somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাক্কু মিয়ার পূণ্যকাহন

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশিষ্ট সমাজসেবক ও এমপি বাক্কু মিয়ার এবার কুরবানী দেবার খায়েশ হয়েছে। আগে কখনো তিনি এমন খায়েশ করেননি। এমপি ছিলেন না বলেই হয়তো! এখন তিনি এমপি হয়েছেন। এমপিদের কি আর কুরবানী না দিলে চলে? চলে না। এই কুরবানী বিষয়ক আলোচনার জন্য বাক্কু মিয়া আমাকে জরুরী তলব করেছেন। [এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাক্কু মিয়ার পিএ এই অধম।] আমি এখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখেও না দেখার ভান করে তিনি একমনে পান চিবিয়ে যাচ্ছেন। গুনী লোকদের বোধহয় মাঝে-মধ্যে ভান করতে হয়। স্যারকে সময় করে একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে বিষয়টা।
'আমায় ডেকেছেন, স্যার?'
'এই তোমার এক বদ খাসলত। কত বার বলেছি সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকবা! সালাম হল গিয়ে নবীর সুন্নত। বেশি বেশি সুন্নত পালন করবা, নবী খুশি হবেন, আল্লাহ খুশি হবেন। হুজুরে পাক (সা) বলেছেন, "যে ব্যাক্তি আমার সুন্নতকে আকড়ে ধরল, সে যেন আমাকে আকড়ে ধরল।" আর হুজুরকে আকড়ে ধরা মানে নিশ্চিত জান্নাত। একেবারে বিনা হিসাবে। বুঝতে পারছো ফজিলতটা?'
'জ্বী, স্যার।'
'এখন তাড়াতাড়ি দোকানে যাও দেখি। বেনসন আনবা এক প্যাকেট। এবার সালাম দিতে ভুল হয় না যেন। ভুল হলে তোমার চাকরী নট। একেবারে খেল খতম।'
'জ্বী, স্যার।'
'বলো ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ ছাড়া করতে যাওয়া কাজ অন্ধের লাঠি ছাড়া চলাফেরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ।'
'ইনশাআল্লাহ, স্যার।'
স্যার টাকা দিলেন গুনে গুনে। এক পয়সাও বেশি না। মহাকঞ্জুস আর কাকে বলে! যাই হোক, সিগারেটের প্যাকেট হাতে অফিসে ঢুকলাম আবার।
'স্লামালাইকুম, স্যার।'
'এইটা আবার কেমন সালাম? সালাম দিতে হয় স্পষ্ট ভাষায়। আর তুমি কিনা সেই সালামের শব্দ বিকৃত করেছো! আরবী ভাষা বিকৃত করাই একটা ভয়াবহ গুনাহের কাজ। তুমি আরো এককাঠি বেড়ে সালামের শব্দ বিকৃত করেছো! তোমার তো হাবিয়াতেও জায়গা হবে না!'
'এখন উপায় স্যার?'
'উপায় আর কি! যা করেছো, করেছো। ভবিষ্যতে আর যেন না হয়। হলে তোমার চাকরী নট। একেবারে খেল খতম। এখন বলো, আসসালামু আলাইকুম।'
'আসসালামু আলাইকুম, স্যার।'
'ওয়ালাইকুমুস সালাম।'
'আমায় ডেকেছেন, স্যার?'
'ডেকেছি তো বটেই। না ডাকলে শুধু শুধু তুমি আসতে যাবা কোন দুঃখে?'
আমি চুপ মেরে গেলাম। চুপ করে থাকাটাই শ্রেয়। স্যার একবার বলেছিলেন, হাদীসে আছে, যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়। স্যারের বাক্যবান থেকে নাজাত পেতেও এই তরিকাটাই বেশি ফলপ্রসু।
'বীরু!'
'জ্বী, স্যার?'
'আমার একটা খায়েশ হয়েছে।'
সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন তিনি।
'কি খায়েশ, স্যার? আপনি শুধু হুকুম করুন। আমি এক্ষুনি আপনার খায়েশ পুরণের ব্যাবস্থা করছি, স্যার।'
'সে খায়েশ এখন পুরণ করা যাবে না। তার জন্য নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ আছে। সেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে সে খায়েশ পুরণের সুযোগ নাই। আমরা কেবল উপকরণ কিনে রাখতে পারি মাত্র।'
'স্যার, বেয়াদবি মাফ করলে খায়েশটা কি জানতে পারি?'
