somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্র, নজরুল ও সুকুমার রায়ের শিশুতোষ ছড়া- কবিতা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্র, নজরুল ও সুকুমার রায়ের শিশুতোষ ছড়া- কবিতা
-জুলফিকার শাহাদাৎ

বাংলা ছড়া ও কিশোর কবিতার তিন দিকপাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), সুকুমার রায়(১৮৮৭-১৯২৩), কাজী নজরুল ইসলাম(১৮৯৮-১৯৭৬)। রবীন্দ্র -নজরুলের ধ্যানজ্ঞান যদিও শিশুতোষ সাহিত্য ছিল না তবু এক্ষেত্রেও তাঁদের সাধনার ফসল কম নয়। অপরদিকে সুকুমার রায় পুরো জীবনটিই ব্যয় করলেন শিশুদের জন্য।
এ তিনজন শিশুসাহিত্যিকের জন্মকুষ্ঠী ঘাঁটতে গিয়ে দেখি, এঁদের বয়সের গড় পার্থক্য প্রায় তের বছর। প্রায় এক যুগ ব্যবধানে এঁদের জন্ম হলেও প্রত্যেকের লেখায় আমরা নানা ধরনের সাদৃশ্য ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যও লক্ষ্য করি। রবীন্দ্রনাথের জন্ম অভিজাত জমিদার পরিবারে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের সাথে যদিও তাঁর সংযোগ ছিল তা’ নিতান্তই খাজনা আদায়ের জন্য। রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করা হলে, ‘আপনার পেশা কী’? রবীন্দ্রনাথ জবাবে বলেছিলেন, ‘লেখালেখি’। যখন পুনরায় প্রশ্ন করা হয় ‘এতে সংসার চলে’? রবীন্দ্রনাথ জবাব দেন,“জমিদারি দেখি”।

জমিদার বংশে বসবাস করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কথা রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছড়া কবিতায় কতটুকু বলতে পেরেছেন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ড. হায়াৎ মামুদ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ মুখ্যত শিশুসাহিত্যিক নন,..... ‘রবীন্দ্রনাথ নামে ঠাকুরবাড়ির ছেলেটির মনে যে শিশুর রুপ ধরা দিল তা’ অত্যন্ত সংস্কৃতিমান একটি পরিবারের ছেলেমেয়েদের মেধাবী ও পরিকল্পিত রুপ, তার সঙ্গে গড়পড়তা বাঙালি শিশুর মুখ মেলে না , রবীন্দ্রনাথের শিশুতোষ ছড়া- কবিতা মুলতঃ পরিণত বয়সে শৈশবকে দেখা। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছড়া - কবিতার বই ‘ছবি ও গান’ ‘কড়ি ও কোমল ‘শিশু ’ উল্লেখযোগ্য।
যদিও পরিণত বয়সে এসে রবীন্দ্রনাথ শিশুতোষ ছড়া কবিতায় মনোনিবেশ করেন, তথাপি বলতে হয়, ছড়া কবিতার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল শৈশব থেকেই। রবীন্দ্রনাথের জবানীতে আমরা পাই, ‘সেই কৈলাস মুখুজ্যে শিশুকালে অতিদ্রুতবেগে মস্ত একটা ছড়ার মত বলিয়া আমার মনোরঞ্জন করিত।......ছড়া শুনিতে শুনিতে তাহার চিত্রটিতে মন ভারি উৎসুক হইয়া উঠিত। বালকের মন যে মাতিয়া উঠিত এবং চোখের সামনে নানাবর্ণে বিচিত্র আশ্চর্য মুখচ্ছবি দেখিতে পাইত, তাহার মূল কারণ ছিল সেই দ্রুত উচ্চারিত অনর্গল শব্দচ্ছটা এবং ছন্দের দোলা। শিশুকালের সাহিত্যরস ভোগের এই দুটি স্মৃতি এখনো জাগিয়া আছে; আর মনে পড়ে ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান’। এই ছড়াটা যেন শৈশবের মেঘদূত’।
স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই রবীন্দ্রনাথই ব্রাত্যসমাজ থেকে কুলিনসমাজে ছড়াকে তুলে আনেন। ছড়ার মর্যাদা বৃদ্ধিতে রবীন্দ্রনাথের অবদান অনস্বীকার্য । রবীন্দ্রনাথ তাঁর জবানীতে বলেন, ‘ছেলে ভুলানো ছড়ার মধ্যে আমি যে রসাস্বাদ করি ছেলেবেলাকার স্মৃতি হইতে তাহাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব’।

