somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পতিত জমির উর্বরতা

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জয়নাল অনেকক্ষণ ধরে তার জুতো সামগ্রী নিয়ে বসে আছে। সে নিজেই কারিগর নিজেই বিক্রেতা। রাত বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সে আজ কোনো ক্রেতার দেখা পেলোনা। তার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। টাকার খুব প্রয়োজন তার। ছোট মেয়েটার অসুখ। তার জন্য আজ কোনো ওষুধ কিনে নিয়ে যেতে পারবেনা। বউ, বয়স্ক বাবা মা, দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। অসুখ বিসুখ, অভাব অনটন, অনাহার লেগেই আছে। দুঃখ শোকে তার অনুভ’তি বড় কঠিন হয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে একটা ভুল হয়ে গেছে। সে তার অতীতে ফিরে যায়। চোখের সামনে ভাসছে তার বিয়ের দিনটির কথা। কত রঙ্গিন স্বপ্ন কত আশা ছিলো বুকে। লাল টুকটুকে নববধূ। বউ তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, সে বউকে কত আদর করবে! জয়নালের শরীরে যে কাম যন্ত্রণা তার চিরস্থায়ী একটা সমাধান হবে।
তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তানের পিতা। আনন্দ আরো দিগুণ হয়ে যায়। তারপর আরো একটি। তার উপর বৃদ্ধ পিতামাতার পরিচর্যা। এত চাহিদা এত প্রয়োজন! জয়নালের পূর্বের আবেগ আর থাকে না। সবকিছু ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। দারিদ্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে তার মনে হয় বিয়ে নামক এই ভুলটাকে কি আর কোনোভাবেই শোধরানো সম্ভব নয়! পরিশ্রম তো সে আর কম করে না। সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনি। তারপরও সে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। সে শান্তি চায় এসব হতে মুক্তি চায়। কিন্তু সে যে এখন দায়বদ্ধ। সংসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত কেটে যায়। মানুষের কাছে নত মস্তকে থাকতে হয়। তাদের দয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। অনেকের অপমান, কটুক্তি তো আছেই। অসৎ পথে যাবার চিন্তা অনেকবার করেছে কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এসেছে। সবার দ্বারা সবকিছু সম্ভব হয় না। এখন তার বাস্তব উপলদ্ধি হচ্ছে- কাম বাসনা চরিতার্থ করার জন্য বিয়ের কোনো প্রয়োজনই নেই। তার বন্ধু আয়নাল- বিয়ে শাদি না করে দিব্যি ভালো আছে। তার বক্তব্য শুধু শুধু কয়েকটা প্রাণকে কষ্টে রেখে নিজে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। অনেক টাকার মালিক হলেই বিয়ে শাদি করা উচিত।
কামের প্রয়োজন হলে এখানে সেখানে গিয়ে মিটিয়ে আসে। কয়েকশ টাকার ব্যাপার। সারাজীবনের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যা কামাই করছে তা দিয়েই জীবনটাকে সুন্দরভাবে চালিয়ে নিচ্ছে। উপভোগ করতে পারছে- বয়স্ক বাবা মার দেখভাল করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
