somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিচারঃ যুদ্ধ অপরাধী গোলাম আযম,রাজাকার আব্দুল আলীম ও একজন মির্জা ফকরুল ইসলাম

৩০ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকারী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শহীদ জিয়াকে খাটো করতে বিদেশ থেকে সাংবাদিক নিয়ে আসা হয়েছে। বিদেশ থেকে আনা সাংবাদিকের সাক্ষ্য জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, যখন জিয়াকে খুনী বলা হয় তখন আমরা তা মেনে নিতে পারি না। এটা ষড়যন্ত্র।
সূত্রঃ
Click This Link
গত (২২ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি বলে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রায় দেয়। এই রায়ের পক্ষে বিপক্ষে অনেক লেখা লেখি হয়েছে বেশির ভাগই লিখেছে তারা অধীর আগ্রহ নিয়ে এদিনটির জন্য অপেক্ষা করছিল। দু'একজন লিখেছে বিচার তো হলো তাতে আওয়ামী লীগের কী লাভ হলো? সত্যি বলতে কী দেশের বিভাজনটা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে যে এক শ্রেণীর মানুষ সব কিছুতেই আওয়ামী লীগ- বিএনপি'র লাভ-ক্ষতি হিসাব করতে অভ্যস্ত। মির্জ ফকরুল বলেই ফেললেন এসব বিচার বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার ভাবমূর্তি ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। আদালতের রায়ের মাঝেও তারা আওয়ামীলীগের ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান।

একথা আজ প্রমাণিত যে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি ছিল সম্পূর্ণভাবে একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বীরোত্তমকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকরা হয়। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ-কর্নেল তাহের হত্যা মামলায় অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সুদূর যুক্তরাষ্ট্র হতে আদালতের অনুরোধে বাংলাদেশে এসে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন।

তার মতে গোপন বিচারের মাধ্যমে কর্নেল তাহেরের ফাঁসি দেয়াটা ছিল সভ্য সমাজের রীতিনীতি এবং মানবতার চরম লংঘন।
কর্নেল তাহেরের পুরো পরিবারটাই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। যুদ্ধে তিনি একটি পা হারিয়েছিলেন। যুদ্ধশেষে তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরেও গিয়েছিলেন। কুমিল্লায় পোস্টিং পেয়ে নতুন দেশের নতুন সেনাবাহিনীকে নতুন করে গড়ে তোলার তিনি একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন যার মূল দর্শন ছিল একটি উৎপাদনশীল সেনাবাহিনী।

১৯৭৫ সনের তিন থেকে সাতই নভেম্বর বাংলাদেশে কার্যকর কোন সরকার ছিল না। ছিল না সামরিক বাহিনীতে কোন চেইন অফ কমান্ড। খালেদ মোশারফ চেষ্টা করেছিলেন তার অনুগত সৈন্যদের নিয়ে তা ফিরিয়ে আনতে। সেটিও সুপরিকল্পিত ছিল না যা শুধু ব্যর্থই হয়নি সে সময় খালেদ মোশারফসহ অন্যদের প্রাণও দিতে হয়েছে। তখন সৈনিকদের হাতে বন্দী হয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। তাকে বন্দীদশা হতে উদ্ধার করতে তিনি ফোন করেছিলেন তার বন্ধু কর্নেল তাহেরকে। তাহের তখন একজন সিভিলিয়ন। যেহেতু সেনাবাহিনীর মধ্যে তাহেরের অনুগত এবং সমর্থক অনেক সৈনিক ছিল সেহেতু তার পক্ষে জিয়াকে সাতই নভেম্বর উদ্ধার করা সহজ ছিল। সৈনিকদের মাঝে কর্ণেল তাহেরের এই জনপ্রিয়তাই কাল হয় তার জন্য।

জিয়া ছিল তার সতীর্থদের মাঝে সবচেয়ে চালাক, ধুরন্ধর হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন সময় মতো যদি কর্নেল তাহেরের লাগাম টেনে ধরা না যায় তাহলে খুব দ্রুত তাহের সেনাবাহিনীর মাঝে একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে পারেন যা তার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। শুরুতে যদিও জিয়া তাহেরকে তার জীবন রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছিলেন ঠিক তার ক'দিন পরই ২৪ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আরো অনেকের সাথে জিয়ার হকুমে তাহেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং ট্রাইব্যুনালে তাহেরের বিচার শুরু করেন। ট্রাইব্যুনালে তাহের এবং তার সঙ্গীদের পুরো বিচারই ছিল একটি প্রহসন। কারণ রায় যাই হোক তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলা যাবে না, বিচারকার্য চলবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ থাকবে না, তাদের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের সাথে শুধু তাদের আদালতে আনার পর কথা বলতে পারবেন। ২১ জুন শুরু হওয়া 'বিচার কার্য' ১২ জুলাই মোট ১৫ কার্য দিবসে শেষ হয় বিচার কাজ। ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনালের প্রধান কর্নেল ইউসুফ হায়দার রায় ঘোষণা করেন । রায়ে অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হলেও সকলকে অবাক করে দিয়ে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এমকি সরকারি প্রসিকিউটারও কখনো তাহেরের ফাঁসি দাবি করেন নি। নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসির আদেশ এবং তা কার্যকরের মাঝখানে একুশ দিন সময় দেয়া হয়। কিন্তু কর্নেল তাহেরের ক্ষেত্রে নয় দিনের মাথায় ২১ জুলাই ভোরে ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে একজন পঙ্গু ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ারও কোন বিধান নেই। তবে এগুলি তো সব যুক্তি ও আইনের কথা। জিয়া আইন- কানুনের খুব বেশি তোয়াক্কা করতেন না। তিনি সামরিক উর্দি পরে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন করেছেন। সেনাবাহিনী হতে অবসর নেয়ার পর পিছনের তারিখ দিয়ে পদোন্নতি নিয়ে লে. জেনারেল হয়েছেন তার কাছে আইনের মর্যাদা পাওয়া যাবে তা আশা করা বাতুলতা।

আজ যখন হাইকোর্ট জিয়াকে কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে মন্তব্য করেন তখন বিএনপি নেতৃবৃন্দের গাত্রদাহ হয়। তাদের কাছে একাত্তরের যুদ্ধে গোলাম আজম গংদের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার,

বিএনপির নেতা ও তৎকালীন রাজাকার মন্ত্রী আব্দুল আলীমের গ্রেফতার এবং বিচারে প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হলে হয়তো এইসকল বিতর্কিত মহামানবদের(!) সম্মানে আঘাত লাগবে। তারা বলে বসবেন মানি লোকদের খাটো করার জন্য এটা সরকারের একটা যড়যন্ত্র।

বিএনপি'র রাজনীতির সাথে জড়িত হলে মেধা এবং যুক্তি সম্ভবত অন্য জায়গায় বন্ধক রাখতে হয় । অন্তত বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই মনে হয়। কর্নেল তাহের যে একজন মৃতু্যঞ্জয়ী বীর ছিলেন তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা। হয়ত সাময়িকভাবে তিনি বিশ্বাসঘাতকতার কাছে পরাভূত হয়েছিলেন । কিন্তু শেষ বিচারে সত্যের জয় অবশম্ভাবী।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×