somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী মহাপ্রয়ানে শায়িত। কলকাতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে মারা গেছেন তিনি।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমাদের অহঙ্কার, আমাদের মুক্তিকামী চেতনা তুমি.........তুমি চলে গেলেও যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন এই ভারতীয় উপমহাদেশ থাকবে, যতদিন এই বাংলায় বিপ্লব হবে, স্বাধীনতাকামী মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের কাছে তুমি স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
তুমি আমাদের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী ........
হয়তো তিনিই শেষ জীবিত বিপ্লবী ছিলেন, যে কি না ইংরেজদের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। গত বুধবার, ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ ইং, বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টার দিকে, কোলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এটা তার ফেসবুক পেজের লিঙ্ক
বিনোদ বিহারী চৌধুরীর পৌত্র সৌম শুভ্র চৌধুরী কলকাতা থেকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১০টার দিকে কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে মারা যান তার দাদু।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের এই সঙ্গীর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।

তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

বিনোদ বিহারীর জন্ম ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে।

দুই বছর আগে ঘটা করে এই বিপ্লবীর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছিল।

তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ভারতবর্ষ ত্যাগের পর দেশ স্বাধীন হলেও এখনো দেশের সাধারণ মানুষের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মেলেনি।

দুই শতকের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাসের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, লড়াই-সংগ্রামের এই অভিযাত্রীর দেশ সম্পর্কে মূল্যায়ন ছিল-“যে মহৎ প্রেরণা ও শপথ নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারকে এদেশ থেকে তাড়িয়ে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলাম। ব্রিটিশদের তাড়িয়েছিলাম সত্যি কিন্তু যেরকম দেশ চেয়েছিলাম তা এখনো হয়নি।”

“আমরা আগের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছি। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদে দেশ ভরে গেছে,” তার এই বক্তব্য এখন প্রাসঙ্গিক।

২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৭০ বছরের দাম্পত্য জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গী স্ত্রী বিভা দাশকে হারান বিনোদ বিহারী।

বিনোদের দীর্ঘ সংগ্রামী আন্দোলন ও জেল জীবনে সব সময়ই পাশে থেকে উৎসাহ যুগিয়েছেন এই সংগ্রামী নারী।

বোয়ালখালীর উত্তরভূর্ষি গ্রামের আইনজীবী কামিনী কুমার চৌধুরী ও শ্রীমতি রমারানী চৌধুরীর পঞ্চম সন্তান বিনোদ বিহারী ১৯২৯ সালে সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেন।

এর দুই বছর আগেই ১৯২৭ সালে বিদ্যালয়ে বিপ্লবী রামকৃঞ্চ বিশ্বাসের (পরে যিনি সংগ্রাম করতে গিয়ে শহীদ হন) সংস্পর্শে এসে যুক্ত হন গোপন বিপ্লবী দল যুগান্তরের সঙ্গে।

১৯৩৪, ১৯৩৬ ও ১৯৩৯ সালে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায়ই উচ্চ মাধ্যমিক, বিএ, এমএ ও বিএল (আইনে স্নাতক) পাস করেন তিনি।

১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সময়কালে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনের অস্ত্রাগার লুট করে ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সূর্যসেন ও তার সহযোগীরা।

১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি মাস্টারদাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ব্রিটিশ সরকার আন্দোলন সাময়িক দমন করলেও পরে তা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ পরবর্তীতে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীন বাংলাদেশে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রবর্তী ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছেন বিনোদ বিহারী।

১৯৩৯ সালে বিনোদ চৌধুরী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দলের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ১৯৪৬ এ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

৪৭ এ দেশভাগের পর তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমএলএ) নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল মিলিয়ে তিনি সাত বছর বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন।

দেশ ভাগ ও একাত্তরের স্বাধীনতা পর নানা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ নানা কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই দেশ ছাড়লেও বিনোদ চৌধুরীকে টলাতে পারেনি কোনো কিছুই।

নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও তিনি টিকে ছিলেন এই স্বদেশের প্রতি মমত্ববোধ, প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি নিবেদিত প্রতিশ্রুতির কারণে।

১৯৬৮ সালে তার দুই ছেলে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে স্থায়ী হলেও তিনি দেশের মায়া ছাড়তে পারেননি বলে স্ত্রীকে নিয়ে থেকে যান বন্দর নগরীর মোমিন রোডের বাসাতে।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও দেশের সব সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রবর্তী সৈনিক। সহযোদ্ধা বিপ্লবীর স্মৃতিধন্য স্কুল ভেঙে মার্কেট গড়ার পাঁয়তারা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সমাজের অধিকার আদায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবীণ বয়সেও রাস্তায় নেমেছিলেন এই চির সংগ্রামী পুরুষ।

২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকের মতো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রাপ্তি ছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন জনকণ্ঠ গুণিজন সম্মাননা ১৯৯৯, ভোরের কাগজ সম্মাননা ১৯৯৮, শহীদ নতুন চন্দ্র স্মৃতি পদক।

বিপ্লব তীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার সম্মাননাসহ শতাধিক সংগঠন তাকে সম্মাননা জানায়।
সূত্র - বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডট কম
বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীকে নিয়ে করা একটি ডকুমেন্টারির লিঙ্ক

বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ১০৪ তম জন্মদিনের একটি ছবি



বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ১০২ তম জন্মদিনের একটি ছবি







উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সর্বশেষ বিপ্লবীর প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা রেখে তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×