যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের দারুল হুদা নামক ইসলামী কেন্দ্রের পরিচালক জামাল আল গামুস বলেছেন, “আমাদের এ কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসা বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিকই ইসলাম সম্পর্কে অনেক তথ্য রাখেন। তারা সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই পড়া ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম এবং মতাদর্শ সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছেন। তাই তারা যখন ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সাথে সংলাপে বসেন তখন খুব দ্রুত ইসলাম গ্রহণ করেন। এখন প্রতিদিন একদল মার্কিন নাগরিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন ও মসজিদে যাচ্ছেন।”
ডিয়েগো রডার্ড একজন নওমুসলিম মার্কিন যুবক। তিনি নিউইয়র্কের সনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত শিল্পের উপর পড়াশুনা করছিলেন। ডিয়েগো ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এখন তার নাম আলী আকবার। মুসলমান হবার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, “পশ্চিমা মতাদর্শগুলো আমার মন-মানসিকতার সাথে খাপ খাচ্ছিল না এবং এসব মতবাদ আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আমার মন সব সময়ই এসব চিন্তাধারার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। তাই আমি গ্রহণযোগ্য এমন এক চিন্তাধারার সন্ধান করছিলাম যে চিন্তাধারা আমাকে জীবনের অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।”
সাবেক ডিয়েগো আরো বললেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃত্বশীল মতাদর্শগুলো ধর্মভিত্তিক নয়, তাই এসব মতবাদ আমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি। পাশ্চাত্যের লাগামহীন উশৃংখল জীবন এখন যুব সমাজের উপর সমকামিতা চাপিয়ে দিয়েছে। ফলে সেখানে পারিবারিক বন্ধনের ভিত্তি দুর্বল ও বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আমার কাছে এ প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয় যে, আমরা কেন এ পৃথিবীতে এসেছি এবং কিভাবে আমাদের জীবন-যাপন করা উচিত, আর জীবন যাপনের শ্রেষ্ঠ পথ কোনটি? এ অবস্থায় ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি ইসলাম সম্পর্কে আমাকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলে।
ইহুদী গবেষক মোশে বিলজিন পাশ্চাত্যে ইসলামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেছে, "সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন পাশ্চাত্যে ইসলামই হবে প্রধান ধর্ম। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বহু গির্জা জাদুঘরে পরিণত হয়েছে, অথচ মসজিদগুলোতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লীকে জায়গা দেয়ার স্থান নেই।" লুজ ওয়ার নামক বেলজীয় সাময়িকী এক নিবন্ধে লিখেছে, বেলজিয়ামে খ্রিস্টানরা যে ব্যাপক হারে মুসলমান হচ্ছে তাতে ২০১২ সাল নাগাদ দেশটির মুসলমানের সংখ্যা আরো ৫ লক্ষ বৃদ্ধি পাবে। ইসলাম ধর্মে মানুষ ও খোদার মধ্যে কোনো মধ্যস্থতা না থাকায় এবং এ ধর্ম পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতাকে গুরুত্ব দেয়ায় েেবলজিয়ামের নাগরিকরা ইসলাম গ্রহণ করছেন বলে নওমুসলিম বেলজীয়রা জানিয়েছেন।
‘ব্রিটেনে শ্বেতাঙ্গদের মাঝে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সংখ্যা বেড়েছে’
এতদিন প্রচার করা হতো ব্রিটেনে শ্বেতাঙ্গদের মাঝে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে তিন ভাগের দু'ভাগই মহিলা। সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে, গত ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ব্রিটেনে এক লাখের বেশি মানুষ মুসলমান হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা দশ লাখেরও ঊর্ধ্বে। এ সব মানুষ ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েই ইসলাম গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এর মধ্যে শুধু ২০০১ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার ও প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনে হামলার পর ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। তবে মুসলমান হওয়ার পর এ সব মানুষ পরিবার ও সমাজের কোনো কোনো অংশ থেকে চাপের মুখোমুখি হন এবং অসহযোগিতার শিকার হন। ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গরা পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের উপর ভরসা না করে তারা নানা ধরনের বই-পুস্তকের উপর নিভর করে। নতুন মুসলমান হওয়া নারী-পুরুষ নিয়মিত নামায আদায় করেন এবং বিশেষ করে শুক্রবার জুমা নামাযের জন্য মসজিদে যান। এ ছাড়া, ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী মহিলারা পর্দা করেন এবং হিজাব পরেন।
