somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন হন্তারক ও কয়েকটি ক্ষুধার্ত জন্তু

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(ফোটো- গুগুল)

ঘরে ফিরেই হাতের পার্সটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে পিলু। আর তা দেখে অবাক হয়ে তাকায় সামসুদ্দিন। পিলুকে খানিকটা বুঝতে চেষ্টা করে যেন। তারপর সতর্ক কণ্ঠে বলে, খবর কি ভালো না? মেজাজটা কেমন খটমটে লাগছে।

- আর মেজাজ!

বলেই বিছানার ওপর কেমন ধপাস করে বসে পড়ে সে। জামার গলাটা এক হাতে ফাঁক করে ধরে অন্য হাতে পেটের কাছটা উঁচু করে ধরে বলল, ফ্যানটা ছেড়ে দাও তো!

- এত গরম লেগে গেল? ফ্যান তো চলছে!

সামসুদ্দিন বিছানা থেকে নেমে পড়ে।

- তাহলে স্পিডটা বাড়িয়ে দাও!

- তাও আছে।

বলতে বলতে সামসুদ্দিন ফ্রিজ খুলে একটি পানির বোতল বের করে এনে পিলুর দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে, আজ গরমটা বেশি। ঠাণ্ডা পানি খাও!

পানির বোতল হাতে নিয়ে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়ে চোখ বোজে পিলু। তার মনে হচ্ছিল গায়ের যাবতীয় শক্তির বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই। এখনই যদি ঘুমিয়ে পড়তে পারতো, তাহলে হয়তো আরাম পেতো খানিকটা।

সামসুদ্দিন তেমনিই দাঁড়িয়ে থাকে।

পিলু জানে এখন তার সামনে থেকে এক পাও নড়বে না লোকটা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুটো চোখ দিয়ে গিলবে। চাটবে। পারলে এখনই একবার দেহের খিদেটা মিটিয়ে নেবার ছুতো বের করে ফেলতো। কিন্তু মেজাজের কারণে সুবিধাটা নিতে পারছে না। মনেমনে সামসুদ্দিনকে খুব বিশ্রী একটা গাল দেয় পিলু। তারপর শুয়ে শুয়েই বোতলের মুখ খুলে ছোট ছোট চুমুকে পানি খেয়ে বোতলের মুখ লাগিয়ে এক হাতে বোতলটা ধরে রাখে।

সামসুদ্দিন পিলুর হাত থেকে বোতলটা নিয়ে আবার ফ্রিজে রেখে আসে। তারপর পাশে বসে পিলুর মুখের দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে থাকে। ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও পিলু একই ভাবে চুপচাপ বিছানায় পড়ে থাকে।

পিলু হঠাৎ জিজ্ঞেস করে, ভাত রান্না করছিলা?

- সেই কখন!

কথা বলতে পেরে সামসুদ্দিন যেন প্রাণ ফিরে পায়। হড়বড় করে বলতে থাকে, সন্ধ্যার আগেই রান্না কইরা ফেলছি! এখনই খাইয়া ফেলবা নাকি? তরকারি আর ডাইলটা চুলায় বসাইয়া দিমু?

- এখন কয়টা বাজে যে ভাত খাইয়া ফেলমু?

বিছানায় ফেলেরাখা পিলুর মোবাইলটা টিপে সামসুদ্দিন বলে, পোণে দশটা। রাইত তো অনেক হইছে!

- আজকে আর খাওয়া সম্ভব না। তুমি খাইলে খাইয়া ফেলতে পার।

- খাইলে তো খাওন যায়। কিন্তু তোমার লগে তো এখনো কোনো কথাই হইল না।

- আর কী কথা বাকি রইলো?

বলতে বলতে পিলু শোয়া থেকে উঠে বসে।

- সবই তো রইল!

