somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর কু-যুক্তি ও আমার কিছু প্রশ্ন

২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদী অনেক পুরনো বক্তা। আর তাঁর বয়ান/ওয়াজ শুনেন নাই, এমন লোক এই বাংলা তো দূরে থাকুক, বহির্বিশ্বেও ওনার নিয়মিত যাতায়াত। যাই হোক, আমি এখন তাঁর যুক্তি(!)র উপরে কিছু কথা বলবো।

তাঁর বয়ানটা হচ্ছে নবী মোহাম্মদের ভুমিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কিত। তিনি যেটা বললেন, যখন মোহাম্মদ ভুমিষ্ট হন, তখন নাকি তার মা আমেনার কোনো কষ্ট হয়নি। এটা হতে পারে, আমেনা তখন (ভুমিষ্ঠের আগ মুহূর্তে) তন্দ্রার মত গিয়েছেন, তখন তিনি দেখতে পান দুইজন সুন্দরী রমণী। বিস্ময়ে আমেনা সেই দুই সুন্দরীকে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তাঁরা উত্তর দেন, প্রথম জন আদি মানবী বিবি হাওয়া, তিনি নাকি অসম্ভব রূপবতী ছিলেন! অপর জন হচ্ছেন বিবি আছিয়া। আছিয়া সম্পর্কে তিনি বেশ খানিকটা সময়ে বয়ান করলেন, প্রথমে বললেন কে এই আছিয়া। নিজেকে খোদা ভাবা/দাবি করা ফেরাউনের স্ত্রী হচ্ছেন এই আছিয়া।

ইসলামী বই পত্র ঘাঁটলে দেখা যায় যে, নবী মুসার সময়ে সময়ে মিশরের রাজা ছিলেন এই ফেরাউন। আবার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তিনি একজন যথেষ্ঠ ন্যায়পরায়ণ রাজা ছিলেন যার নাম দ্বিতীয় রেমেসিস। তখনকার যাঁরা শাসক ছিলেন, তাদেরকে বলা হতো ফেরাউন। এর পরে তিনি যা বললেন, আগে সেটা বলে নিই:

আছিয়া একদিন মাথার চুল আঁচড়াতে থাকেন, হঠাৎ তার হাত থেকে চিরুনি পড়ে যায় এবং তখন আছিয়া এই চিরুনী ওঠানোর জন্য নিচু হয়ে বলেন বিসমিল্লাহ । পেছনে দাড়িয়ে থাকা ফেরাউন কথাটা শুনে ফেলে এবং সাথে সাথে আছিয়াকে জিজ্ঞেস করে, এটা সে কী বলছে! আছিয়া সত্যবাদীর মত স্বীকার করেন, তিনি আল্লার দাসত্বকে মেনে নিয়েছেন। যার কারণে আছিয়ার স্থান হয় অন্ধকার কারাগারে। তিনদিন ফেরাউন আছিয়াকে কোনোরকম আহার থেকে বিরত রাখায় সে অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবুও আছিয়া ফেরাউনকে খোদা মানতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ফুটন্ত তেলের পাত্রে ফেলে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন আছিয়াকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল, তখন আছিয়ার মুখে ছিল মুচকি হাসি। যার মানে আছিয়া যারপরনাই খুশি। কিন্তু কেন খুশি? মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর বয়ান থেকেই শোনা যায়, তখন আছিয়া আল্লার কাছে একখানা বেহেশত দাবি করেন এবং সাথে সাথে আল্লা নাকি তা কবুল করে নেন এবং ফেরেশতার মাধ্যমে সেই জান্নাতের একখানা ঘর নাকি আছিয়ার সামনে এনে উপস্থিত করেন।

এখানে আমার প্রশ্ন: আছিয়া জান্নাতের রুমে কী এমন কমেডি দেখলেন যে, তাঁর সামনে মৃত্যু থাকা সত্ত্বেও তিনি হেসেছিলেন? আমরা জানি, অতিরিক্ত চাপের কারণে অনেক সময় মানুষের মস্তিষ্ক ভুলভাল রিপোর্ট দেয়, যাকে আমরা ভ্রম বলে জানি। আছিয়া যেহেতু ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, সেহেতু জান্নাত/জাহান্নাম সম্বন্ধেও তাঁর ধারনা ছিল। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও যিনি আল্লাকে অস্বীকার করলেন না, সেখানে তাঁর এরকম হওয়া মানে তো এক ধরনের ভ্রম। ব্যাপারটা কি এমন নয়?

অভিজিৎ রায়ের 'অবিশ্বাসের দর্শন'-এ গড হেলমেটের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। সেখানে আমরা দেখেছি, কোনো মানুষকে যদি ঐ হেলমেট পরানো হয়, তাহলে সবার ক্ষেত্রে এরকম কিছু ব্যাপার ঘটে, যেমন, কোনো ইহুদি, খ্রিষ্টানকে ওটা পরানো হলে সে তার গড/যিশু ও সে তার ধর্ম সম্বন্ধে যতটুকু জানে, তা-ই ধরা পড়ে। আবার কোনো মুসলিমকে যদি পরানো হয়ে থাকে, তার বেলায় দেখা যায় তার ধর্মের জান্নাত/জাহান্নাম। অথবা নবী-পয়গম্বরদের তিনি দেখছে। কোনো অবিশ্বাসীকে যদি ঐ একই হেলমেট পরানো হয়, তবে ব্যাপারটা পুরোই উল্টে যায়। সেখানে দেখা যায়, সে নাস্তিক ব্যাটার শুধুমাত্র মাথা ঝিমঝিম করা ব্যতীত তেমন কিছু সে উপলব্ধি করে না। তাহলে বলা যায় যে, আছিয়া যা দেখে হাসছিলেন সেটা তার ভ্রম। এবার আসা যাক মৃত্যুর পরের বিষয়গুলিতে, মোটামুটি সব মুসলমানরাই জানে যে, কোনো স্ত্রী যদি পাপ করে থাকে, তবে সে পাপে তার স্বীয় স্বামীকেও শাস্তি ভোগ করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, যদি আছিয়া জান্নাতে থেকে যান তবে, তো এই ফেরাউনকেও জান্নাতে পাঠাতে হবে। কেননা আছিয়া তাহলে বিশেষ সময় কাটাবেন কার সাথে? তাছাড়া আছিয়া যে বেঁকে বসবেন না বা এমনও তো হতে পারে, আছিয়া তাঁর স্রষ্টার কাছে অনুরোধ করে বসলেন ফেরাউনকে তাঁর সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। তখন আল্লা কী করবেন? ফেরাউনকে কি তিনি জান্নাতে নিয়া আছিয়ার সাথেই রাখবেন নাকি আছিয়াকে ফেরাউনের দোষে জাহান্নামে ফেলে দেবেন?

সর্বশেষে একটা কৌতুক।
ছেলে: আচ্ছা, বাবা, যুক্তি কী?
বাবা: আমরা জানি না, বাবা, কারণ আমরা মুসলিম।
মাওলানা হাবিবুর রহমান যুক্তিবাদীর ওয়াজের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×