সুকুমার রায় আমাদের ছড়া সাহিত্যের দিকপাল। মাত্র ছত্রিশ বছর তিনি বেঁচেছিলেন। এ ছত্রিশ বছরে তিনি জীবনকে দেখেছেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। অসম্ভব খেয়ালখুশির রাজা সুকুমার রায় জীবনকে নিয়ে খেলেছিলেন আতশবাজীর খেলা । হাস্যরস কৌতুক, উইট যেন তাঁর চোখেমুখে। তিনি জীবদ্দশায় গড়ে তুলেছিলেন ‘ননসেন্স ক্লাব’।তাঁর ছড়ার মধ্যে আমরা লক্ষ্য করি, আনন্দ- হাসির আড়ালে জীবনের দুষ্টক্ষতগুলো চিহ্নিত করার এক আশ্চর্য চিহ্নায়ক। সুকুমার রায় সম্পর্কে সত্যজিত রায় বলেন, ‘জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে উপস্থিত হয়ে এমন রসিকতা আর কোন রসস্রষ্টার পক্ষে সম্ভব হয়েছে বলে আমার জানা নেই’।

বাংলা ছড়াসাহিত্যে সুকুমার রায়ের মতো এতো পঠিত ছড়াকার আর দ্বিতীয়টি নেই। শিশুদের মধ্যে কৌতূহল উদ্দীপক ব্যঞ্জনাধর্মী ছড়া রচনায় সুকুমারের প্রতিদ্বন্দ্বী অদ্যাবধি সুকুমারই।
সুকুমার রায়ের মৃত্যুর সতের বছর পর ১৩৪৭ সালে ‘পাগলা দাশু’ প্রকাশিত হয়। সুকুমার রায়ের বিধবা স্ত্রী শ্রীমতি সুপ্রভা রায়ের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ এ বইয়ের ভুমিকায় লিখেন, ‘বঙ্গসাহিত্যে ব্যাঙ্গ রসিকতার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আরো কয়েকটি দেখা গিয়েছে। কিন্তু হাস্যেচ্ছ্বাসের বিশেষত্ব তাঁর প্রতিভার যে স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছে তার ঠিক সমশ্রেণীর রচনা দেখা যায় না । তাঁর বিখ্যাত ছড়াগ্রন্থ ‘আবোল তাবোল’ ‘খাই- খাই’ ‘হযবরল’ উল্লেখযোগ্য।

কাজী নজরুল ইসলামও আমাদের শিশুকিশোর সাহিত্যের অন্যতম মহীরুহ। জীবনের নানা দ্বন্দ¡, সংঘাত ও পোড়নে তাঁর শৈশব। আট বছর বয়সে পিতৃহারা নজরুল শৈশবকে দেখেছিলেন অবর্ণনীয় লোনাজলে। পরপর চার সন্তানের মৃত্যুর পর নজরুলের জন্ম বিধায় তাঁর নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া’। ‘দুখু মিয়া’ নামটাই তাঁর পরবর্তী জীবনে সত্য হয়ে ধরা দিয়েছিলো। আটাত্তর বছর বেঁচেছিলেন নজরুল । ৩৪ বছরই ছিলেন বাঁকহারা, বাকি চুয়াল্লিশ বছর সচল জীবনে নজরুলের সৃষ্টি বিস্ময়কর। শিশুতোষ ছড়া- কবিতা রচনায় নজরুল ছিলেন বৈচিত্র প্রয়াসী। ছন্দের পরীক্ষা- নিরীক্ষা, নতুন বিষয় নির্বাচন, এমনকি শৈলী নির্মাণেও নজরুল নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছেন। নজরুলের শিশুকিশোর মাটিগন্ধি, সেই ক্ষেত থেকে উঠে আসা, সেই জলা থেকে উঠে আসা। তাঁর শিশুতোষ ছড়া কবিতায় শুধু শিশুদের কৌতূহল নয়, বরং তাদের বঞ্চনা, লাঞ্চনা ও উৎপীড়নের কথাও উঠে এসেছে। তাঁর বিখ্যাত শিশুতোষ ছড়ার বই ‘ঝিঙেফুল’।
২. শিশুতোষ ছড়া কবিতায় ‘মা’ অনুষঙ্গ সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই বেশি বেশি ব্যবহার করেন। শৈশবে মাতৃহারা কবির মনোবেদনাই এর কারণ হতে পারে। এ কারণে কখনো কখনো রবীন্দ্রনাথের ছড়া কবিতাগুলোকে একঘেয়ে মনে হয়। মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক প্রশ্নাতীত। তারপরও বলতে হয়, বৈচিত্র্য সন্ধানের জন্য কখনো কখনো কবিকে নিজের ভুবন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। খুঁজতে হয় নতুন দিগন্ত। রবীন্দ্রনাথকে এ ক্ষেত্রে বড় বেশি স্থবির মনে হয় ।