সামসুদ্দিন কেমন ব্যথিত চোখে তাকিয়ে থাকে পিলুর মুখের দিকে। তারপর আবার বলে, কিছুক্ষণ বাদে রাজুর ফ্লাইট। তোমার কাজ কদ্দুর কী করলা কিছুই তো জানলাম না!

- সকালে শুইনো। এখন গায়ে একটু পানি ঢাইলা আসি। ঘুমে চোখ দুইটা জ্বলতাছে।

বলতে বলতে পিলু দু চার পদক্ষেপে বাথরুমের দরজার দিকে পৌঁছে যায়।

- আইজগা দেখি আমারে তোমার চোখেই লাগতাছে না!

- আজাইরা কথা বইলো না তো! আমার এইসব প্যাঁচাল ভালো লাগতেছে না!

বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় পিলু এবং সঙ্গে সঙ্গেই শাওয়ারের শব্দ শুনতে পায় সামসুদ্দিন।

বাথরুমের দিকে একটি সতর্ক কান রেখে সামসুদ্দিন পিলুর পার্সটা খুলে দেখে। প্রায় শূন্য। দশ-বিশ টাকার কয়েকটি নোট আর পাঁচ টাকার দুটো কয়েন আছে মাত্র। হতাশ হয়ে সে পার্সটা বন্ধ করে একই ভাবে ফেলে রেখে বিছানা থেকে ফোনটা তুলে নেয় আবার। সপ্তাহ খানেক হলো ফোনটা ব্যবহার করছে পিলু। আজকাল অনেকের হাতেই এসব ফোন দেখতে পাওয়া যায়। এক সময়কার হাত-ঘড়ির মতোই ফোন সেটও মামুলী হয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে। কীসে যে মানুষের স্ট্যাটাস বোঝা যাবে তাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

হঠাৎ করেই যেন শাওয়ার সেরে বেরিয়ে আসে পিলু। ভেজা গায়ে তোয়ালে জড়ানো। পেছন থেকে তাকে আসতে দেখে খানিকটা থতমত হয়ে ঘাড় ফেরায় সামসুদ্দিন। তার এমন স্বভাবের কথা জানে বলেই হয়তো পিলু চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, পার্সে কিছু নাই। ফোনেও নাই। না টেক্সট না নাম্বার। যাবার সময় রাজু বলছে মাস খানেক পরে ফিরবে।

মনেমনে হয়তো রেগে ওঠে সামসুদ্দিন। বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে। তবে পিলু যেন হারামজাদি শব্দটা পরিষ্কার শুনতে পেলো। আর তখনই বলে উঠলো, এইসব খবিসপনা ছাড়বা কবে তুমি? মানুষ তো নিজেরে বদলাইতেও চেষ্টা করে!

-দেখ, আমারে চেতাইবা না বলতাছি!

বলতে বলতে সামসুদ্দিন মারমুখী হয়ে পিলুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবার বলে, গায়ে গতরে তোমার চর্বি হইয়া গেছে? রাস্তা থাইকা উঠাইয়া আনছি তোমারে। নাইলে এতদিনে রেল ইস্টিশনে এইডসের রুগী হইয়া পইড়া থাকতে হইত।

- দেখ, এক খোঁটা সারাজীবন দিবা না। এমন হইত তোমার কাছে ভালো আছি। দুইটা ডাইল-ভাত শান্তিতে খাইতে পারতাছি, তাইলে তোমার ওইসব হুঙ্কার মাইনা নিতে আমার আপত্তি ছিল না। এমন ভাব করতাছে যেন আমারে রাজরানী কইরা রাখছে। ছাল-চামড়া নাই আবার কুত্তার নাম বাঘা!

- আমারে কুত্তা কইলি? হারামজাদি! ল্যাংটা আছিলি, সেই তরে হাজার টাকার কাপড় পিন্দাইলাম এই কথা শুনতে? তর চৈদ্দগুষ্টি যা চোখে দেখে নাই, সেইসব তরে চিনাইলাম এই কথা শুনতে?

