দেশপ্রেম আমার কম। তাই পড়ালেখার জনয বিদেশে চলে আসলাম। দেশের চেয়ে এখন চায়নাতেই ভালো লাগে আমার। বিদেশে বসে ভর্তা-ভাজি-চর্চরি এইসবের জন্য অনেকে কাঁদেন। আমি এসবের মধ্যে নাই। আলু, বেগুন আর টমেটো এই তিন ছাড়া কোনো সবজি আমি খেতামনা তেমন , ছোটোবেলা থেকেই। এগুলো এখানে পাওয়া যায়। দেশী খাবার দেশী খাবার বলে অনেকে হাহাকার করেন। আমি হাসি, কারণ একমাত্র আমি চিকেন আর মাছ খেতাম। এই দুটোও এইখানে পাওয়া যায়। অতএব এইখানে আমার কোনকিছুর জন্য হাপিত্যেশ লাগেনা। বরং ভালো লাগে। এখানে মানুষের হিংসা কম। অহংকার কম। দুখ কম। মিথ্যা কম। তাই, শত্রু নেই বললেই চলে। চায়নার লাইফ খুব উপভোগ করি আমি।
সবকিছুর পরেও একটা কিন্তু থেকে যায়। একটা দেশের বাসে আগুন লাগার দৃশ্য ভাবি বার বার।নিজের এলাকার ছেলেটা পুড়ে মারা যায় । ওই একটা দেশের দুখ্খী বন্ধুকে নিয়ে ভাবি-যাকে অনেকটা পথ হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয় -কিছু টাকা বাঁচানোর আশায়। প্রিয়তমা স্ত্রী'র চিকিত্সার্থে। বিজয় দিবসের আগের দিনও পুলিশের গুলিতে প্রান দিতে হয় মানুষকে ।ভাবি-নিরীহ খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোকে নিয়ে । কত কষ্ট ওদের! পোশাক কেনার সময় দেশে থাকতে কোনদিন হিসেব করতামনা। সেই আমি, এখানে প্রায়ই আবার ভাবি। মনে হয় ১০০০ আর এম বি যদি ১৩ হাজার টাকা হয়, তবে কতগুলো বাচ্চার এক বেলা খাবারের যোগান দিতে পারতাম,,কতগুলো বচ্চাকে এই শীতে জামা কিনে দিতে পারতাম? ভেসে ওঠ সেই লিলি আন্টির মুখ ! ঢাকা পিজি হাসপাতালে দুলোর্ভ রক্ত বি নেগেটিভ দেওয়ার জনয ফোন আসত মাঝে মাঝে।লিলি আন্টির এখন কি অবস্থা জানি না । । তারা কি রক্তের প্রযোজনে আমার মোবাইলে ফোন করে তা বন্ধ পেয়েছিল? লিলি আন্টি এবং তার আত্বিয়দের কি খুব মন খারাপ হয়েছিল-আমাকে না পেয়ে? তারা কি পেরেছিল অনয কারো থেকে রক্ত মানেজ করতে?
দুখী মানুষের মুখের দিকে তাকিয়েই হয়ত কবি বলেছেন 'তুই কি আমার দুখ হবি?' হয়ত, দেশের মাটি মুঠোতে নিয়েই আরেক কবি বলেছেন, 'তোমাকে যত ভুলতে চাই, তত বেশি মনে পড়ে যায়!'
তোমার নাম বাংলাদেশ।
তোমার বুকে থাকিনা, তবু চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, তোমাকে ভেবেই। ভালো থেকো, প্রিয় জন্মভূমি।
শুভেচ্ছা সবাইকে মহান বিজয় দিবসের ...।