somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি, নিজস্ব একটা দিন আর ছোট্ট পরী

০৬ ই জুন, ২০১০ সকাল ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাঝে মাঝে একেকটা দিন আসে একান্তই নিজের মনে হয়, নিজস্ব একটা দিন। সেই দিনগুলোতে একটু নিজের মত থাকতে, নিজের মত করে ভাবতে ভাল লাগে। যেহেতু আজকের এই দিনটাকে একান্তই নিজের বলে মনে হচ্ছে, তাই এই দিনটাতে আমি আমার নিজের মত করে থাকতে চাইলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবো না। যদিও অঝোর বৃষ্টি সে রাস্তা একরকম বন্ধই করে রেখেছে।

কফির মগ হাতে আমি আমার ছোট্ট বারান্দায় গিয়ে বসলাম এবং দেখতে লাগলাম আমার নিজস্ব বৃষ্টি ভেজা দিনটাকে। রাস্তার ওপাশে কাকভেজা হয়ে জুবুথুবু দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ীগুলোকে দেখলাম। দেখলাম এই ঝুম বৃষ্টিতে রিকশায় এক স্নিগ্ধ তরুনীর চলে যাওয়া। অবশ্য হুড তোলা থাকায় মেয়েটিকে খুব সামান্যই দেখতে পেলাম। তারপরও দৃশ্যটা আমার এক রকম ভালোই লাগল। ভাল লাগল রিকশাওয়ালার নিদারুন বৃষ্টিতে ভেজা। এই ছোট্ট বারান্দায় গ্রিলের ফাঁক গলে আসা সামান্য বৃষ্টির ছাট টুকুই আমার সম্বল, অনেকটা সান্তনার মতো। যদিও বৃষ্টিতে ভেজার আদি গোপন ইচ্ছেগুলো এখন আর আমার মাঝে খুব একটা সতেজ নেই।

কফিতে আয়েশী চুমুক বসিয়ে বর্ষণ মুখর এই মেঘলা সুন্দর দিনে দৃষ্টি মেলে দিয়ে আমি চমৎকার কোন ভাবনা ভাবতে চাইলাম। ‘বারান্দায় বসে ভিজছিস কেনো, ভেতরে গিয়ে বোস।’ মায়ের কথায় আমার ভাবনার মৌমাছি গুলো যেন আগুন পেল। আমি বিরক্তি নিয়ে তাকালাম, ‘এখানেই ভাল লাগছে, তুমি যাও।’ ‘দেখিস, পরে আবার অসুখ বাধাবি’ বলে মা মশলার ঝাঝালো রোশনাই ছড়িয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। এই গন্ধটা আমার খুব চেনা, পরিচিত। আমি বলি মা মা গন্ধ। আমি অন্ধ হলে এই ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে ঠিক মাকে চিনে নিতাম। অবাক লাগল এই মুহুর্তে আমার মায়ের কথা ভাবতেই বেশ ভাল লাগছে।

মায়ের প্রসংগ ধরেই কিনা জানি না আমার গতকালের ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। গতকাল অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছিলাম। অলস দুপুরে বিছানায় গড়িয়ে নেয়ার অভ্যেসটা সেই আগের মত আর নেই। তবুও ঐ শেষ দুপুরে ঝুম্পা লাহিড়ির ‘দ্য নেমসেক’ বইটি নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়া। কখন আমার জানালা দরজা গলে সন্ধ্যার গলিত অন্ধকার নির্নিমেষ ডুকে পড়ে বইয়ের অক্ষর গুলোকে আরও ছোট আর অস্পষ্ট করে তুললো। কিন্তু উঠে গিয়ে আলো জ্বালতে ইচ্ছে করল না। বইটা রেখে পাশ ফিরতেই কখন একটু তন্দ্রা জড়িয়ে এলো। ঐ আধো ঘুম আধো অন্ধকারেই হঠাৎ টের পেলাম বাবা খুব সাবধানে আমার গায়ে চাদর টেনে দিচ্ছে। ফ্যানটাও বুঝি সামান্য বাড়িয়ে দিল। গত দু’দিন ধরে বাবার সাথে কথা বন্ধ। খুব সামান্য কারণেই। ব্যাপারটা ভেবে আমার কেন যেন এই মুহুর্ত হাসি পেল।

আজকের এই বর্ষণ মুখর দিনে আমি ভাবতে চাইলাম আমার বড় ভাই এবং হাজার মাইল দূরে থাকা আদরের ছোট ভাইটির কথা। ইচ্ছে করল ওকে একটা মেসেজ দেই। মাত্র চারটা শব্দের । ‘তোকে দেখতে ইচ্ছে করে।’ না, থাক। এভাবে ওর মন খারাপ করে দেয়ার কোন মানে হয় না। তারচেয়ে বরং অন্য কিছু ভাবি। আমার ছোট্ট পরীটাকে নিয়ে সুন্দর কিছু।

- কি করছো সোনা?
- খেলছি তো আমি।
- কার সাথে খেলছো? বাবার সাথে?
- হু। হি হি ...
- কে ভালো বলতো সোনা? বাবা ভালো, না মা ভালো? আমার ছোট্ট পরীটা আদুরে একটু হাসি হেসে বললো,বাবা ভালো।

ছোট্ট পরীটাকে এ ধরণের প্রশ্ন করার সময় আমি একটু কৌশলে করি। আমি জানি ওকে প্রথমে যে নামটা বলা হবে ও ঠিক ঠিক সে নামটাই বলবে। যেমন আমি যদি ওকে প্রশ্ন করতাম, মা ভালো, না বাবা ভালো? ও বলবে, মা ভালো।
আমি আমার ছোট্ট পরীর বুকে নাক ঘষে বললাম, তোমাকে কে বেশী আদর করে ? বাবা না মা?
ছোট্ট পরী আঙুল দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বলল, বাবা।
- কে পচাঁ বলতো মা? মা পচাঁ, না বাবা পচাঁ?
- মা পচাঁ। হি হি ... (আবার সেই আদুরে হাসি)
‘এই এসব ওকে কি শেখানো হচ্ছে!’ আমার পেছন থেকে যেন স্টীমারের ভেপুঁ বাজল। আমি গোবেচারা ভাব করে বললাম, কই কিছু শেখাচ্ছি নাতো! আমি জাষ্ট ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কে ভালো? ও বলল, বাবা ভালো। বললাম, কে পচাঁ? বলল, মা পচাঁ।
- তোমার চালাকি আমি বুঝি না, না? আসো মামনি, তুমি এই মাত্র খেয়েছো, ঘুমোবে চলো।
আমি আমার ছোট্ট পরীর দিকে তাকিয়ে ফের জিজ্ঞেস করলাম, মা তুমি এখন কার সাথে ঘুমাবে? বাবার সাথে, না মার সাথে?
পরীটা আমার বুকে মাথা রেখে বলে, বাবার সাথে। এবং এক সময় ছোট্ট পরীটা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়ল। বাইরে হু হু ঠান্ডা বাতাস, একটানা বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ। আমি সব উপেক্ষা করে ওর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। চেয়েই থাকলাম।






উৎসর্গ পত্র: বন্ধু (কাজিন ও ব্লগার) নিপু, জান্নাত ও তাদের ছোট্ট পরী। আমি জানি না নিপু তার ছোট্ট পরীর সাথে কি ভাবে কথা বলে। আমি আমার মত ভেবে নিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১০ সকাল ১০:০৭
১০০টি মন্তব্য ১০০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×