বলতে বলতে সামসুদ্দিন পিলুর চুল মুঠো করে ধরে। তারপর প্রলাপ বকার মতো বলতে থাকে, বারোভাতারী বেটি, আমার টাকায় মৌজ-ফুর্তি কইরা বেড়াও, নাঙ নিয়া হোটেলে-মোটেলে থাকো আমার টাকায় আর তোমার ডাইল-ভাত জুটে না এই কথা আমারে বিশ্বাস করতে হইবো? ঠিক কইরা বল, রাজু তরে কত টাকা দিয়া গেছে?

পিলুর চুলে টান পড়লে সে উফ মাগো! বলে ডুকরে ওঠে। তারপর ঝটকা দিয়ে চুল ছাড়াতে না পেরে বলে ওঠে, হারামজাদা চুল ছাড় বলতাছি! নাইলে তোর খবর কইরা দিমু। তরে একেবারে জানে শ্যাষ কইরা দিমু!

- কী কইলি?

বলেই, পিলুর গালে একটি চড় কষায় সামসুদ্দিন। তারপর আবার বলে, আমারে জানে শেষ কইরা দিবি? বলেই আবার চড় কষায়। তারপর আবার।

পিলু হাঁটু গেঁড়ে মেঝেতে বসে পড়ে। শরীর থেকে তোয়ালের আবরণ খসে পড়ে। সামসুদ্দিনের হাত থেকে চুলের গোছা মুক্ত হতেই সে নিজের গালে হাত বুলাতে বুলাতে সামসুদ্দিনের দিকে মাথা তুলে তাকায়। ক্রোধে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে লোকটা। উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছে। তখনই মনেমনে কর্তব্য স্থির করে ফেলে। হঠাৎ হিংস্র বাঘিনীর মতো লাফিয়ে উঠে সামসুদ্দিনের গলা আঁকড়ে ধরে। আকস্মিক আক্রমণে তাল সামলাতে না পেরে পেছনের দিকে চিত হয়ে পড়ে যায় লোকটা। তার আগে মাথাটা প্রচণ্ড ঠুকে যায় খাটের বাজুর শক্ত কাঠের সঙ্গে।

উন্মত্ত পিলুর চোখে কিছুই ধরা পড়ে না। ধীরে প্রায় নিস্তেজ হতে থাকা সামসুদ্দিনের দিকেও হয়তো তার চোখ পড়ে না। তার লক্ষ্য লোকটার গলনালি। প্রবল আক্রোশে বাঘিনী যেমন তার দাঁতে কামড়ে ধরে শিকারের গলা, পিলুও কামড়ে ধরে তেমন। কিন্তু দুর্বল শিকার সবল শিকারির হাত থেকে মুক্ত করতে পারে না নিজেকে।

মুখের ভেতর গরম আর নোনতা স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রী আর বোটকা একটি গন্ধে যেন হুঁশ ফিরে আসে পিলুর। সামসুদ্দিনকে ছেড়ে উঠতেই দেখতে পায় তার নিথর দেহ। গলার কাছে বড়সড় একটি ক্ষত। হঠাৎ কেমন যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো মনে হয় নিজেকে। এখন ইচ্ছে করলেই যেন সে উড়তে পারে। জানালা গলে বের হয়ে যেতে পারবে ফুড়ুৎ করে।

মুখের ভেতরকার নোনতা স্বাদ তেমন একটা মন্দ লাগে না। জিভ দিয়ে চেটে চেটে রক্তের নোনা স্বাদ নেয় সে। একবার ইচ্ছে হয় সামসুদ্দিনের গলার ক্ষত থেকে চুইয়ে পড়া রক্তগুলো চুমুকে চুমুকে পান করে নেয়। মুখ ভরে সেই রক্ত দিয়ে কুলকুচা করে। কিন্তু তখনই নড়েচড়ে ওঠে সামসুদ্দিন। বার দুয়েক উঠতে চেষ্টা করেও ফের মেঝেতে পড়ে যায় সামসুদ্দিন।

