somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিহ্ন ০০৩

২২ শে মে, ২০০৭ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

...

কায়েসের চোখ আবারও চলে যায় দিলনাজের নিথর শরীরের দিকে। অপচয়। এই মৃত্যু এক বিশাল অপচয়।

তার চটকা ভাঙে শারমিনের চাপা ধমকে, "কায়েস, মনসুর ভাই কী বলছেন তোমাকে? ডক্টর মালিককে একটু ডেকে আনো!"

কায়েস চমকে ওঠে এবার। তার নামের এই অংশটায় সে অভ্যস্ত না। নিজের নামটা মনে মনে হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে সে। কায়েস কামরান। কেমন একটা নাম! কামরান কায়েস হলে কি আরেকটু ভালো শোনাতো? উঁহু। যে-ই লাউ সে-ই কদু। নাকি একটা জবরদস্ত পদবী যোগ করা উচিত ছিলো নামটার লেজে বা মুড়োয়? কায়েস কামরান ফৌজদার! নাহ, ফৌজদার নামটা পছন্দ না তার, কায়েস কামরান তোপদার? কিংবা মনসবদার কায়েস কামরান?

এবার শারমিন একটু ঠেলে দেয় তাকে হাতে ধরে দরজার দিকে। কায়েস লজ্জিত হয়ে ওঠে হঠাৎ। একটা সুন্দরী মেয়ে ন্যাংটা হয়ে মরে আছে ঘরের মধ্যে, তা-ই দেখে আরেকটা সুন্দরী মেয়ে ফিট হয়ে পড়ে আছে, আর সে কি না ব্যাটাছেলে হাঁ করে এসব দেখছে? এ জন্যেই তো তাকে আরেকটা সুন্দরী মেয়ের ধাক্কা খেতে হলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কায়েসের আবার মনে হলো, মনসুর ফৌজদার আসলেই ললাটবান লোক। না হলে কেন কায়েসকে বেরিয়ে যেতে হচ্ছে ঘর ছেড়ে, আর ঐ ব্যাটা দিব্যি দাঁড়িয়ে সব দেখছে?

করিডোরে বেরিয়ে এসেই কায়েস ধাক্কা খায় ডক্টর মালিকের সাথে।

মালিক আবদুল হক পাক্কা ছয় ফুট লম্বা, সেইরকম চওড়া, কায়েস এর আগেও একদিন তার সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্যথা পেয়েছে, কিন্তু কষ্টেসৃষ্টে চেহারায় একটা হাসি ফোটালো সে। "ডক্টর, আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন মনসুর সাহেব ...।"

মালিকের দশাসই চেহারার তুলনায় কণ্ঠস্বর অনেক মিহি, অনেকটা শচীন টেন্ডুলকারের মত। "আই নো!" কায়েসকে একরকম ঠেলেই ঘরের ভিতর ঢুকে গেলো সে। কায়েস বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো, মালিক আঁতকে উঠে চেঁচাচ্ছে, "ইয়া খোদা!"

কায়েস কাঁধ ডলতে ডলতে আবার ঘরে ঢুকলো।

মনসুর ফৌজদার মাঝারি উচ্চতার মানুষ, তার পাশে মালিককে দেখাচ্ছে দুঃখী একটা গরিলার মতো। সে প্রায় ফুঁপিয়ে উঠে বললো, "হোয়াট হ্যাপেন্ড স্যার ...?"

মনসুর ফৌজদার শীতল কণ্ঠে বললেন, "সেটা আপনাকেই আপাতত বার করতে হবে ডক্টর।"

মালিক এগিয়ে গিয়ে সন্তর্পণে ঝুঁকে বিছানায় পড়ে থাকা দিলনাজের গলায় হাত রাখলো। কয়েক সেকেন্ড পর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সে ধরা গলায় বললো, "শী ইজ ডেড স্যার!"

মনসুর ফৌজদারের চেহারায় কোন পরিবর্তন লক্ষ করতে পারলো না কায়েস, শুধু পিঠের পেছনে বেঁধে রাখা হাতটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো।

নিরুপমা ফৌজদার ওদিকে সোজা হয়ে বসেছেন, ডক্টর মালিক এবার তার দিকে এগিয়ে গেলো। "আর ইউ অলরাইট ম্যাম?"

