somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই শীতে আর জমে যেতে চাই না

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীত জাকাচ্ছে ঢাকায়,রাতের নীর্জন রাস্তাগুলো এখন আগের চাইতে অনেক বেশি শীতল,উত্তাপহীন।এবার শীতে আয়োজন করে কোথাও পিঠা খেতে যাইনি এখনো,যান্ত্রিকতার ঢাকায় পিঠা খেতেও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লোক একত্র করা লাগে,নাহলে ব্যাপারটা ঠিক মনে হয় জমে না!
কাল সারাদিন খুব বাজে গেল,মনে হয় আজো যাবে,জমাট-বাধা এই সময় গুলো জট ছাড়াতে বরাবরই খুব ঢিমে-তে'তালা গতি।এবারের শীতে তাই আমিও দলা পাকিয়ে গেছি,গায়ের চামড়ার মত মনটাও অনুভুতিশুন্য,প্রতিক্রিয়াহীন। এই অস্তিত্বহীন আমার শীতল দলাটাকে একটা পাতিলে করে চুলোয় জাল দিয়ে উষ্ণ করা প্রয়োজন,গলানো প্রয়োজন,কঠিন থেকে শীতলে আনা প্রয়োজন।
শীতের সাথে আমার অনেক এলোমেলো স্মৃতি।প্রচন্ড শীতের রাতগুলোয় লেপ-কম্বলের ওম ছাড়াই উষ্ণ হয়ে ওঠা শরীর কিংবা রাতের ঢাকায় রিক্সায় চড়ে বাসায় ফেরার সময় শূন্য রাস্তায় হূট করে আমার ঠোটে মিলে যাওয়া আর এক জোড়া ঠোট। মনে পড়ে স্কুলের দিনগুলোর কথা,ঠিক সোয়া সাতটায় মা'র জোর করে শরীর থেকে লেপ ফেলে দেয়ার নির্মমতা। আমার স্কুলটাও ছিল জাদরেলী,যত কঠিন ঠান্ডাই পড়ুক,তাদের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত হাফ-স্যোয়েটার পরে শীত তাড়ানো লাগতো,শার্টের তলায় টি-শার্ট পর্যন্ত পরা এলাঊড ছিল না। সেই শীতগুলোয় আমি আমার স্কুল থেকে পালাতে চাইতাম,আমার মার কাছ থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে চাইতাম,যেখানে শীতের সকালগুলো রোদের উত্তাপ ছড়ানোর আগ পর্যন্ত শরির থেকে লেপ নামিয়ে দেয় না।
বড় হতে থাকলাম,শীতের ত্রাস কমতে থাকলো, নিঃসংগ একা রাতগুলোয় লেপের বদলে পাশে রক্ত-মাংশের উত্তেজনার প্রয়োজন বরং বেশি করে শরীর কাপাতে থাকলো। তারপর প্রেমে পড়ার অপরিপক্ক এক বয়সে কোন এক বর্ষাদিন জীবনে বসন্ত ডেকে আনলো,সেই বসন্ত আমাকে টেনে নিয়ে গেল শীতের দিকে। তারপর একসময় শীতের মাঝেই বসন্তের আয়ু ফুরাতে শুরু করলো,আরেকবার শীত-সন্ত্রাসের কবলে পড়লাম আমি।গাছের পড়ে যাওয়া পাতার মত মলিন হতে লাগলাম,শীত থেকে নয়,সেই মলিনতা থেকে মুক্তি খোজা শুরু করলাম।রাতের পর রাত বারান্দায় বিবস্ত্র শরীর নিয়ে বসে টের পাওয়ার চেষ্টা করতাম তীব্রতায় শীত কি শরীরকে হারাতে পারে?
শীত গেল,শিক্ষাটা তবু অপূর্ণই থেকে গেল।জীবনে আবার শীত ফিরে এল রিক্সা,ঢাকার পিঠা খাবার আয়োজন কিংবা চীন-মৈত্রী সম্মেলনের অন্ধকার রাস্তায় কুয়াশা মাথায় ঠেলে আমার পকেটে তোমার হাত বইতে বইতে। হাতে গরম কফির মগ নিয়ে যখন একমনে নৌকাডুবি পড়ছি,তখন আমার চুলের মাঝে তোমার এলোমেলো আঙ্গুলগুলো বড় বেশি উষ্ণতা ছড়াতো। অথবা তোমার-আমার মিলে যাবার সেই সময়টায় ডেস্কটপে বাজতে থাকা অর্ণবের সেই গানটা

শীতের সন্ধ্যায়,তোমার আমার কি কোথাও হারিয়ে যাবার কথা....

তারপর তুমি হারিয়ে গেলে,জীবনে থাকলো শুধু শীত আর তুমি হয়ে থাকলে শুধু শীতস্মৃতি।
এর পরের শীতগুলোও এভাবেই কাটতে লাগলো।উষ্ণতা আর একাকীত্ত্বের এক নিদারুন ফিউশানের মধ্য দিয়ে।আর এবারের শীতে আমি জমে যাচ্ছি এক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন বিশ্বাসঘাতকতায়,মিথ্যায়। বিশ্বাসের মূল্য যে এতটা তীব্রভাবে ফেরত আসে,তা এই প্রথম টের পেলাম।হঠাৎ করে প্রচন্ড শীতের মধ্যে আমার শরীর থেকে লেপ-কাথা,কাপড় সব টেনে-হিচড়ে খুলে বিবস্ত্র আমাকে শীতল কুয়ায় নামিয়ে দেয়া হল,আমি জমে গেলাম।উইকিলিক্সের কবলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পাড়ায় এখন বিরাজ করছে শীতলতা,আমার শীতলার কাছে ঐ ঠান্ডা কি হার মানতে বাধ্য না???
এই তাপশুন্যতা থেকে মুক্তি চাই,কানকুনে আরেকটা সম্মেলন ডেকে আমার মনের কার্বন নিঃসরন বাড়াতে চাই।চাই আরো কয়েক ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে যাক আমার মনের উষ্ণতা যাতে আমি দাত কেলিয়ে সবার মুখের উপর বলতে পারি,আসছে শীতে আমি আর জমছি না!!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×