রাস্তাদিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাত এক বড়ভাই ডাক দিয়া কইলো
এদিকে আসো ,
গেলাম। যাইয়া দেখি সেখানে সামিয়ানা টাঙ্গাইয়া এক্ষান সিংহাসনের মত চেয়ারে এক জন অল্পবয়স্ক হুজুর বসা এবং শতখানেক র মত মানুষও বসা।
কিছুক্ষন থাকার পরে, আলাপচারিতায় জানতে পারলাম একজন লোক মারা গেছেন (কোন এক ভাবে ) তার জন্য মিলাদ ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
হুজুর বয়ান করতেছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, আমিও মনযোগ সহকারে শুনতেছিলাম। (ওখানের সব চাইতে বেশি মনযোগি ব্যক্তি বোধহয় আমি)
সেই যাইহোক।
কোন মানুষের মৃত্যুতে মাহফিল কোথাও হয় কিনা আমার জানা নেই কিন্তু এখানে একটা ব্যানার দেখলাম যেখানে মৃত ব্যক্তির নামের শেষে (রঃ)রহমাতুল্লাহি আলাইহি যোগ করা হয়েছে।
এটা সাধারণত সাহাবি বা এই ক্যাটাগরির মানুষের সাথে যোগ করা হয়। আমার জানা মতে এই ব্যক্তি কোনদিনই মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ছেন কিনা জানা নাই। এমনও দেখেছি , মসজিদে জামাত হচ্ছে , উনি রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এখানের ইসলামি নিয়ম গুলো একটু আলাদা।নবি মহাম্মদের নাম এরা সাধারণত মুখে নেয় না।তার নাম না নিয়ে তার উপাধি যেমন ; হাবিবিল্লা, কলিমুল্লাহ ইত্যাদি বলেন।
এর কারন হিসেবে উনি বক্তা হুজুর বললেনঃ নবির নাম নেওয়া বেয়াদপি।মিলাদের স্টাইল টাও আলাদা , সাধারণত মুসলিমরা পড়েনঃ "ইয়া নবি সালামুয়ালাইকা। ইয়া হাবিব সালামুয়ালাইকা" এভাবে ।এখানে পড়া হলো আস্লামুয়ালাইকুম ইয়া হাবিবিল্লা, আসসালামুয়ালাইকুম ইয়া রাসুলিল্লাহ। এর ব্যখ্যা হিসেবে হুজুর বললেন হাদিসে নাকি আছে, প্রত্যেকটা কাজের আগে সালাম নেওয়া জরুরী এবং সেই হিসেবে এভাবে করা ।
আর হাদিসের কোথাও এই মিলাদ শরিফ নিয়ে তেমন কোন নিয়মের কথা যেহেতু বলা নেই, তাই তারা নবিকে ভালবেসে আদবের সাথে এভাবে পাঠ করেন।
তো মাহফিল চলা কালিন সময়ে একজন (সম্ভবত মসজিদের লোক) এসে বললেন এনাদের মাইক টা বন্ধ করতে, জামাত চলছে মসজিদে ।
আমি মোটামুটি শিওর হইলাম এইবার মাইক বন্ধ করেদিবে এরা! কিন্তু না, ঐ লোকটা যাওয়ার সাথে সাথেই আবার মাইক চালু করে দিলেন এরা।
এভাবে চলার শেষ পর্যায়ে এসে মোনাজাত করা হলো, এবং দোয়া চাওয়া হলো।এবার তারা নামাজের দিকে মননিবেশিত হলেন। ওই হুজুর বললেন আমাদের এখানে জামাত হবে। সবাই সালাত আদায় করে যাবেন।
তো একদিকে সবাই নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেল (শুধু ওনাদের সবাই )।
বাকিরা যার যার মত বেরিয়ে যাচ্ছে তবারক নিয়ে। তবারকের সাথে সবাই এই দুটা জিনিস পাই; একটা লিফলেট ও অন্যটি মাসিক পত্রিকার মত একটা বই এবং সাথে বিরিয়ানির প্যাকেট।
মনে মনে চিন্তা করতেসিলাম আমি না হয় নাস্তেক কিন্তু এরা তো সবাই মোসলমান ! কিন্তু নামাজ না পড়ে সবাই বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে কেন যাচ্ছে ? মসজিদের জামাতের নামাজ তো সময় সেই কখন পেরিয়ে গেছে !
যদি সবাই কাজা পড়ে তার চেয়ে তো এখানে জামাতে নামাজ পড়লে বেশি ছোয়াব এবং এটাই কাজার চেয়ে উত্তম।
বুঝাগেল এরা আসলে আমার মতই বিরিয়ানির প্যাকেটের ধান্দায় আসা মুসল্লি।
এইসব আচার দেখার পরে ওনাদের একজনকে জিজ্ঞেস করি ও লিফলেট টা পড়ে জানতে পারি এরা দেওয়ানবাগি।
তো কথা হইতেছে যারা এখানে মিলাদে আসলেন তারাই বলে বেড়ান এরা "সহি মুসলমান" না, কিন্তু খাওয়ার বেলায় ঠিকই খাইয়া গেলেন তাদেরটাই যাদেরকে আপনেরা মুছলিমই ভাবেন না!
কিন্তু এদের মোহাম্মদকে সম্মানের দিকটা দেখে মনে হইলো যারা বলেন এরা সহি মুসলমান না, আসলে তারাই মুসলিম নন।
এদের নবি ভক্তি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আর একটা কথা, আপনাদের দাবি অনুযায়ী যারা সহি মুসলমান না।
তাদের টা আপ্নেরা খাইলেন আমিও খাইলাম ।
আমি নামাজ না পইড়াই আইলাম , আপ্নেরাও একই কাজ করলেন।
আমার আর আপনাগো মধ্যে পার্থক্য রইলো কি ?
(ছবিঃ লিফলেট , মাসিক ও বিরিয়ানি )
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৯