জয়নালের মাথায় হাত। একটাই চিন্তা, কিভাবে যৌবনের সেই ভুলটাকে সে সামাল দিবে! কিন্তু কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেনা। অশিক্ষিত মূর্খ হলেও জয়নাল বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে- বিয়ের পর বউয়ের সাথে কামের তাড়না থাকে সন্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত। তারপরই যৌবনের রঙ্গিন স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ। রূঢ় বাস্তবতায় সবকিছু পানসে বিরক্তিকর মনে হয়। সুতরাং এক বছরের এই নিশ্চিত আনন্দের জন্য সারাজীবন বউ সন্তান সবাইকে নিয়ে ভোগান্তির কোনো অর্থ হয়না। নিত্যদিনকার অসহ্য এই মানসিক চাপ, যন্ত্রণা, মানুষের দুর্ব্যবহার তাকে কুড়েকুড়ে খায়। দিশা বিশা না পেয়ে জয়নাল ভাবে তার বন্ধুর কাছে যাবে। যদি সে কোনো মুক্তির উপায় বাতলে দিতে পারে!
পরের দিন জয়নাল কাজে যায়না। বন্ধুর ডেঁরায় গিয়ে হাজির হয়। বন্ধু আয়নালও তাকে পেয়ে অনেক খুশি। দু বন্ধুর আড্ডা বেশ জমে উঠে।
‘দোস্তরে, তোরে দেখলে অনেক হিংসা হয়। আকাশে উড়তেছ। সুখি মানুষ।’
‘হা হা হা।’
‘বউ পোলাপান নিয়া গর্তে পড়ে গেছি। যৌবনে কি যে ভুল করছি! আমার মতো মানুষের আসলে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। না পারি বউ পোলাপানের আবদার মেটাতে- না পূরণ করতে পারি নিজের কোনো খেয়াল।’
‘আরে হাঁদারাম! আমারে দেখ। খাচ্ছিদাচ্ছি, মজা করছি, কামাই করছি। বাবা মায়েরও দেখভাল করছি। কোনো টেনশন নাই। কাম জাগলে বিভিন্ন জায়গায় সেরে আসি। কামের জন্য তোর মতো বেকুবরাই যৌবনে বিয়া করে।’
‘তুই কি তাইলে কোনোদিনই বিয়া শাদি করবি না!’
‘করুম না কেন। যে দিন মনে হবে বউ পোলাপান নিয়া কোনো টানাটানির অবস্থায় থাকতে হবে না সেদিনই বিয়া করুম।’
‘দোস্তরে, তোর কাছে বড় আশা নিয়া আসছিলাম। আমি এসব থেকে মুক্তি চাই। যে ভুল করছি তা শোধরাতে চাই।’
‘আমি তোর ভালা চাই। তয় এখন তো তুই বউ পোলাপান ছেড়ে দিতে পারবি না। সেটা ঠিকও হবে না।’
‘দোস্ত, তুই আমারে একটা উপায় বাতলে দে। যাতে এই টানাটানির মধ্যে আর থাকতে না হয়।’
‘বুদ্ধিটা কি তোর কাছে ভালো লাগবে!’
‘তুই বলেই দেখ।’
‘দোস্ত, তোর বউকে ভোগ করতে এখন কেমন লাগে!’
‘কবে শেষবার করছিলাম সেইটা মনে নাই। আর এখন এসবে জুত পাইনা। সুখ না থাকলে কি আর এসব করতে ভালো লাগে! আর এক বউয়ের সাথে এসব আর কতদিন ! সংসারের কাজকর্ম ছাড়া এখন আর অন্যকিছু ভাবতে পারিনা।’
‘তোর কাছে তার দেহের এখন কোনো চাহিদা না থাকতে পারে। কিন্তু অন্যদের কাছে আছে। বউ ছেলে মেয়ে নিয়েই থাক। তাই এ কথা বলছি। বউকে বসায়া বসায়া খাওয়ানের কি দরকার! তারেও রোজগারে নামায়া দে!’
‘বউ কি এতে রাজি হবে!’
‘তোর বউকে বুঝা। তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার চেয়ে এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। ভুল যা করেছিস- দেখ এভাবে তার কিছুটা শোধরাতে পারিস কিনা। পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা আনা টেনশন ফ্রি থাকার একটা দাওয়াই দিলাম।’
‘আমি কয়েকটা দিন একটু ভাইবা দেখি। তোর ভাবিরেও বুঝাই।’
‘দেখ চিন্তা-ভাবনা কইরা। যদি আমার বুদ্ধি মনে ধরে তয় বউরে নিয়া প্রথম আমার কাছেই আসিস। আমি যাচাই কইরা দিমুনে বাজারে কেমন চলবো। এ লাইনে পথ ঘাট আমার চেনা আছে। তোর বউরে কিছু টিপসও শিখায়া দিমু। চাহিদা বাড়বো। হা হা হা।’

জয়নালের সংসারে এখন আর অস্বচ্ছলতা নেই। নিজেকে সে এই বলে স¦ান্তনা দেয়- কোনো তো অসৎ কাজ করছেনা। চুরিদারি বা কারোটা ছিনিয়ে খাচ্ছেনা। সে একটা ব্যবসা করছে। অব্যবহৃত সম্পদকে সে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করেছে।



০৭/০৮/২০১৩

all rights reserved
tanim zubair
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×