somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মেদ আকাশ

৩০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
হাসান চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে। আজিমপুরের ঝকঝকে নীল এক টুকরো আকাশ। এক কোণায় অল্প কয়েকটা সবুজ পাতা, কী গাছ ঠিক চেনা যাচ্ছে না। তার প্রয়োজনও অবশ্য নেই। ঢাকা শহরে একমাত্র এই জায়গার গাছগুলোর পাতাই সবুজ। আর সব জায়গায় গাছের পাতায় ধুলোর স্তর আছে। পাতা নিয়ে অবশ্য কিছু যায় আসে না। আপাতত আকাশ পরিষ্কার, এতটুকুই স্বস্তি। পিঠের নিচে মাটি কিছুটা স্যাঁতসেতে লাগছে। বুড়ো আসগরকে এজন্য টাকা কম দেয়া লাগবে আজ। যদিও এখানে বুড়োর সরাসরি দোষ নেই। আগের রাতে বৃষ্টি হলে মাটি ভেজা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তর্কের খাতিরে তর্ক করলেও দেখা যাবে পুরো টাকাটাই শেষপর্যন্ত দেয়া লাগবে। আপাতত এসব হিসেব এক পাশে রেখে হাসান আবার আকাশ দেখতে লাগল। আরামে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে। ঘুমাবার উপায় নেই। যেকোন সময় বুড়ো এসে ডেকে তুলে দিবে। তারচেয়ে বরং অন্য কথা ভাবা যাক। এভাবে টুকরো আকাশ দেখলেই শারমিনের কথা মনে পড়ে হাসানের। মনে হয় পাশেই আছে সে।

২.
শারমিনের সাথে হাসানের পরিচয়টা ঠিক কাকতালীয় না, আবার একেবারে পূর্ব পরিকল্পিতও বলা চলে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময়ে একজন বন্ধুর মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়েছিল। ব্যস, ততটুকুই। এলোমেলো হাসান একদম পিছনের বেঞ্চ থেকে একরকম ঝুঁকি নিয়ে উঁকি মেরে মাঝে মাঝে শারমিন ক্লাসে এসেছে কি না তা দেখত। অসুস্থ থাকার কারণে বেশিরভাগ দিনেই অবশ্য শারমিন ক্লাসে আসত না। পরীক্ষার আগে আগে কিছুদিন তাকে বেশ ছোটাছুটি করতে দেখা যেত। সেইসব দিনগুলোয় হাসান বেশ উৎফুল্ল হয়ে থাকলেও কথা বলার আগ্রহ বোধ করত না। কিংবা করলেও সম্ভবত সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারত না। এভাবে একসাথে প্রায় দুই বছর পড়ার পর একদিন শারমিন আর হাসানের হঠাৎ করেই বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

‘এই তোমার কাছে রাসেল স্যারের নোটগুলো আছে?’
‘নাহ্।’
‘আচ্ছা। দেখি আর কার কাছে পাওয়া যায় কি না।’

ফটোকপির দোকানের সামনে এতটুকুই ছিল হাসান আর শারমিনের কথোপকথন। হাসানের কাছে আসলেও নোট ছিল না। না থাকাটাই স্বাভাবিক। রেগুলার ক্যাম্পাসে এলেও ক্লাস করা নিয়ে তার খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না কখনোই। সেদিন একটু এদিক-সেদিক করে কার থেকে যেন সে নোট নিয়ে এল কিছুক্ষণের মধ্যেই। তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শারমিন তার ইয়ার ড্রপ দেয়ার ইচ্ছার কথা জানাল। দীর্ঘদিন ক্লাস না করায় এখন তার পক্ষে তাল মিলাতে কষ্ট হচ্ছে। সামনের বছর থেকে নতুন করে সব শুরু করার প্ল্যান।

হাসানের সেদিন মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয়েছিল। ইয়ার ড্রপ দিলে এখন যে মাঝেমাঝে ক্লাসে দেখা হয় সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তার নিজের পক্ষে ড্রপ দেয়া সম্ভব না। কোনমতে পাশ করে একটা চাকরি জুটিয়ে ফেলতে হবে দ্রুতই। বাবা বাড়ি থেকে চিঠি লিখলেই তাতে সংসারের ভার নেয়ার ব্যাপারে ইশারা দেন। এমন অবস্থায় ইয়ার ড্রপের কথা চিন্তাও করা যায় না। হড়বড় করে কীসব সেদিন বলেছিল এখন তার আর মনে নেই। শুধু মনে আছে ড্রপ দেয়ার আগে অন্তত পরীক্ষা দেয়ার জন্য শারমিনকে রাজি করিয়েছিল সে। শারমিন খুব অবাক হয়েছিল সেদিন। আউল-বাউল ধরণের এই ছেলেকে এর আগে কোনদিন এত কথা বলতে দেখেনি কেউ।

