনে চাঁদ তার কক্ষপথের তিন চতুর্থাংশ পরিভ্রমন সম্পন্ন করে। তখন চাঁদের অর্ধেকটা আলোকিত দেখা যায়। ২৯.৫ দিনে পূর্ণ হয় একটি চান্দ্র মাস। আবার নতুন চাঁদের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় নতুন আরেকটি চান্দ্র মাসের।
আমরা জানি সৌর বর্ষপঞ্জিতে বারোটি পূর্ণ চন্দ্র মাস সম্পন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ বারোটি পূর্ণিমা ঘটে। তবে সৌর মাসের তুলনায় চান্দ্রমাসে দৈর্ঘ্যে কম। চান্দ্র মাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। সাধারণ হিসেবে বলা যায়, চান্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় গড়ে এগারো দিন কম হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত দিনগুলোর কারণে গড়ে প্রতি ২.৭ বছরে এমন একটি মাস পাওয়া যায় যখন একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে ৭ বার এমন পূর্ণিমা পাওয়া যায়।

পূর্ণিমার পুরাণাখ্যান
প্রাচীন প্রধান ধর্মগুলোতে পূর্ণিমার উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে খ্রিষ্টীয়ান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে পূর্ণিমাকে আমরা দেখতে পাই বিশেষ নির্দেশক রূপে। বাইবেলের পুরাতন নিয়মের তৃতীয় পুস্তক “লেবীয় পুস্তক” অনুসারে আমরা দেখতে পাই সেখানে সুস্পষ্টভাবে দুইটি প্রধান পবিত্র পর্বের উল্লেখ রয়েছে, যা পূর্ণিমার সাথে মিল রেখে করা হয়েছিল। এর একটি নিস্তারপর্ব (Passover) এবং অন্যটি প্রায়শ্চিত্তকালীন পর্ব (Sukkot)।
বাইবেলের পুরাতন নিয়মের তৃতীয় পুস্তক “লেবীয় পুস্তক” এর ২৩ অধ্যায় ৪-৭ পদে লেখা রয়েছে:
“তোমরা নিরূপিত সময়ে যে সকল পবিত্র সভা ঘোষণা করিবে, সদাপ্রভুর সেই সকল পর্ব এই। প্রথম মাসে, মাসের চতুর্দশ দিবস সন্ধ্যাকালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব হইবে। এবং সেই মাসের পঞ্চদশ দিবসে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাড়ীশূন্য রুটির উৎসব হইবে; তোমরা সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটি ভোজন করিবে। প্রথম দিবসে তোমাদের সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম করিব না।”
“লেবীয় পুস্তক” এর ২৩ অধ্যায় ৩৩-৩৫ পদে আরও লেখা রয়েছে:
“আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল সন্তানগণকে বল, সপ্তম মাসে, সেই মাসের প্রথম দিনে তোমাদের বিশ্রামপর্ব এবং তুরীধ্বনি সহযুক্ত স্মরণার্থক পবিত্র সভা হইবে। তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম করিবে না, কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে।”
সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, বাইবেলে মাসের শুরু হতো অমাবস্যার দিন থেকে এবং দিনের শুরু ধরা হতো সূর্যাস্ত থেকে। কাজেই বাইবেলের মাসের হিসেবে চৌদ্দতম দিনের সন্ধ্যা থেকে পনেরোতম দিন পর্যন্ত হতো পূর্নিমা।

কুসংস্কার ত্যাগ করুন
মানুষের জীবন ও কাজের উপর সাধারণ পূর্নিমা বা ব্লু মুন কোনটিরই প্রভাব নেই, এটি শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটে চলা মহাজাগতিক ঘটনা। তাই মানুষের শরীরের উপর পূর্ণিমার ক্ষতিকার প্রভাব বা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের মত বিশ্বাস নেহায়েৎ কুসংস্কার। তবে দারিদ্রতা-অশিক্ষা-অজ্ঞানতা-সাম্প্রদায়িকতা-রোগ-মানসিক যন্ত্রণা নানা কারণে আমাদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন খুব সহজেই মহাজাগতিক ঘটনাবলীকে ভর করে নিজেদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে নেয় বা তার বশবর্তী হয়ে পড়ে। তাই কোনরকম কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে, ভ্রান্ত ধারনায় পরিচালিত না হয়ে স্নাত হোন এই বিশেষ পূর্ণিমার অপূর্ব জোছনায়। বিজ্ঞানমনস্কতা আর বিজ্ঞানঘনিষ্ঠতায় বেড়ে উঠুক আগামীর প্রজন্ম, সেই প্রত্যাশা রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৩৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×