মাকে নিয়ে লিখেছেন কাজী নজরুল, সুকুমার রায়ও। এ সকল কবিতায় দৃষ্টিভঙ্গিগত ভিন্নতাও রয়েছে। আবার কখনও মনে হয় যেন, একে অপরের বিষয় চুরি করেছেন।

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে
মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে
দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে
আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে
টগবগিয়ে তোমার পাশে, পাশে।

(বীরপুরুষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কিংবা

সোম মঙ্গল বুধ এরা সব
আসে তাড়াতাড়ি
এদের ঘরে আছে বুঝি
মস্ত হাওয়া গাড়ি?
রবিবার সে কেন মাগো,
এমন দেরী করে?
ধীরে ধীরে পৌঁছায় সে
সকল বারের পরে
আকাশ পাড়ে তার বাড়িটি
দূর কি সবার চেয়ে?
সে বুঝি, মা তোমার মতো
গরীব ঘরের মেয়ে
(রবিবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

মাগো, প্রসন্নটা দুষ্টু এমন !
খাচ্ছিল সে পরোটা
গুঁড় মাখিয়ে আরাম করে বসে
আমায় দেখে একটা দিল,
নয়কো তাও বড়টা
দুইখানা সে আপনি খেল কষে
তাইতে আমি কান ধরে তার একটুখানি পেঁচিয়ে,
কিল মেরেছি, হ্যাংলা ছেলে বলে-

অমনি কিনা মিথ্যা করে ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে
গেল সে তার মায়ের কাছে চলে! (ভালো ছেলের নালিশ, সুকুমার রায়)
কিংবা

গোপালটা কি হিংসুটে মা! খাবার দিলেম ভাগ করে
বল্লে নাকো মুখেও কিছু, ফেল্লে ছুঁড়ে রাগ করে
জ্যাঠাইমা যে মিঠাই দিলেন ‘দুই ভায়েতে খাও’ বলে-
দশটি ছিল একটি তাহার চাখতে দিলাম ‘ফাও’ বলে..
তাও মানে না কেবল কাঁদে স্বার্থপরের শয়তানী
শেষটা আমায় মিঠাইগুলো খেতেই হল সবখানি ( নিঃস্বার্থ, সুকুমার রায়)

আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি
সূর্য্যমিামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে
‘হয়নি সকাল ঘুমো এখন’ মা-বলবেন রেগে (খোকার সাধ, কাজী নজরুল ইসলাম) কিংবা

মাগো! আমায় বলতে পারিস
কোথায় ছিলাম আমি
কোন-না জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বলতিস
-ঐ ঘরছাড়া মোর ছেলে?
শুকতারাকে বলতিস কি আয়রে নেমে আয়
তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশী শোভা পায় (কোথায় ছিলাম আমি/কাজী নজরুল ইসলাম)