নিরুপমা মুখে একটা হাত চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে শ্বাস নিলেন। "দিলনাজ ... দিলনাজ ...।" একটা হাহাকার বেরিয়ে এলো তাঁর কণ্ঠ থেকে।

মনসুর ফৌজদার মালিকের দিকে ফিরে কঠিন কন্ঠে বললেন, "মালিক, দিলনাজ কিভাবে মারা গেলো?"

মালিক একটা রুমাল বার করে ঘাড় মুছলো। কিছু বললো না।

শারমিন নিচু গলায় বললো, "স্যার, আপনার মনে হয় পুলিশে ফোন করা উচিত।"

নিরুপমা ফৌজদার আবারও ফুঁপিয়ে উঠলো।

মনসুর ফৌজদার কিছু বললেন না, তীব্র চোখে শুধু তাকিয়ে রইলেন ডক্টর মালিকের দিকে।

মালিক গলা খাঁকরে বললো, "আই থিঙ্ক শী হ্যাজ টেকেন সাম পয়জন স্যার।"

ঘরে সবাই হঠাৎ চুপ করে গেলো।

কায়েস এই নীরবতার মধ্যে কোন কিছু খুঁজে না পেয়ে আবার তাকালো দিলনাজ দুররানির মৃতদেহের সাথে। চমৎকার একটা বাদামী শরীর ছাড়া ঘরের আর সবকিছু তার কাছে অচেনা উদ্ভিদের মতো মনে হতে লাগলো। দিলনাজ, দুরন্ত দিলনাজ, আজ বিকেল বেলাও কায়েস তাকে চোরাচোখে দেখে বারবার মুগ্ধ হচ্ছিলো, কী চমৎকার শরীরের বাঁধন, কী অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠস্বর ... এখন সে মরে পড়ে আছে একটা কলাগাছের মতো।

ঘরে সবাই একসাথে সরব হয়ে ওঠে, আর এর মধ্যেই করিডোরে ভেসে আসে একটা পায়ের আওয়াজ। কয়েক সেকেন্ড পরই হন্তদ্ত হয়ে একটা শরীরের ঝলক ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে।

"হেই, কী হচ্ছে ...।" লানার কথাটা যেন হঠাৎ দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয় স্তব্ধ হয়ে যায়। আবার বিশ্রী নীরবতা নেমে আসে ঘরের মধ্যে।

"বাবা? হোয়াট'ম গোয়িং অন?" ঘড়ঘড়ে একটা প্রশ্ন ভেসে আসে লানার কাছ থেকে।

মনসুর ফৌজদার অস্বস্তিভরে এগিয়ে যান মেয়ের দিকে। "লানা, মামণি, শান্ত হও। তোমার দিলনাজ আন্টি মারা গেছেন।"

লানার ছোট্টখাট্টো কিশোরী শরীরটা এবার বিচিত্র একটা যন্ত্রণায় যেন এঁকেবেঁকে ওঠে। মনসুর ফৌজদার মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে যান, কিন্তু লানার চিৎকারে ফৌজদার ভিলার প্রত্যেকটা জানালার কাঁচ যেন ঝনঝন করে ওঠে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে অনেক দূরে ডেকে ওঠে কয়েকটা কুকুর।

কায়েস আবার দেয়ালে হেলান দেয়। নিরুপমা ফৌজদার আবারও এলিয়ে পড়েছেন সোফার ওপর। কায়েসের দৃষ্টি তাঁর মুখ থেকে পিছলে গলা বেয়ে নেমে আসে খানিক উন্মুক্ত বুকের খাঁজের দিকে। কায়েস টের পায়, শারমিন তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে, কিন্তু সে পরোয়া করে না। জাহান্নামে যাক সব কিছু।


(পরে আরেকটা টুকরো দেয়া হবে ...)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০০৭ রাত ১২:০৫
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×