ভয় পেয়ে সরে যায় পিলু। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। সরু একটি রক্তের ধারা আস্তে ধীরে গড়াতে গড়াতে যাচ্ছে দরজার দিকে। সেই ধারাটাকে ঠেকাতেই যেন সে মেঝেতে পড়ে থাকা তোয়ালেটা তুলে এনে রক্তধারাটার ওপর ফেলে দেয়। তারপর বিছানা থেকে চাদরটা তুলে নিথর সামসুদ্দিনের গলার ওপর ছুঁড়ে দেয়। তারপর কী মনে করে উঠে দাঁড়ায়। ঘরের দেয়ালের সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে পুরোটা ঘর ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। তখনই রক্তের আরেকটি ধারা তার চোখে পড়ে। লাফিয়ে গিয়ে বিছানা থেকে কাঁথাটা নিয়ে সেই রক্তস্রোত ঠেকায়। কাঁথাটা দিয়ে রক্তগুলো মুছতে চেষ্টা করে। হঠাৎ আয়নার দিকে চোখ পড়লে নিজের শরীরের অবস্থা দেখতে পেয়ে অস্বস্তি বোধ করলেও থামে না। একবার চেষ্টা করে সামসুদ্দিনের দেহটাকে টেনে সরাতে। কিন্তু শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে বাথরুমে ঢুকে পড়ে।

শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে আপাদমস্তক ভিজতে থাকে। ঘষে ঘষে নিজেকে পরিষ্কার করে। সাবান মাখিয়ে কয়েকবার নিজেকে পরিষ্কার করে। একটি সূতির শাড়ি দিয়ে গা আর মাথা মোছে। কী পরা যায় ভাবতে ভাবতে ওয়ারড্রোব খুলে প্রথমেই একটা ব্রা পরে নেয়। কিন্তু ভেবে ঠিক করতে পারে না কোন পোশাক পরলে নিরাপদ আর স্বচ্ছন্দ বোধ করবে।

একটা সময় ভোরবেলা জগিঙের সময় ধনাঢ্য কাউকে ফাঁদে ফেলা যায় কিনা সে আশায় টি-শার্ট, ট্রাউজার আর কেডস কিনে দিয়েছিল সামসুদ্দিন। সেবার পরের জন্য ফাঁদ পাতলেও একই ফাঁদে পড়ে নিজেই ডুবতে বসেছিল পিলু। একদিনের নোটিসে এক মাসে আগাম ভাড়া পরিশোধ করে আর ভাড়া ঘর ছেড়ে দিয়ে নতুন এলাকায় চলে এসেছিল তারা। মাঝখানে বছর দুয়েক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজও করেছে। কিন্তু অর্থ আর বিত্ত লোভী সামসুদ্দিন বড় কোনো দাও মারবার আশায় ফের পথে নামিয়েছিল পিলুকে।

চাকরিটা ছোট হলেও ছাড়তে চাচ্ছিল না পিলু। সকাল-সন্ধ্যা একটা নিয়মের মধ্যে চলতে আরম্ভ করেছিল। ভালোবাসতে আরম্ভ করেছিল জীবনটাকে। সেই সঙ্গে সম্পর্কটা অস্থায়ী জেনেও, স্বামী-স্ত্রী না হয়েও সামসুদ্দিনের সঙ্গে খানিকটা মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিল। গুছিয়ে নিতে শুরু করেছিল তাদের অদ্ভুত সংসারটাকে। কিন্তু সামসুদ্দিন সেটা হতে দিল না। চাকরি থেকে ছাড়িয়ে তাকে লেলিয়ে দিয়েছিল রাজুর পেছনে। বলেছিল, টাকা-পয়সা যা হাতানো যায় তাই লাভ। আর পটিয়ে-পাটিয়ে যদি ছোট মতো একটা ফ্ল্যাটও বাগানো যায়, তাহলে বাকি জীবনটা মোটামুটি ডালভাত খেয়ে হলেও কাটিয়ে দিতে পারবে।

