সামনে অবারিত জলধারা
দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখতে পাই
কিন্তু সেদিকে চোখ নাহি যায়
কারন সামনে বসে আমার প্রেম
আমার ভালবাসা
কবিতা দিয়েই শুরু করলাম । কারন কবিতাই ছিল তোমার আমার ভালবাসার মুলকথা । মিরপুর ২ স্টেডিয়ামের সামনে প্রথম যেদিন তোমায় দেখলাম তোমার সুন্দর মুখখানা দেখে একদম মায়ায় পড়ে গেলাম । সেই থেকে তোমার নাম দিলাম মায়াবতী । আর মনে মনে পণ করলাম তুমিই হবে আমার মায়ারাজ্যের একমাত্র সখী ।
তখন মিরপুর স্টেডিয়াম এখনকার মত এত সুন্দর ছিল না । এত আলোকসজ্জাও ছিল না । আগে জায়গাটা ছিল ময়লা আবর্জনায় ভরপুর । অনেক মাতালের আনাগোনাও ছিল সেদিকে । এর পাশে ছিল একটা অন্ধকার গলি । অইখান দিয়ে একটা ছোট্ট পার্কে যাওয়া যেত । এখন আছে কিনা জানি না । অনেক আগের কথা তো । ২০০৮ - ০৯ এর দিকের কাহিনী । যেদিন তুমি এই গলিটার মুখে কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে লুটিয়ে পড়েছিলে সেদিন কিন্তু আমি তোমায় ফিরিয়ে দেই নি । বড় যত্নে আদর করে মুছে দিয়েছিলাম আমার ডান হাত দিয়ে । সেই হাতটা আজও কেমন যেন ভেজা হয়ে আছে ।
২৮ শে ডিসেম্বর , ২০০৮ । বিকেল বেলা । যে কবিতা দিয়ে গল্পটা শুরু করেছিলাম সেই কবিতাটা টেবিলে একটা খাতার উপর যত্ন করে লেখা রয়েছে । খাতাটা ওরই । নিচে লিখেছিল সে ............ থাক সেটা নাই বা বললাম । সেই থেকে শুরু হল দুজনের পথচলা ।
নতুন বছর এল । আমাদের জীবন চলছে কবিতা , গান , ঘুরাঘুরি , মান আর অভিমানে । ভালই চলছিল দিনগুলি । ভালবাসা আদর সোহাগ আর চুমুতে কখন যে বেলা গড়িয়ে চলে যেত টেরই পেতাম না ।
প্রায়ই আমাদের মাঝে ঝগড়া হত । এইচ এস সির সময় চলে এল । পড়াশোনার চাপেও আমাদের খুনসুটি আর দেখা করা থেমে থাকেনি । ঝগড়া হল ম্যাথ পরীক্ষার আগের রাতে । মোবাইলে । ও খুব কেঁদেছিল । জানেন আপনারা ও খুবই কেঁদেছিল । আমিও কেদেছিলাম সে রাত্তিরে । পরিনামে ওর পরীক্ষা খারাপ হল । অল্পের জন্য এ+ মিস করেছিল । এজন্য আমি নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করলাম । তাই ভর্তি পরীক্ষার সময় আমি ওকে যথাসাধ্য সাপোর্ট দিলাম । ও ভাল করল । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছিল । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল আমার মায়াবতী । আর আমি ছন্নছাড়ার মত হতাশ হয়ে পড়ে রইলাম । কি যে ঝড় আমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা । আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম । ছাত্র তেমন খারাপ ছিলাম না । সে অনুযায়ী প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশী । সে চাপ সইতে না পেরে আমি হয়ে গেলাম মানসিক ভারসাম্যহীন । আমি পাগল হয়ে গেলাম । জানেন একেবারে বদ্ধ উন্মাদ ।
ডিসেম্বর ১৮, ২০০৯ সাল । আমার জীবনে কি ঘটছে তার আমি কিছুই জানি না । পড়ে জানতে পেরেছিলাম আমার মায়াবতী আমায় ভুলে যায়নি । আমায় ফোন করেছিল অনেকবার । এমনকি ও আমার বাসায়ও এসেছিল । আমায় শুধু একনজর দেখতে । দেখা পায়নি মায়াবতী । ওর চোখগুলো শুধু আমায় খুঁজে বেড়িয়েছে । জানি ও চোখে আজও অশ্রু ছলছল করে উঠে । জানেন সে অশ্রু আজও আমি দেখতে পাই । ফেসবুকে ওর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যখন ওর চোখের উপর চোখ পরে যায় তখনই আমি কালো পানির স্রোত গড়িয়ে পড়তে দেখি । ও আমার মায়াবতী । ওকে যে আমি বড্ড ভালবাসি । প্রচন্ড ভালোবাসি ।
আমাদের সম্পর্কের এক বছর পেরিয়ে গেল । আমি তখনও অসুস্থ । জানেন আমি টানা সাতদিন ঘুমোতে পারিনি । আমার ডাক্তার বাবা আমাকে তার সাধ্যমত ঘুমের অসুধ খাইয়েছিলেন । তবু আমার চোখে নিদ্রা আসেনি । আমি জেগে থাকতাম । চেয়ে থাকতাম সুদুর নীল আকাশের পানে । জানেন আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম । মানুষ দেখলেই আমার মনে হত ওগুলো রক্তমাংসের শরীর । কিন্তু জীবিত নয়, মৃত । আমি একবর্ণও বাড়িয়ে লিখছি না । এ সবই ছিল আমার তখনকার অনুভুতি । একসময় আমি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলাম । আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ছয় মাস লেগেছিল । একবার শুধু ওর সাথে দেখা হয়েছিল ওর সাথে । শেষ দেখা হয়েছিল এটাও বোধহয় ডিসেম্বরেই । ২০১০ সালে । কার্জন হলের সামনে যে সবুজ মাঠের মত জায়গাটা আছে সেখানে । আমি জানিনা কেন আমি এমন করলাম । এই ভুলের মাশুল আজও আমাকে দিতে হচ্ছে । এত কিছুর পরও আমি ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাইলাম । ও আমাকে বলেছিল , " কেউ যদি একটা পুতুলও নিজের কাছে রাখে তার প্রতিও মানুষটার একটা মায়া জন্মায় । আর তোমার এই মানুষটার প্রতিও এতটুকু মায়া জন্মাল না । " আর আমি কি বলেছিলাম জানেন , " ওটা ছিল কমবয়সের প্রেম । ছেলেমানুষি খেলা । আমরা টিনএজার বলে এমনটি হয়েছিল । "
শেষ হয়ে গেল সব মুহূর্তের মাঝেই । জানেন আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম । আর ও এত ভাল ছিল যে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিল । জানিনা মন থেকে ক্ষমা করতে পেরেছিল কিনা ।
আমি জানি আমি কতটা স্বার্থপর । তবুও বলি সেই প্রথম দিনের মত করে তোমায় ভালোবাসি । তোমার আমার ঘর বাধার স্বপ্ন সত্য হবেই কোন একদিন । কারন আমি জানি তুমি এখনও একা । একা আছি আমিও ।
এই ছিল আমার মত একটা স্টুপিড আর মায়াবতীর মত একটা লক্ষীসোনার গল্প । টিভির বিজ্ঞাপনের মত করে বলতে ইচ্ছে করছে , আমার গল্প তো শুনলেন । এবার আপনার গল্পটাও শেয়ার করুন ।