somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকল দেশের সেরা!

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৪ সালের দিকের কথা। একসাথে বেড়ে ওঠা বন্ধুদের প্রায় সবাই উপার্জন করতে শুরু করেছি। নিজেদের অন্যরকম স্বাধীন মনে হতে শুরু করেছে। একশ' টাকার জন্যে বাবার কাছে গিয়ে কান চুলকে বায়না করার দিন শেষ। চাইলেই আমরা হাজার টাকা খরচ করতে পারি।
টাকা খরচ করার অন্যতম সেরা উপায় হলো ভ্রমণে বের হয়ে যাওয়া। সমবয়েসী ডজনখানেক বন্ধুদের নিয়ে হৈ হল্লা করতে করতে ট্রেনে রওনা দিলাম কক্সবাজার। এর মধ্যে মোটের ওপর টিকেট পাওয়া গেছে ১১ টা, মানুষ সবমিলে ১২ জন। পুরো সময়টা কাউকে না কাউকে দাঁড়িয়ে যেতে হলো। যখন যার পালা এলো, সে বেচারী মুখ বেজার করে থাকে, বাকীরা "স্টান্ডিং ভাই" নামে ক্ষেপাতে থাকে। ক্ষেপতে ক্ষেপতে একসময় সে হেসে ফেলে। এর পরে যার পালা তাকে ভয় লাগাতে থাকে। রাতভর গান-বাজনা, ঝাগড়া-খুনসুটি কিছুই বাদ গেল না। এই হৈ-হল্লার মধ্যেই কেউ আবার উদাস হয়ে গান শোনে, কেউ এক পশলা ঘুম দিয়ে দেয়। কেউ ট্রেনের জানলা দিয়ে মাথা বের করে রাতের বাংলাদেশ দেখে।
সকাল বেলা চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছে গায়ে লাগে বন্দর নগরীর হাওয়া। সদ্য জেগে ওঠা শহরটির মানুষদের প্রায় না-ব্যস্ত হাঁটা-চলা, মৃদু হাঁকডাক আর শীতল হাওয়ার স্পর্শ সবই ঘোরের মতো মনে হয়।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঘন্টা চারেকের বাস ভ্রমণ। রাত জাগার ক্লান্তিতে চোখ ভারী হয়ে আসছে, ঠিক এমন সময় স্বপ্নদৃশ্যের মতো প্রথম সমুদ্র দর্শন করলাম আমরা, বাসের জানলা দিয়ে। বিস্মিত শিহরণের ঝাপটায় চোখ থেকে ঘুম উধাও। বাস থেকে নেমেই সমুদ্রের কাছে ছুটে যাওয়া। সমুদ্রের গর্জন যে এতো অদ্ভুত সুন্দর এ ব্যাপারে কোন ধারণা ছিলনা। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সমুদ্র আমাদের ডাকছে! সমুদ্রের পানিতে প্রথম পা ভেজানোর মতো আনন্দ খুব কমই আছে। সাদা ফেনিল স্রোত আছড়ে পড়ছে পায়ে। হাত ছড়িয়ে যে দিকে তাকাই শুধুই সমুদ্র। প্রকৃতির এই বিশালত্বের সাথে পরিচয় হতবাক করে দেয় আমাদের সবাইকে।
বাউন্ডুলে বন্ধু ও সহকর্মীদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশের বহু জায়গা ঘুরেছি, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দারবান, সুন্দরবন, যশোরের সাগরদাঁড়ি, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ।
বান্দারবনের নীল গিরির চুড়ায় দাঁড়িয়ে পাহাড়, গাছ-পালা দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। দূরে দেখি একখন্ড মেঘ, সেখান থেকে বৃষ্টি ঝরছে! তার আশ পাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ বৃষ্টি ছাড়াই নিরীহ ভাবে ঘুরছে। পায়ের নীচের পাহাড়ের মাথায় আমাদের চমকে দিয়ে উঁকি দিল রংধনু! কিন্তু পরমুহূর্তের চমকের কাছে এ বিস্ময় কিছুই না। কয়েক মিনিটের মধ্যে যাদুর মায়ার মতো শত শত খন্ড মেঘ আমাদের ঘিরে ফেলল। নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে যাচ্ছে মেঘের কণা। আমি পুরোপুরি ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম! এ কী! আমি কোথায়! কোন স্বপ্নদৃশ্য এতো সুন্দর হয়েছে কিনা মনে পড়ছে না। মনে করার ইচ্ছাও হচ্ছিল না।
পৃথিবীর অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। পর্যটক সুযোগ-সুবিধা বাদ দিলে প্রকৃতির যেটুকু থাকে, তা দিয়ে কেন জানি মন ভরে না, তা হোক সিঙ্গাপুরের সীবিচ, শিকাগোর জাঁকজমক নদী কিংবা সিয়াটলের ঝকমকে হ্রদ! বাংলাদেশ যে কত সুন্দর একটা দেশ ঘুরে না দেখলে কারো বিশ্বাস করা কঠিন হবে। বাংলাদেশের সৌন্দর্যকে যে উপভোগ করেছে, প্রকৃতি দিয়ে তাকে মুগ্ধ করা পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর একটি!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪৮
১৪টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×