জানা সত্বেও না জানার ভান করলাম। জানা কথা নতুন করে জানার মাঝে অন্যরকম একটা ব্যাপার আছে। তাছাড়া স্যারের মতো গুনীজনের পিএ হিসেবে ভান করাটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
'আল্লাহর নাম নিয়ে কুরবানী দিতে চাই এবার।'
'খুবই ভাল কথা, স্যার। অতি উত্তম ইচ্ছা।'
'চলো তাহলে!'
'কোথায়, স্যার?'
'হাটে।'
'এখনই?'
'শুভ কাজে দেরী করতে নাই। কুরবানীর গরু যত আগে কেনা যায়, তত বেশি সওয়াব। সওয়াব যখন করছিই, তখন বেশি করে করাই ভাল না?'
'সঠিক বলেছেন, স্যার। শুভ কাজে দেরী করতে নেই।'
'তাহলে যাওয়া যাক।'
'ইয়ে... স্যার, আমরা এত লোক থাকতে আপনি আবার কষ্ট করতে যাবেন কেন? আমরা গিয়ে ভাল দেখে গরু কিনে আনি, আপনি বরং আয়েশ করুন।'
'কুরবানী দেব আমি, আর গরু পছন্দ করবা তোমরা, তা আবার হয় নাকি? কুরবানীর জন্য একটু কষ্ট নাহয় করলাম! এসবই তো সওয়াবের অংশ। সওয়াব যখন করছিই তখন আর কম করব কেন?'
কিছু টাকা মেরে দেবার আশাটা ধুলায় ধুসরিত হল। মনটা একটু খারাপই হয়ে গেল আমার।
'না, মানে...'
'কোন মানে-টানে নাই। আমি যাচ্ছি, ব্যাস।'
অগত্যা গরুর হাটে রওয়ানা হলাম আমরা। গোটা হাট চষে বেড়ানো হল। কোন গরুই পছন্দ হল না স্যারের। বাক্কু স্যারের এক কথা,
'আমার পাঁচ লাখের গরু চাই। সওয়াব যখন করছিই তখন কম করে করব কেন? কোরবানী যখন দিচ্ছিই তখন আর কম টাকায় দেয়া কেন?'
কিন্তু গোটা হাটে একটাও পাঁচ লাখের গরু পাওয়া গেল না। গরু ছাড়াই ফিরতে হল আমাদের।
'পাঁচ লাখের গরুই চাই আমার।' ফেরার পথে গর্জে উঠলেন স্যার।
'চিন্তা করবেন না, স্যার। পাঁচ লাখের গরু পাওয়া যাবে। একটু সময় লাগবে এই আরকি!'
'বলছো।'
'জ্বী, স্যার। আল্লাহ মিলায় দিবেন।'
অনেক চেষ্টা-চরিতের পর ঈদের আগের দিন আল্লাহ পাঁচ লাখের গরু মিলিয়ে দিলেন। গরু পেয়ে বাক্কু স্যার মহানন্দে ঘাস-পাতা খাওয়ালেন। নিজ হাতে গোসল করালেন। বাক্কু স্যারের খুশি দেখে আমরাও খুশিতে ঝলমল করতে লাগলাম।
ঈদের দিন। গরুকে ঘিরে ধরা হয়েছে। ছুরির পোঁচ মারতে যাওয়া হবে, ঠিক এমন সময় বাংলা সিনেমার হিরোদের মতো পাক খেল গরু। গুতোর চোটে আমরা দশ হাত দুরে গিয়ে পড়লাম। পায়ের বাঁধন কিভাবে যেন আলগা হয়ে গিয়েছিল। মুক্তির আনন্দে উসাইন বোল্টের মতো ছুট দিল সে। আমরা ছুটলাম পিছুপিছু। কিন্তু অনেক খুঁজেও তার আর হদিশ পাওয়া গেল না। বাক্কু স্যারকে দেখলাম, মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আমি গিয়ে পাশে বসতে বসতে ফিসফিস করে বললাম,
'স্যার, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়েছেন। গরু না হোক, পাঁচ লাখ টাকা কিন্তু ঠিকই কুরবানী হল। শুকরিয়া।'
এই শুনে তিনি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×