স্মৃতির সাঁতারে ছেদ পড়ল হাসানের। আসগর আলির মাথা দেখা যাচ্ছে উপরে। লোকটার বয়স বোঝার উপায় নাই। সত্তরের কাছাকাছি তো হবেই। চ্যাংরা যে ছেলেটা তার সাথে কাজ করে সে-ও নাকি ছেলেবেলা থেকেই বুড়োর পাকা চুল-দাড়ি দেখে এসেছে। কিন্তু এখনও শক্তপোক্ত শরীর। কোদাল-কুড়াল নিয়ে দিব্যি কাজ করে খায়। মাঝে মাঝে হাসানের মতন উদ্ভট লোকজনের জন্য কিছু বাড়তি রোজগারও হয়। বুড়োর মাথার জন্য সবুজ পাতাগুলো ঢাকা পড়েছে। পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসানকে ডাক দিল সে— ‘ভাইজান উইঠা যান গা। হগলতে আয়া পড়ছে।‘

চার হাত-পায়ে ভর করে হাসান বের হয়ে এল। হাত ঝেড়ে মানিব্যাগ বের করে একশ টাকা বের করে দিল বুড়ো আসগরকে। লোকটা পুরান ঢাকার আদি নিবাসী নাকি দীর্ঘদিন এখানে থেকে ভাষাটা রপ্ত করে নিয়েছে সেটা তার কথার টান থেকে বোঝার উপায় নেই। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনায় বুড়ো আগ্রহী না। হাসানেরও অত জানার ইচ্ছা নেই। সময় সময় বুড়োর বদৌলতে আরাম করে পরিষ্কার আকাশ দেখা যায়, তাতেই সে খুশি। পয়সা খরচ হয় অবশ্য। শারমিনের সাথে এমন আকাশ দেখতে পয়সা লাগত না।

সেবারে আর ইয়ার ড্রপ দেয়া লাগে নি শারমিনের। মেসে ফিরে হাসান বইপত্র বের করে বসেছিল বহুকাল পর। সপ্তাহখানেক ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দিল। কদিন বাদে ক্যাম্পাসে গিয়ে বই-খাতার সাথে শারমিনকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় নিয়ম করে বসাও শুরু হল। ডিপার্টমেন্টের সুন্দরী মেয়েটাকে নিয়ে এলোমেলো হাসান ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বকবক করছে দেখে দূর থেকে বন্ধুবান্ধব হা-হুতাশ কম করে নি। অথচ দুজন শুধু পড়া নিয়ে আলাপ করত, আর কোন কিছুর সুযোগ ছিল না কখনোই। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে শারমিনের যেমন কোন আগ্রহ ছিল না, হাসানের তেমন ছিল না সাহস। মাসখানেক এভাবে বই-খাতা উল্টাবার পর আর ড্রপ দেয়ার চিন্তা করা লাগেনি, সেযাত্রায় বেশ ভাল করেই উতরে গিয়েছিল শারমিন।

সেকেন্ড ইয়ারের শেষে এসে সেই থেকে বন্ধুত্বের শুরু, নানা ঘটনা আর দুর্ঘটনার পরেও তা দীর্ঘদিন টিকে ছিল একরকম। পরের দুই বছর দেখতে দেখতে কেটে গেল কখন! হাসানের সাথে শারমিনের বেশিরভাগ কথাবার্তাই হত পড়া নিয়ে। হাসান এমন কোন আহামরি ছাত্র ছিল না। কিন্তু আলাপ চালিয়ে যাবার জন্য টুকটাক পড়াশোনা করত সে। মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যেত শারমিন। অনেকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণ ছিল সেটা। বন্ধুত্বের কৃতজ্ঞতা। প্রচণ্ড বিত্তশালী বাবার সুন্দরী মেয়ে হওয়ায় তার সাথে স্বস্তি নিয়ে মিশতে পারত না আর কেউ। হাসান কীভাবে কীভাবে সেই দেয়াল টপকে গিয়েছিল তা আজও তার বোধগম্য হয় না।

