somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা ও অন্যান্য

০১ লা নভেম্বর, ২০০৬ রাত ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বীথি আসাদকে দেখেই সরে যায় বারান্দা থেকে, অবশ্য একেবারে ভেতরে না গিয়ে লাগোয়া দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়, ওখানে থেকেই স্পষ্ট দেখা যায় নীচের রাস্তা, আসাদ সামনের মতি মিয়ার দোকানে কথা বলছে, ওর পিঠ দেখা যাচ্ছে, মতি মিয়ার চায়ের কেতলী থেকে ধোঁয়া উঠছে, তার পেছনের বাসার দেয়াল ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করেছে কামিনী, সাদা ফুল ফুটেছে, সেই গন্ধের মাদকতায় আবিষ্ট, মায়ের কাছে শুনেছে এই ফুলের গন্ধে নাকি সাপ আসে বাসায়, এই খটখটে শহরে সাপ কোথায়, সব সরীসৃপ মানুষেরা লকলকে জিহবা লুকিয়ে শহরের বাজারে দরদাম করে, চলে যাবে ভেবেও কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দেখে দৃশ্যটা। বীথি এখানে এসেছে মাসখানেক হবে, ঢাকায় চলে আসার সিদ্ধান্তটা সঠিক কি ভুল এখনও জানে না, শুধু জানতো তাকে ছেড়ে আসতে হবে পুরোনো পৃথিবী, মিঠুর কাছ থেকে আরও দুরে চলে যেতে পারলে ভালো হতো, কে জানে হয়তো এখানের খোঁজও বের করে ফেলবে, ওর পক্ষে সবই সম্ভব, ঠান্ডা মাথায় মানুষকে জবাই করে ফেলতে পারে ও, সামনে পেলে ওকে কি করবে ভেবে শিউরে উঠলো বীথি।

ঢাকা শহরে অভিভাবকহীন বীথি কোথায় উঠবে জানতো না, শান্তার ছোটো মামা থাকে ঢাকায়, সেই শান্তার সাথে দেখা নেই কলেজের পর থেকে, তবুও সেই সামান্য পরিচয়ের সুতো ধরেই চলে এসেছে এখানে, সামান্য পরিচয়, না পরিচয়ের মতোই, শান্তার বিয়ের আগে এই মামার ছোটো মেয়ের সাথে সই পাতিয়েছিলো ও। হাসি লাগে ভাবলেই সই পাতানোর মফস্বলী ব্যাপারস্যাপারে আগ্রহী ছিলো সুজাতা, ওর গালের এক কোনের কালো তিলটা মনে আছে এখনও তবে সুজাতা নেই, গত বছর বাচ্চা হওয়ার সময় মারা গেছে, তাই হয়তো ছোটো মামা, মানে এই বাসার কর্তা খালেদ সালাউদ্দিন, বীথিকে দেখে আর ওর কথা শুনে ফেলে দিতে পারেন নি। আশ্রয় দিয়েছেন, মামী যদিও এক দম পছন্দ করেন নি বিষয়টা এর পরও বীথি অগ্রাহ্য করেই রয়ে গেছে এখানে, এই ঢাকা শহরে কিছু না হওয়া পর্যন্ত মানসম্মান বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা ভালো, চাকরীর চেষ্টা করছে, টিউশনী, একটা কিছু স্থায়ী হলেই হোস্টেলে গিয়ে উঠবে, ফার্মগেট, তেজকুনী পাড়ার ওদিকে মহিলা হোস্টেলের ছড়াছড়ি, সেখানে উঠে গেলে আর কি সাধ্য মিঠুর ওকে খুঁজে বের করে, এই ঢাকা শহর মানুষ গিলে খায়, যে লুকিয়ে থাকতে চায় এই শহরে কার সাধ্য আছে তাকে খুঁজে বের করতে পারে।
****************
শফিক আজও দেরী করে এসেছে, শিউলির মেজাজ চটে আছে, ভেবেছিলো শাফিক ভাই সময়মতো আসলে একটু পড়েই ছুটি নিয়ে নিবে, বাসার সবাই যাবে রহমান আংকেলের বাসায়, আব্বা রাজী হয় নি, পড়ার বিষয়ে ভীষন কড়া এছাড়া অন্য কোনো আব্দারে না করে না বাবা শুধু এই সময় মতো পড়ার বিষয়টাতে কোনো ছাড় দিতে চান না। যদি শফিক ভাই সময় মতো আসতো তাহলে ওদের সাথেই রওনা দিয়ে দিতে পারতো, বাসায় বীথি আপু আছে, ক্যামোন যেনো, সন্ধ্যা হলেই বারান্দায় গিয়ে বসে থাকে, কিছুই দেখার নেই, এই চামেলীবাগের 43 নাম্বার বাসা থেকে 99 নাম্বার বাসার সামনের গলিতে সারি সারি জানালা ছাড়া অন্য কিছুই দেখার নাই, কোনো আব্রু নাই, এক জানালায় কথা বললে অন্য 4 বাসায় শোনা যায় এমন কাছাকাছি বাসাগুলো, অন্ধাকার ছোটোছোটো ঘর,ওদের বাসার পেছনের জানালাগুলো দিয়ে এখনও আলো আসে, কতদিন আসবে কে জানে, পেছনে কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু করার বিজ্ঞাপন ঝুলছে, এই উপলক্ষে পুরোনো বাসা ভাঙা চলছে, সারা দিন ঘটাস ঘটাস, ধরাস ধরাস চলছেই, সেই জানালাগুলোও খোলার উপায় নেই, ঘরের ভেতরে ধুলা ঢুকে, মায়ের আবার এলার্জি আছে, সাথে হাঁপানির টান, একবার উঠলে আর রেহাই নেই, রহমান আঙ্কেলদের বাসা চেনে শিউলি, সামনেই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পাশে, ইচ্ছা করলেই হেঁটে চলে যেতে পারে, তবে এই রাতে ঐ গলিতে একা ঢোকার সাহস নেই ওর, সবচেয়ে ভালো হতো যদি শফিক ভাইকে সাথে নিয়ে যাওয়া যায়, বলবে না বলবে না করেও বলে ফেললো শিউলি, শফিক ভাই আপনি একটা যা তা মানুষ, আজকে আপনার সময়মতো আসার কি দরকারটা ছিলো সেইটা আপনি জানেন না, আজকেই বেছে বেছে আপনি 1 ঘন্টা দেরী করে আসলেন, আজকে আর পড়বো না, আমাকে নিয়ে একটু এক জায়গায় পৌঁছায় দিতে পারবেন?
শফিক হতভম্ব তাকিয়ে থাকে, এই মেয়ে এক নিঃশ্বাসে এত কথা বলতে পারে? হাসতে হাসতে বললো একটু দম নাও কথার ফাঁকে ফাঁকে নয়তো দম আটকে মরবে। শিউলির ঠোঁটের কোনে হাসি লেগে থাকে খানিকক্ষন, আপনি যা হাসির কথা বলেন না, আপনি এমন হাসির কথা কোথায় পান?
আজকে পড়বো না বলে দিলাম, আমাকে পৌঁছে দিতে হবে রহমান আঙ্কেলের বাসায় এইটাই আপনার দেরীতে আসার শাস্তি। বীথি চা নিয়ে ঢুকলো, শাফিক বেশ কয়েক দিন ধরে খেয়াল করছে এই চুপচাপ মেয়েটাকে। সারাক্ষন আনমনা হয়ে থাকে, হঠাৎ ডাকলে চমকে উঠে, কিছু একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে,
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×