(ছবি- গুগুল)
একটা সময় হিজড়াদের কোনো পরিচয় ছিল না। ছিল না নাগরিকত্বের পরিচয়। যে কারণে তাদের ছিল না ভোটাধিকারও। ফলে তারা নানা উপায়ে জীবীকার সন্ধান করতো। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ-গান করা ছিল তাদের আয়ের একটি অবলম্বন। আরেকটি অবলম্বন ছিল হাটে-বাজারে বিভিন্ন দোকানীর কাছে হাত পেতে কিছু অর্থ আদায়। তা ছাড়া কোথাও কোনো শিশু জন্ম নিলেও তারা দল বেঁধে হাজির হতো টাকার জন্য। কিন্তু এর বাইরেও এক সময় তারা আবাসিক এলাকাতেও হানা দিতে থাকে। হানা দিতে থাকে বাসে ট্রেনে লঞ্চেও। বর্তমানে অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে হিজড়াদের এই চাঁদাবাজি অনেকটা অত্যাচারের পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিদিনই মানুষ নানা ভাবে তাদের হাতে হেনস্থা হচ্ছে।
সরকার বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদের নিবন্ধন করেছেন। তারা পেয়েছে নাগরিক অধিকার সহ ভোটাধিকারও। এখন তাদের এসব ভিক্ষাবৃত্তি বা চাঁদাবাজি থেকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। তারা চাকরি, লেখাপড়া করে তাদের জীবন যাপনের মান উন্নত করতে পারে। কিন্তু তাদের মাঝে এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। ভারতে তাদের কর্মমুখী করতে সরকারীভাবে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না।
যেহেতু তাদের আয়ের কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই, তাই তারা চাঁদাবাজির ওপর নির্ভর করছে। পথে ঘাটে কিছু বেদেনীকেও দেখা যায় হাতে সাপ নিয়ে লোকজনকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে। এসব কিন্তু পুলিশের চোখের সামনেই ঘটছে। কিন্তু এ নিয়ে তারাও কোনো রকম উচ্চবাচ্য করে না। আর মান—সম্মানের ভয়ে হিজড়াদের কেউ ঘাটাতে সাহস পায় না বলে, তারাও যেন দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা সত্যিই তৃতীয় লিঙ্গের নাকি স্ত্রী-সন্তান-ওয়ালা পুরুষরাই হিজড়ার বেশে এমন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে সেটাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তদন্ত করে দেখতে হবে। কেন না, হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ঘরে ঘরে জন্মায় না। প্রতি বছরই শয়ে শয়ে হিজড়া জন্ম নেয় না। কয়েক বছর আগেও তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় হাতে গোনা। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে তাদের সংখ্যা যেন হুহু করেই বেড়ে যাচ্ছে। তারা কি এদেশেরই, নাকি কর্ম করবার ভয়ে পাশের দেশ থেকেও চলে আসছে বলা মুশকিল। কারণ ভারতে হিজড়াদের চাঁদাবাজির দিন এখন আর নেই।
ইন্দোনেশিয়াতেও তাদের পুরুষ সুলভ আচরণের জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। ভারতে জোর দেয়া হচ্ছে তারা যাতে কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করে। আমাদের দেশেই বা কেন এমনটা হবে না? একজন তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষিত মানুষ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন। তেমন মানুষেরাও হিজড়াদের কর্মমুখী করতে বড় উদাহরণ হতে পারেন।
পত্রিকায় সংবাদ এসেছে, যাত্রাবাড়ীতে টাকা না পেয়ে বাচ্চার প্রতিবন্ধী মাকে বেঁধে রেখে বাচ্চাটিকে বালতির পানিতে উপুড় করে ফেলে দিয়ে হিজড়ারা চলে যায়। এটা তো প্রকাশ্যে খুন করা হয়ে গেল। তারা হিজড়া বলে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বলে কি খুন করেও পার পেয়ে যাবে? তাদের অনাচারের বিচার কি হবে না? কিছুদিন আগে ফেসবুকে একজন লিখেছিলেন, টাকা না দেওয়াতে হিজড়ারা তার ঘরের মেঝেতে পেশাব করে দিয়ে গেছিল।
আরো যে কত সংবাদ পত্রিকার পাতায় আসে না কে বলতে পারে?
এখনো সময় আছে হিজড়াদের কর্মকাণ্ড আইনি নজরদারিতে আনা হোক। তারা যেন বাসা-বাড়িতে, যান-বাহনে চাঁদাবাজি করতে না পারে, তারা যাতে কোনো একটি কর্ম করে সৎভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেদিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়াটা খুবই জরুরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০