আগামী ৩১ আগস্ট, ২০১২ তারিখে যে পূর্ণিমাটি ঘটবে তা সাধারণ দৃষ্টিতে গতানুগতিক পূর্ণিমা মনে হলেও এর খানিকটা বিশেষত্ব রয়েছে, এদিনের পূর্নিমাটি হবে নীল চাদেঁর পূর্ণিমা বা ব্লু মুন। গড়ে প্রতি ২.৭ বছরে একবার ব্লু মুন সংঘটিত হয়ে থাকে। পরবর্তী ব্লু মুনের দেখা মিলবে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই।
ব্লু মুন কি
প্রচলিতভাবে আমরা প্রতি মাসে একটিমাত্র পূর্ণিমা দেখতে পাই, কিন্তু কখনো কখনো এমন ঘটে যে একটি মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। কোন মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্লু মুন। এইক্ষেত্রে প্রথম পূর্ণিমাটি মাসের একদম শুরুতে বা শুরুর কাছাকাছি সময়ে হয়ে থাকে। কারণ চান্দ্র মাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। ফলে ফেব্রুয়ারি মাস ছাড়া অন্য যেকোন মাসেই দুইটি পূর্ণিমা ঘটতে পারে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের দৈর্ঘ্য চান্দ্রমাসের চেয়ে কম।
ব্লু মুন কেন ঘটে
আমরা জানি সৌর বর্ষপঞ্জিতে বারোটি পূর্ণ চন্দ্র মাস সম্পন্ন হয়ে থাকে অর্থাৎ বারোটি পূর্ণিমা ঘটে। তবে সৌর মাসের তুলনায় চান্দ্রমাস দৈর্ঘ্যে কম। চান্দ্র মাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। সাধারণ হিসেবে বলা যায়, চান্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় গড়ে এগারো দিন কম হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত দিনগুলোর কারণে গড়ে প্রতি ২.৭ বছরে এমন একটি মাস পাওয়া যায় যখন একই মাসে দুইটি পূর্ণিমা ঘটে। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে ৭ বার এমন পূর্ণিমা পাওয়া যায়।
ব্যতিক্রমের বাইরেও কিছু ব্যতিক্রম
এর বাইরেও কখনো কখনো আরও কিছু অদ্ভূত ঘটনা ঘটে থাকে, যেমন একই বছরে দুইবার ব্লু মুনের দেখা পাওয়া। গড়ে প্রতি ১৯ বছরে মাত্র একবারই এমনটি ঘটে। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে পর পর দুইবার ব্লু মুন দেখা গিয়েছিল। তবে এই ঘটনা শুধু জানুয়ারি এবং মার্চ মাসেই ঘটা সম্ভব। কারণ এই দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাস ফেব্রুয়ারি রয়েছে, এর দৈর্ঘ্য সাধারণত মাত্র ২৮ দিন। তাই প্রতি ১৯ বছরে ফেব্রুয়ারি মাসটি একবার প্রভাবক হিসেব কাজ করে। তবে যদি জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে পর পর এমন ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসে কোন পূর্ণিমা দেখা যাবে না। কারণ জানুয়ারি মাসের একেবার শেষ দিকে পূর্ণিমা ঘটলে চান্দ্রমাসের হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসে কোন পূর্ণিমা না ঘটে মার্চ মাসের শুরুতে পূর্ণিমা ঘটবে।
ব্লু মুন নামকরণ কেন
এই বিশেষ পূর্ণিমাকে ব্লু মুন বা নীল চাঁদ নাম দেয়া হলেও দৃশ্যত এই পূর্ণিমায় চাঁদকে মোটেও নীল রঙের দেখায় না, বরং অন্য পূর্ণিমার মতই পুরোপুরি সাদৃশ্যপূর্ণ। তাহলে নীল চাঁদ নামের কারণ কি? ইংরেজিতে Blue Moon পদটি দ্বারা কোন অসাধারণ ঘটনাকে প্রকাশ করা হয়। এই নামটি প্রায় চারশ’ বছর ধরেই প্রচলিত ছিল। তবে গত পচিশ বছর ধরে বর্ষপঞ্জিতে এই নামটি বিস্তৃতি লাভ করেছে। ধারণা করা হয় প্রাচীন সময়ে মানুষের মনের বিভিন্ন কুসংস্কার বা বিশ্বাস থেকে এই ব্লু মুন নামটি এসে থাকতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কিছু ঘটনা থেকে এই নামকরনের কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।, যা কিছুটা ঐতিহাসিকও বটে।
১৮৮৩ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ক্রাকাতোয়া অগ্নুৎপাতের কারণে পরবর্তী দুই বছর সূর্যাস্তের সময় আকাশকে সবুজ এবং চাঁদকে নীলাভ দেখা গেছে। এছাড়া ১৯২৭ সালে ভারতীয় মৌসুমী বায়ু দেরীতে আসার কারণে গ্রীষ্মকাল অতি দীর্ঘ হয়ে পড়ে, যা বায়ুমন্ডলে ধূলার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, তখন রাতের আকাশে চাঁদকে নীলাভ দেখাত। ১৯৫১ সালে উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চাঁদকেও নীল দেখা গিয়েছিল যখন পশ্চিম কানাডার বনাঞ্চলে দাবানল লেগেছিল এবং এর ধোঁয়া আকাশকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ব্লু মুন প্রকৃতপক্ষে দেখতে মোটেও নীল নয়। এটি সময়ের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হওয়া একটি মহাজাগতিক ঘটনা মাত্র।
বিজ্ঞান সচেতনতায়: কসমিক কালচার

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




