দুটি চোঁখের আলোই হারিয়েছেন রুমানা মঞ্জুর। গত ৫ জুন নিজ পিত্রালয়ে স্বামী হাসান সাঈদের পৌশাচিক নির্যাতনের শিকার রুমানা মঞ্জুর গতকাল ভারতের দুটি স্বনামধন্য চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসেছেন। চিকিৎসকরা দীর্ঘ পরীক্ষা শেষে তার চোঁখের আলো ফিরিয়ে দেবার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। (তার চোঁখের আলো যেন ফিরে আসে সে প্রার্থনা আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে) ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে নেমেই কান্নায় জড়িত কণ্ঠে রুমানা বললেন, ”আমার সঙ্গে আমার মেয়ের জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেল”
সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত ভার্সিটি শিক্ষিকা রুমানা মনজুরের চিকিৎসা বিষয়ে মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি ও খবর প্রকাশিত হলেও, তার মেয়েশিশুটির চিকিৎসা বিষয়ে কারও নজর পড়েনি, যা শিশুটির ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। শিশুটি পিতা কর্তৃক তার মায়ের ওপর সংঘটিত লোমহর্ষক ভয়ংকর রক্তাক্ত নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেছে। বীভৎস আক্রমণে মায়ের আর্তচিৎকার ও আর্তনাদ প্রত্যক্ষ করেছে। এ দৃশ্য শিশুটির মনোস্তরে সৃষ্ট আতংকের প্রতিক্রিয়া ঘটতে থাকবে, যা ভবিষ্যতে মনোদৈহিকভাবে তার বিরাট ক্ষতি হবে। পাঁচ বছরের নিস্পাপ এই শিশুটির জীবনটাকে নষ্ট করার জন্য দায়ী কে? কে তাকে বঞ্চিত করলো তার মাতা পিতার স্নেহ লাভের অধিকার থেকে? তার জন্য তার মাতার যেমন স্নেহ ভালোবাসা আছে তেমনি তার পিতারও রয়েছে নির্ভেজাল ও অকৃত্তিম ভালোবাসা। সন্তানের প্রতি মায়ের যেমন উৎকণ্ঠা রয়েছে তেমনি রয়েছে তার পিতারও। শুধু মাত্র নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি ও ইগো সমস্যার করণে আজ এই নিস্পাপ মেয়েটিকে তার অনাগত ভবিষৎ জীবনে বয়ে বেড়াতে হবে অনেক না পাওয়া বেদনা টাকার বিনিময়ে যার যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। রুমানা তার দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন তাই আর হয়তো দেখতে পারবেননা প্রিয় সন্তানের ফুলের মতো নিস্পাপ মুখ। রুমানাকে আহত করার জন্য তার স্বামীরও হয়তো কঠিন সাজা হবে যার দরুণ সেও হয়তো বঞ্চিত হবে তার প্রিয় সন্তানের সান্বিধ্য। আর তাদের দু’জনের অভাব বোধ করবে এই নিস্পাপ মেয়েটি। মেয়েটির কী দোষ ছিলো? পিতা মাতার স্নেহ ভালোবাসা পাওয়া তার মৌলিক অধিকার। তার পরেও সে তা থেকে বঞ্চিত হবে। তার অধিকার হরণ করার জন্য কে দায়ী হবেন? কি করে আনুশাহ তার ক্ষতিপূরণ আদায় করবে?
নিস্পাপ এই শিশুটির অধিকার হরণের জন্য তার পিতাকে যদি দায়ী করা হয় তা হলে একই অপরাধে তার মা’ ও দায়ী। সংসার জীবনটা বড় জটিল ও ভঙ্গুর। একে সযতনে লালন করতে হয়। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন যেমন সংসার জীবনে অত্যাবশ্যক তেমনি একজনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করাও জরুরী। রুমানা ও সাঈদের সংশার জীবনে শিক্ষা ও অর্থের প্রাচুর্য থাকলেও অভাব ছিলো শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার। অভাব ছিলো বিশ্বাসের। সন্ধেহ তাদের দাম্পত্য জীবনকে দূর্বীসহ করে তুলেছিলো। তাদের ভালোবাসায় চিড় ধরাতে একে অপরকে কটাক্ষ করা, হেয় প্রতিপন্নকরা মূল ভুমিকা পালন করছে। যাতে করে একজন অপরজনের প্রতি শ্রদ্বা ও ভালোবাসা ঘুণায় রূপ নেয়। যার ফলশ্র“তিতে আজকের এই পরিণতি।
আমরা দিন দিন যতই তথাকথিত শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি, যতই প্রগতিশীল বলে নিজেদেরকে দাবী করছি ঠিক তেমনি ভাবেই অন্যের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করছি বিসর্জন দিচ্ছি আমাদের নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক অনুসাশন। নারীকে আমরা সমান অধিকার দিতে গিয়ে তাদেরকে অসম্মান করছি, সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার নামে আত্মীয় বহিভূত মানুষের সাথে সম্পর্ক গঠন আমাদের শ্রদ্ধেয় কন্যা জায়া জননীকে উশৃঙ্খল করে তুলছে যা প্রকটভাবে দৃশ্যমান। সামাজিক এই অধঃপতনের জন্য অযাচিত মেলামেশা, মোবইল ফোনের অত্যাধিক অপব্যবহার, ফেসবুক, টুইটারসহ নানান সাইটের অবাধ ব্যবহার এর জন্য দায়ী তা অনস্বীকার্য।
আজ আনুশাকে তার সুন্দর অনাগত জীবনের অন্তরায়ের একমাত্র কারণ তার পিতা-মাতার অবিবেচক কর্মকান্ড, নৈতিকতা ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব। সুতরাং আনুশা’র সুন্দর ভবিষ্যৎ নন্ডভন্ড করার জন্য তার জীবনের প্রাতে এই সুনামির আঘাত হানার জন্য তাদের উভয়ের শাস্তি দাবী করছি। সাথে সাথে সহমর্মিতা থাকলো ছোট্ট এই শিশুটির জন্য। সে যেন তার ছোট্ট জীবনের শুরুতে হোচট খাওয়াকে সামলে উঠতে পারে। গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এমন একটি জীবন যেখানে থাকবেনা এমন নিষ্ঠুর হানাহানি ও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের অবক্ষয়। তোমার এই যুদ্ধে আমরা তোমার সহযোদ্ধা। শুভ কামনা রইলো আনুশা তোমার জন্য।