৩. রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমার রায়ের ছড়ার বিশ্লেষণে আমরা লক্ষ্য করি, নজরুলে যতটুকু বৈচিত্র্য বিশেষ করে ছন্দে, শৈলী ও উপস্থাপনায় তা’ রবীন্দ্র- সুকুমারে অনুপস্থিত। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে নজরুলের শিশুতোষ এ ছড়া কবিতাগুলো সুধীমহলের ব্যাপক মনোযোগ আর্কষণ করেনি। নজরুলের ছড়ার এই বৈচিত্র্য বেশী আলোচনা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
‘তালগাছ’ কে ঘিরে রবীন্দ্র- নজরুল দু’জনই শিশুতোষ কবিতা লিখেছেন। এতে দু’জনের দু’ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করি।

তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে
সবগাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে
মনে সাধ
কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়
একেবারে উড়ে যায়
কোথা পাবে পাখা সে
(তালগাছ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

ঝাঁকরা চুলো তালগাছ, তুই দাঁড়িয়ে কেন ভাই
আমার মতো পড়া কি তোর মুখস্থ হয় নাই
আমার মতো এক পায়ে ভাই
দাঁড়িয়ে আছিস্ কান ধরে ঠায়
একটুখানি ঘুমোয় না তোর পন্ডিত মশাই
(তালগাছ,কাজী নজরুল ইসলাম)।

রবীন্দ্রনাথের বেশীর ভাগ ছড়া উত্তম পুরুষের লেখা।পাশাপশি নজরুলের মধ্যেও খানিকটা এ প্রবণতা রয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথের মতো যথেচ্ছ নয়। অন্যদিকে, সুকুমার রায় এক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বতন্ত্র। তিনি তাঁর ছড়া কবিতাগুলোয় বেশীভাগই তৃতীয় দৃষ্টিতে লিখেছেন।

আমি যদি দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি
ভোরের বেলা মাগো ডালের পর কচিপাতায় করি লুটোপুটি
তবে তুমি আমার কাছে হারো
তখন কি মা চিনতে আমায় পারো?
তুমি ডাকো খোকা কোথায় ওরে;
আমি শুধু হাসি চুপটি করে। (লুকোচুরি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

বাবুদের তালপুকুরে
হাবুদের ডালকুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া
বলি থাম একটু করি দাঁড়া ...
তবে মোর নামই মিছা!.....
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সে কি ভাই যায়রে ভুলা
মালীর ঐ পিটনিগুলা
কি বলিস? ফের হপ্তা
তৌবা নাক খপ্ত (লিচুচোর, কাজী নজরুল ইসলাম)।

গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা
আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লি থেকে বর্মা
গাইছে ছেড়ে প্রাণের মায়া
গাইছে তেড়ে প্রাণপণ
ছুটছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভনভন
মরছে কত জখম হয়ে করছে কত ছটফট
বলছে হেঁকে “প্রাণটা গেল গানটা থামাও ঝটপট” (গানের গুঁতো,সুকুমার রায়)

নজরুলের বেশির ভাগ ছড়া কবিতাই সংলাপ প্রধান। পাশাপশি রবীন্দ্র-সুকুমারে এ প্রবণতা ততবেশি লক্ষ্যণীয় নয়। সংলাপ প্রধান ছড়াকবিতার মাধ্যমে শিশুরা নিজেরাই এতে একাÍ হতে পারে,

কাঠবেরালি! কাঠবেরালি পেয়ারা তুমি খাও?
গুঁড় মুড়ি খাও? দুধভাত খাও?
বাতাবি লেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর ছানা? তাও?
ডাইনি তুমি হোৎকা পেটুক?
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
(খুকি ও কাঠবিরালি, কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা

ও ভাই কোলাব্যাঙ
ও ভাই কোলাব্যাঙ
সর্দি তোমার হয় না বুঝি
ও ভাই কোলা ব্যাঙ
সারাটি দিন জল ঘেঁটে যাও
ছড়িয়ে দুটি ঠ্যাঙ।(ও ভাই কোলাব্যাঙ, কাজী নজরুল ইসলাম)

