রাইসুর মাথায় লম্বা চুল। মুখে মোচদাড়ি। পরনে শার্ট। আর প্যান্ট। প্যান্টে জিপার নাই। বোতাম আছে। বোতাম লাগানো কি না বলা মুশকিল।
রাসেল লম্বায় রাইসুর চেয়ে এক হাত উঁচুতে, কিন্তু চুলদাড়িতে গন্ধ কম। সে-ও প্যান্ট শার্ট পরে আসছে।
অমি রহমান পিয়াল শার্ট পরসে একটা চকরাবকরা। ঐ শার্টটা নাকি রাইসুর। একদিন বাজি ধরে রাইসু খোয়াইসে। সত্যি কি না বলা মুশকিল। অমিও প্যান্ট পরসে।
মাহবুব মোর্শেদ এই খেলায় দুধভাত। সে শার্ট পরলেই কি আর না পরলেই কি। প্যান্ট পরলেই কি আর না পরলেই কি। তবুও গল্পে যেহেতু সে আছে তাই বলা, সে-ও শার্টপ্যান্ট পরসে।
রাইসু বলে, সবাই আমার দেখাদেখি শার্টপ্যান্ট পরে।
রাসেল প্রতিবাদ করে। বলে আমি ছোটকাল থেকে শার্ট প্যান্ট পরি। এইসব আবঝাব ঝাড়ি যায়যায়দিনে গিয়া লইবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মামদোবাজি?
রাইসু হাসে, ধোঁয়া বের হয়। বলে, শাহবাগের আজিজে বইসা ব্রাত্য রাইসুর সঙ্গে গরম ন্যান? একদম কবিতা মুখস্ত করায় দিমু নামতার মত।
অমি রহমান পিয়াল মজা নেয়, ঠা ঠা করে হাসে।
মাহবুব মোর্শেদ বলে, লন সিঙ্গারা খাই গরমগরম।
রাইসু বলে, হ, তা খাওন যায়। জয় গোস্বামীও সিঙ্গারা খাইতো খুব। কইরে আবুইল্যা, সিঙ্গারা ল তিনটা।
চারদিকে একটা নিস্তব্ধতা নামে। মানুষ চারজন। সিঙ্গারা তিনটা। কে সেই হতভাগা?
অমি রহমান পিয়াল হয়তো পরিবেশটা একটু চাঙ্গা করার জন্য বলে, হ, আমি সিঙ্গারা খাই না। জয় গোস্বামীরে আমার অসহ্য লাগে।
রাসেল বলে, ব্যাপার না। আজকে খাইয়া দ্যাখেন। আমি পয়সা দিমু। আমি একটা খামু, আপনে একটা খাইবেন, রাইসু খাইবো একটা, আর মাহবুব মোর্শেদ একটা। মোট তিনটা।
আবারও একটা নিস্তব্ধতা নামে। কী একটা হিসাব যেন আধুরা রয়ে যায় আকাশে বাতাসে।
রাইসুও পকেট থেকে স্কেচ করার বলপয়েন্ট পেন বের করে নিজের লেখা দ্্বিতীয় বই "আজিজে রাসেলের লগে সিঙ্গারা খাইতাছি"র উপর দাগ কাটে।
আমার স্ক্যানার নাই, তাই স্ক্যান করে সেই হিসাব দেখাতে পারছি না। লিখেই দেখাই।
1
+1
+1
+1
-----
3
ব্যাপারটা এবার সবার কাছে স্পষ্ট হয়। মাহবুব মোর্শেদ স্বস্তির চাপা নিঃশ্বাস ফেলে, যাক সিঙ্গারা ভাগে পাওয়া গেলো। রাইসুও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, যাক, অঙ্ক মিলানো গেছে। কত দিন ধইরা যে অঙ্ক মিলে না। অমি রহমান পিয়ালও, দেখাদেখি, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, যাক, চিপককে জানে না গতকাইলকা আরেক মাইয়ার লগে ডেট খেলাইতেছিলাম। রাসেল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, যাক, রাইসুরে যেমন ব্যর্থ রাইছু সে ভাবছিলো সে আসলেও ঐ কিসিমের।
আবুইল্যা কিন্তু হিসাব দেখে ভুরু কুঁচকায়। সে আজিজে সিঙ্গারা বেচে। কত গাঞ্জুইট্যা কতভাবে তাকে সিল দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় রত, আর তাকে এই পাটীগণিত 101 কোর্সে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা? সে কারিগরকে ইঙ্গিত করে তিনটা সিঙ্গারার আলু দিয়ে চারটা বানাতে। তারপর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
রাইসু বলে, রাসেল আপনি আমারে গালি দ্যান ক্যান।
রাসেল বলে, আপনে ফাউল কবিতা স্ক্যান করেন ক্যান।
অমি বলে, না জানে কোয়ি ক্যায়সি হ্যায় ইয়ে জিন্দেগানি ...।
মাহবুব মোর্শেদ বলে, আবুইল্যা জলদি, খিদা লাগছে।
রাইসু বলে, দোরা কাউয়া পাতি কাকের গোয়া মারে, খেয়াল রাইখেন কিন্তু। আর উকিলের ঘরেও কুকিল ঢুকে।
রাসেল বলে, হ, স্ক্যানার একটা ভাগে পাইছিলেন, এখন কত কিছুই কইবেন।
অমি বলে, ঐ জোকটা শুনছে কেউ ...।
মাহবুব মোর্শেদ বলে, আবুইল্যা চা খাওয়াবি না?
