somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মায়াবতী আর স্টুপিডের গল্প ( নতুন সংস্করণ )

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামনে অবারিত জলধারা
দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখতে পাই
কিন্তু সেদিকে চোখ নাহি যায়
কারন সামনে বসে আমার প্রেম
আমার ভালবাসা

কবিতা দিয়েই শুরু করলাম । কারন কবিতাই ছিল তোমার আমার ভালবাসার মুলকথা । মিরপুর ২ স্টেডিয়ামের সামনে প্রথম যেদিন তোমায় দেখলাম তোমার সুন্দর মুখখানা দেখে একদম মায়ায় পড়ে গেলাম । সেই থেকে তোমার নাম দিলাম মায়াবতী । আর মনে মনে পণ করলাম তুমিই হবে আমার মায়ারাজ্যের একমাত্র সখী ।
তখন মিরপুর স্টেডিয়াম এখনকার মত এত সুন্দর ছিল না । এত আলোকসজ্জাও ছিল না । আগে জায়গাটা ছিল ময়লা আবর্জনায় ভরপুর । অনেক মাতালের আনাগোনাও ছিল সেদিকে । এর পাশে ছিল একটা অন্ধকার গলি । অইখান দিয়ে একটা ছোট্ট পার্কে যাওয়া যেত । এখন আছে কিনা জানি না । অনেক আগের কথা তো । ২০০৮ - ০৯ এর দিকের কাহিনী । যেদিন তুমি এই গলিটার মুখে কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে লুটিয়ে পড়েছিলে সেদিন কিন্তু আমি তোমায় ফিরিয়ে দেই নি । বড় যত্নে আদর করে মুছে দিয়েছিলাম আমার ডান হাত দিয়ে । সেই হাতটা আজও কেমন যেন ভেজা হয়ে আছে ।
২৮ শে ডিসেম্বর , ২০০৮ । বিকেল বেলা । যে কবিতা দিয়ে গল্পটা শুরু করেছিলাম সেই কবিতাটা টেবিলে একটা খাতার উপর যত্ন করে লেখা রয়েছে । খাতাটা ওরই । নিচে লিখেছিল সে ............ থাক সেটা নাই বা বললাম । সেই থেকে শুরু হল দুজনের পথচলা ।
নতুন বছর এল । আমাদের জীবন চলছে কবিতা , গান , ঘুরাঘুরি , মান আর অভিমানে । ভালই চলছিল দিনগুলি । ভালবাসা আদর সোহাগ আর চুমুতে কখন যে বেলা গড়িয়ে চলে যেত টেরই পেতাম না ।
প্রায়ই আমাদের মাঝে ঝগড়া হত । এইচ এস সির সময় চলে এল । পড়াশোনার চাপেও আমাদের খুনসুটি আর দেখা করা থেমে থাকেনি । ঝগড়া হল ম্যাথ পরীক্ষার আগের রাতে । মোবাইলে । ও খুব কেঁদেছিল । জানেন আপনারা ও খুবই কেঁদেছিল । আমিও কেদেছিলাম সে রাত্তিরে । পরিনামে ওর পরীক্ষা খারাপ হল । অল্পের জন্য এ+ মিস করেছিল । এজন্য আমি নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করলাম । তাই ভর্তি পরীক্ষার সময় আমি ওকে যথাসাধ্য সাপোর্ট দিলাম । ও ভাল করল । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেল । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছিল । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল আমার মায়াবতী । আর আমি ছন্নছাড়ার মত হতাশ হয়ে পড়ে রইলাম । কি যে ঝড় আমার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা । আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম । ছাত্র তেমন খারাপ ছিলাম না । সে অনুযায়ী প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশী । সে চাপ সইতে না পেরে আমি হয়ে গেলাম মানসিক ভারসাম্যহীন । আমি পাগল হয়ে গেলাম । জানেন একেবারে বদ্ধ উন্মাদ ।
ডিসেম্বর ১৮, ২০০৯ সাল । আমার জীবনে কি ঘটছে তার আমি কিছুই জানি না । পড়ে জানতে পেরেছিলাম আমার মায়াবতী আমায় ভুলে যায়নি । আমায় ফোন করেছিল অনেকবার । এমনকি ও আমার বাসায়ও এসেছিল । আমায় শুধু একনজর দেখতে । দেখা পায়নি মায়াবতী । ওর চোখগুলো শুধু আমায় খুঁজে বেড়িয়েছে । জানি ও চোখে আজও অশ্রু ছলছল করে উঠে । জানেন সে অশ্রু আজও আমি দেখতে পাই । ফেসবুকে ওর ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যখন ওর চোখের উপর চোখ পরে যায় তখনই আমি কালো পানির স্রোত গড়িয়ে পড়তে দেখি । ও আমার মায়াবতী । ওকে যে আমি বড্ড ভালবাসি । প্রচন্ড ভালোবাসি ।
আমাদের সম্পর্কের এক বছর পেরিয়ে গেল । আমি তখনও অসুস্থ । জানেন আমি টানা সাতদিন ঘুমোতে পারিনি । আমার ডাক্তার বাবা আমাকে তার সাধ্যমত ঘুমের অসুধ খাইয়েছিলেন । তবু আমার চোখে নিদ্রা আসেনি । আমি জেগে থাকতাম । চেয়ে থাকতাম সুদুর নীল আকাশের পানে । জানেন আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম । মানুষ দেখলেই আমার মনে হত ওগুলো রক্তমাংসের শরীর । কিন্তু জীবিত নয়, মৃত । আমি একবর্ণও বাড়িয়ে লিখছি না । এ সবই ছিল আমার তখনকার অনুভুতি । একসময় আমি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলাম । আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ছয় মাস লেগেছিল । একবার শুধু ওর সাথে দেখা হয়েছিল ওর সাথে । শেষ দেখা হয়েছিল এটাও বোধহয় ডিসেম্বরেই । ২০১০ সালে । কার্জন হলের সামনে যে সবুজ মাঠের মত জায়গাটা আছে সেখানে । আমি জানিনা কেন আমি এমন করলাম । এই ভুলের মাশুল আজও আমাকে দিতে হচ্ছে । এত কিছুর পরও আমি ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাইলাম । ও আমাকে বলেছিল , " কেউ যদি একটা পুতুলও নিজের কাছে রাখে তার প্রতিও মানুষটার একটা মায়া জন্মায় । আর তোমার এই মানুষটার প্রতিও এতটুকু মায়া জন্মাল না । " আর আমি কি বলেছিলাম জানেন , " ওটা ছিল কমবয়সের প্রেম । ছেলেমানুষি খেলা । আমরা টিনএজার বলে এমনটি হয়েছিল । "
শেষ হয়ে গেল সব মুহূর্তের মাঝেই । জানেন আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম । আর ও এত ভাল ছিল যে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছিল । জানিনা মন থেকে ক্ষমা করতে পেরেছিল কিনা ।
আমি জানি আমি কতটা স্বার্থপর । তবুও বলি সেই প্রথম দিনের মত করে তোমায় ভালোবাসি । তোমার আমার ঘর বাধার স্বপ্ন সত্য হবেই কোন একদিন । কারন আমি জানি তুমি এখনও একা । একা আছি আমিও ।
এই ছিল আমার মত একটা স্টুপিড আর মায়াবতীর মত একটা লক্ষীসোনার গল্প । টিভির বিজ্ঞাপনের মত করে বলতে ইচ্ছে করছে , আমার গল্প তো শুনলেন । এবার আপনার গল্পটাও শেয়ার করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×