যখন যেমন মনে করি
তাই হতে পাই যদি
আমি তবে একখনি হই
ইচ্ছামতি নদী(শিশু ভোলানাথ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জান্ত?
দিব্যি ছিলেন খোশমেজাজে চেয়ারখানি চেপে
একলা বসে ঝিমঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে!
আঁৎকে উঠে হাত-পা ছুঁড়ে চোখটি করে গোল
হঠাৎ বকেন,“গেলুম গেলুম, আমায় ধরে তোল”(গোঁফচুরি, সুকুমার রায়)

হাস্যরসের ছড়া রচনার ক্ষেত্রে সুকুমার রায় আজ অবধি অপ্রতিদ্বন্দ্বি। তাঁরই ছড়ার ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ্য করি নজরুলের মধ্যে। তবে নজরুলের ছড়ার সাথে সুকুমার রায়ের ছড়ার পার্থক্য রয়েছে। নজরুলের ছড়ায় রয়েছে বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য। বৈচিত্র্য বিশেষ করে ছন্দ ও শৈলীতে। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথের হাস্যরসের ছড়া তেমন দেখা যায় না। এমন কি তাঁর মধ্যে শিশুতোষ ছড়া খুঁজে নেয়াও দুষ্কর। গুটিকয় ছড়া বাদ দিলে রবীন্দ্রনাথে আমরা শিশুতোষ ছড়া পাই না।

ঠ্যাং চ্যাগাইয়া প্যাঁচা যায়
যাইতে যাইতে খ্যাঁচখ্যাচায়
প্যাঁচায় গিয়া উঠল গাছ
কাওয়ারা সব লইল পাছ
প্যাঁচার ভাইস্ত কোলাব্যাঙ
কইল চাচা দাও মোর ঠ্যাং
প্যাঁচায় কয় বাপ, বাড়িতে যাও
পাছ লইছে সব হাপের ছাও
ইঁদুর জবাই কইর‌্যা খায়
বোঁচা নাকে ফ্যাচফ্যাচায়। (প্যাঁচা,কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা

মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়
ক্রুদ্ব হয়ে যুদ্বে যায়
বেঁটে খাটো নিটপিটে পায়
ছেৎরে চলে কেৎরে চায়
মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়।(মটকু মাইতি বাঁটকুল রায়, কাজী নজরুল ইসলাম)

প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি
খাসা তোর চ্যাঁচানি!
শুনে শুনে আনমন
নাচে মোর প্রাণমন
মাজাগলা চাঁচাসুর
আহ্লাদে ভরপুর!
(প্যাঁচা আর প্যাঁচানি,/সুকুমার রায়)
কিংবা

মাসি গো মাসি,পাচ্ছে হাসি
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম
হাতির মাথায় ব্যাঙের ছাতা
কাগের মাথায় বগের ডিম(দাঁড়ে দাঁড়ে দ্রুম, সুকুমার রায়)
অথবা
(যদি)
কুমড়োপটাশ নাচে-
খবরদার এসো না কেউ আস্তাবলের কাছে;
চাইবে নাকো ডাইনে বায়ে, চাইবে নাকো পাছে;
চার পা তুলে থাকবে ঝুলে হট্রমূলার গাছে!(কুমড়োপটাশ, সুকুমার রায়)

৪. আমরা রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমার রায়ের শিশুতোষ ছড়া কবিতাগুলো পড়ে এমত সিদ্বান্তে পৌঁছাতে পারি, তাঁরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র। তাঁদের কাব্যভাষা ও উপস্থাপনার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। মনে হয়েছে, রবীন্দ্রনাথে যা নেই তা রয়েছে সুকুমার রায়ে, আবার সুকুমার রায়ের অপূর্ণতায় এসেছেন কাজী নজরুল। তিনজনের বিচিত্র ভুবনে মিশুতোষ ছড়া-কবিতার তিন ধরনের স্বাদ পাই যদিও কখনও কখনও মনে হয়েছে তাঁদের মধ্যে বিষয়গত সাজুয্য রয়েছে। তথাপি আমরা বলবো, রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমার রায় তাঁদের ছড়ার ভুবনে একান্ত স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম।

উ:ঝযধযধফধঃযুঁষভরয়ধৎ.ফড়প


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×