প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ইউরোপে বাড়ছে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ
মূলত: সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে ইসলাম যে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ইউরোপের প্রাচ্যবিদ, নীতিনির্ধারক মহল, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক-সাহিত্যিকরা রীতিমতো পেরেশান। এ প্রবণতা ও বিপ্লব দেখে তারা হতবাক। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘টাইমস’ এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার প্রতিটি বাক্যে ইসলামের সত্যতা ও বাস্তবতা উন্মোচিত হয়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী ইউরোপে নতুন মসজিদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব মসজিদ থেকে দৈনিক পাঁচ বার আযানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। রোমে তিন কোটি ডলার ব্যয়ে সুরম্য একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের জন্য জমি বরাদ্দ করেছে সে দেশের সরকার। ফ্রান্সে বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। অথচ ১৯৭০ সালে সে দেশে মসজিদের সংখ্যা ছিল ডজনখানেক। ব্রিটেনে প্রায় একশ’র মতো পাবলিক স্কুলে বাচ্চাদের সিলেবাসে ইসলামিয়াত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পশ্চিম জার্মানিতে পশ্চিমা ধাচে পরিচালিত যতগুলো পাবলিক স্কুল আছে তার এক তৃতীয়াংশের মতো মুসলমান শিশুদের জন্য।
রিপোর্টে জানা যায়, মাত্র তিন দশক আগেও ইউরোপে মুসলমানরা ছিলেন স্বাভাবিক অবস্থায়। তাদেরকে দেখা হতো সন্দেহের চোখে। কিন্তু মুসলমানরা তাদের অবস্থান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। এমনকি তারা তাদের ভোটে লর্ড নজীর আহমদকে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত করেছেন। মুসলমানরা ইসলামী সভা-সমাবেশে অত্যন্ত- আগ্রহের সঙ্গে শরীক হচ্ছেন। ইসলামী সাহিত্য এবং পবিত্র কুরআন শরীফ-এর তরজমা পড়ার প্রবণতা আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এসব কিছু পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝে অভাবনীয় প্রভাব ফেলছে।
ব্রিটেনের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক খুরশিদ আহমদ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক ইউরোপে প্রায় আড়াই কোটি (প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশী) মুসলমান বাস করেন। এর মধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ রাশিয়ায়, ৭৫ লাখ পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং প্রায় ৭০ লাখ শুধু পশ্চিম ইউরোপে বাস করেন। এমনিভাবে আজ ইসলাম ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ইউরোপের মুসলিম ফোরামের পরিচালক মাহমুদ সিদ্দীকী সাদী বলেন, জাতিসংঘ ইউরোপের মুসলমানদের ব্যাপারে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২১ মিলিয়ন (দুই কোটি ১০ লাখ)। অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ইউরোপে মুসলমানদের সংখ্যা হচ্ছে ১০ কোটিরও ঊর্ধ্বে। এরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের পরিসংখ্যান ও একটি পর্যালোচনা এক. ব্রিটেনে প্রতিদিনই মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক ব্রিটেনে মুসলমানের সংখ্যা ৫০ লাখ। (প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি) ৬০০ মসজিদ এবং ৪০০ এর মতো ইসলামী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। ব্রিটেনে মুসলমানদের সংখ্যা এবং মসজিদ নির্মাণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। একথার সত্যতা নিরূপণ করা যায় শুধু এটা দিয়েই যে, ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে শুধু তিনটি মসজিদ ছিল। আর এসব মসজিদে শুধু ফজর, মাগরিব ও ইশার নামায হতো। তখন ব্রিটেনে জুমার নামাযের বিশেষ কোনো প্রচলন ছিল না। সে সময় থেকে মাত্র ত্রিশ বছর পর ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে ৫৭৫টি মসজিদ নির্মাণ হয়েছে এবং এসব মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমা নিয়মিতভাবে আদায় হচ্ছে।