হাসানের আকাশ দেখার শুরুটাও হয়েছিল শারমিনের বাবার গাড়িতে বসেই। ঢাউস একটা জীপের মতন গাড়িতে চেপে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসত সে। ঢাকার রাস্তায় এমন গাড়ি তখনও দেখে নি হাসান। একটা বোতাম চেপে দিলেই মাথার উপর ছাদটা খুলে যেত, আর খুলে গেলেই এক চিলতে আকাশ নেমে আসত গাড়ির ভেতর। একদিন পল্টনে চাইনিজ খেতে যাবার সময়ে সেই গাড়িতে চড়ে প্রথম এমন আকাশ দেখা। ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে উপরে তাকিয়ে আকাশের সাথে সাথে নতুন গজিয়ে উঠা সব বিল্ডিং দেখে বিরক্ত হয়ে পড়া হাসানের কাছে এক টুকরো মেদহীন মুক্ত আকাশ বড় ভাল লেগে গিয়েছিল। নরম গদির মতন সিটে হেলান দিয়ে সেদিন পুরোটা পথ সে আর কোন কথা বলে নি। শারমিন একাই বকবক করে গিয়েছিল, কী বলেছিল হাসান বলতেও পারবে না।

এরপর আরও অনেকদিন ওরা একসাথে খেতে গিয়েছে। দূরদূরান্তের রেস্টুরেন্টে যেতে ভাল লাগত হাসানের। গাড়িতে উঠলেই তার আর কথা বলতে বা শুনতে ভাল লাগত না। কেমন অদ্ভুত এক ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকত উপরের দিকে। কয়েকবার এমন হবার পর শারমিনও বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা। গাড়িতে বসে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করত না সে-ও। হাসান আরাম করে আকাশ দেখত, আমোদে চোখ বুজে আসতে চাইত তার।

সেসব সোনালি দিন ফুরিয়েছে বহুকাল আগেই। এম.এসসি শেষ করার আগেই শারমিনের বিয়ে ঠিক হল। ছেলে পি.এইচডি করছিল ক্যালিফোর্নিয়ায়, তার সাথে মেয়েটাও আমেরিকা চলে গেল বিয়ের পর। বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই আর কখনো দেখা হয় নি শারমিনের সাথে। ভীষণ এক চাপা অভিমান কাজ করেছিল হাসানের মাঝে। দুদিন বাদে বিয়ে হয়ে যাবে যেই মেয়ের, তার সাথে গাড়িতে চড়ে শহর বেড়াবার আর কোন অর্থ খুঁজে পায় নি হাসান। প্রথম প্রথম মেসের ঠিকানায় এক কোণে ‘বাই এয়ার মেইল’ লেখা সুন্দর লম্বাটে খামে চিঠি আসত। উত্তর দেয়া হত না কখনোই। শেষ চিঠিটা কতদিন আগে এসেছিল তা আর মনেও করতে পারে না সে। শারমিনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার সাথে সাথে আকাশ দেখাও বন্ধ হয়েছিল হাসানের। আসগর বুড়োর সাথে পরিচয় না হলে আর কখনোই হয়তো এমন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব হত না।

৩.
মেসের ছেলেটা এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে অনেকক্ষণ। হাসানের টেলিফোন এসেছে, আসগর আলি নামে একজন ফোন করেছে। গায়ে শার্ট চাপিয়ে তড়িঘড়ি সিঁড়ি ভেঙে নেমে এল হাসান। দোকান থেকে কল করে আসগর আলি। বেশি বিল এলে সেটার গচ্ছা হাসানের পকেট থেকেই যাবে।

টেলিফোন তুলতেই বুড়োর গলা শোনা গেল। রীতিমত হাঁপাচ্ছে বুড়ো।

‘ভাইজান, নয়া কব্বর খুদছি। বিকালে দাফন-কাফন হইব। আপনে অখনই চইলা আহেন।‘

ম্যানেজারের পেছনের দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকাল হাসান। মাত্র সকাল এগারটা বাজে। মন ভাল হয়ে গেল তার। আজ অনেকক্ষণ আকাশ দেখা যাবে। (লেখক: বন্ধু শাফিন)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৮:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×