রাইসু বলে, হ চা খাওন যায়। জয় গোস্বামী শুনছি মারাত্মক চা খোর আছিলো। ঐ আবুইল্যা 5 কাপ চা।
আবারও একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে। আবারও আজিজের আকাশে কালো মেঘ। হিসাব আধুরা রয়ে যায়।
অমি বলে, হ আমি ইদানীং এক লগে 2 কাপ চা খাই।
মাহবুব মোর্শেদ বলে, আমি চা খাওয়া ছাইড়া দিসি গায়ের রং নাকি কালা হইয়া যায় ...।
রাসেল বলে, আমি চা খাই না।
রাইসু বলে, তাহলে বাকি 1 কাপ আমিই খামু।
আবারও একটা নিস্তব্ধতা। হিসাব মিলতে চায় না। রাইসু এবার স্কেচ করার পেন্সিল বের করে "আজিজে রাসেলের লগে সিঙ্গারা খাইতাছি"র উপর দাগ কাটে।
আমার স্ক্যানার নাই, তাই স্ক্যান করে সেই হিসাব দেখাতে পারছি না। লিখেই দেখাই।
2
+1
-----
5
আবারও কয়েকটা স্বস্তির শ্বাস পড়ে আকাশে বাতাসে।
রাইসু শুধায়, আমার কবিতা পইড়া কত লোকে পাগল হইলো। কেউ কইলো আমি নবীন কবি, কেউ কইলো আমি কবীন নবি। আমারে কত মাইয়া কত পুরুষ বিয়া করতে চাইলো, পেয়ারা গাছের কত পাতা ঝরলো, আর আপনে মিয়া আমার কবিতা তুইলা ফাউল কথা কন।
রাসেল বলে, ঠা ঠা ঠা, স্ক্যানার একটা ভাগে পাইছিলেন নাইলে তো খবরই আছিলো ...।
অমি বলে, হাম তুম এক কামরে মে বন্দ হো ...।
মাহবুব মোর্শেদ বলে, আবুইল্যা খিদা লাগছে ...।
কিন্তু হঠাৎ কী যেন একটা সমস্যা হয়। রাইসু শান্তিনিকেতনী ঝোলা থেকে স্ক্যানার আর পকেট থেকে স্কেচ পেন্সিল বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাসেলের ওপর! আর রাসেল বের করে এক কপি তাহফীমুল কুরআন বাই মওদুদী!
তারপর শুরু হয়ে যায় ধুন্ধুমার মারামারি!
অমি রহমান পিয়াল আর মাহবুব মোর্শেদ সিঙ্গারা খায় আর দ্যাখে। ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। মাঝে মাঝে নানারকম অসম্মানসূচক উক্তি ভেসে আসে দুজনের কাছ থেকেই।
অনেকক্ষণ পর যখন সেই ধস্তাধস্তি থামে, তখন কিন্তু রাইসু বা রাসেল, স্ক্যানার-পেন্সিল বা মওদুদির বই, কোনটারই নিশানা দেখা যায় না।
শুধু দেখা যায়, আজিজের মেঝেতে দুর্গন্ধযুক্ত কিছু চুল আর আটটা ডট ( ........) পড়ে আছে!
অমি রহমান পিয়াল মাহবুব মোর্শেদকে বিল দিতে বলে মোটরবাইকের দিকে এগিয়ে যায়।
মাহবুব মোর্শেদ বিড়বিড় করে কী যেন বলে, শোনা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