সামসুদ্দিনের কথায় চরমভাবে হতাশ হয়েছিল পিলু। মনে হয়েছিল ছোটলোকের আশা বা স্বপ্ন খুব বড় কোনো সীমা অতিক্রম করতে পারে না। তার মন যেমন সংকীর্ণ, স্বপ্ন দেখবার পরিধিটাও একই রকম সংকীর্ণ।

রাজুকে ঠিকমতো কাবু করতে কয়েক সেট খুব ভালো পোশাক কিনে দিয়েছিল সামসুদ্দিন। নতুন পোশাক সব একটি ছোট ট্রাভেল ব্যাগে ভরে নিয়ে বাকি সব পোশাক বের করে সামসুদ্দিনের ওপর ফেলতে থাকে। এমন কি জাজিমটা টেনেও তার ওপর ফেলে দেয়। তারপর পুরোটা ঘরে একবার চোখ বুলায়। হয়তো শেষবারের মতো।

একসময় আস্তে-ধীরে একপ্রস্ত নতুন পোশাক পরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ায়। মুখে, গলায় পাউডার লাগায়। দু চোখে কাজল লাগায়। গাঢ় করে দু ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক লাগায়। পাতলা ওড়নাটার একপ্রান্ত মাথায় একটি প্যাঁচ দিয়ে বাকি অংশটা গায়ে জড়িয়ে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফের নিজের প্রতিবিম্ব দেখে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবে। তখনই তার মনে পড়ে বাথরুমে কমোডের লো-ডাউনের পেছনে কিছু কিছু করে রাজুর কাছ থেকে পাওয়া লুকানো টাকাগুলোর কথা।

আড়াই লাখের চেয়ে কিছুটা বেশি টাকা হয়েছে। অদৃষ্টকে ধন্যবাদ জানায় পিলু। আবেগের বশে সামসুদ্দিনের কাছে বলে ফেলেনি টাকাগুলোর কথা। নয়তো আজকের মতো দুঃসময়ে কী যে করবে তা ভেবেই হয়তো আরো দিশেহারা হয়ে যেতো।

রাত খুব বেশি হয়নি। ফোনের ডিসপ্লেতে রাত মাত্র দেড়টা। তারপরও আশপাশের ফ্ল্যাটগুলোর বেশিরভাগ জানালাই অন্ধকার। ঘরে আর কিছু আছে কিনা ভাবতে ভাবতে তার চোখে পড়ে দেয়ালের গায়ে ঝুলানো তাদের যুগল ছবিটার দিকে। এ ঘরে কোনো ছবি রেখে যাওয়া চলবে না। অবশ্য নিজ উদ্যোগে সামসুদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ অতটা মাথা ঘামাবে না। টাকা ছাড়া পুলিশের পা চলে না। হাত চলে না। এমন কি মস্তিষ্কও কাজ করে না। মৃত সামসুদ্দিনের হয়ে থানায় টাকা ঢালতে যাবে কে? তা ছাড়া লোকটার আছেই বা কী? ছিলোই বা কে? তার সম্পর্কে, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয়ে কিছুই জানে না পিলু। কখনো জানতেও ইচ্ছে হয়নি। তবে, এ কথা নিশ্চিত জানতো সে যে, গাঁজায় দম দিতে দিতে একদিন নিজেই ফুরিয়ে যাবে। তখন অপার স্বাধীনতার মুক্ত আকাশে ডানা মেলবে, এ অপেক্ষাতেই ছিল সে। কিন্তু সুযোগটা যখন আগেই চলে এলো, তাহলে অযথা সময় নষ্ট করতে চায় না সে।

চাবিটা দরজার কি-হোলে ঢুকিয়ে দিয়ে লক না করেই কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে সিঁড়ির দিকে আগায় সে। রাত একটা বেজে গেলে লিফটের পাওয়ার বন্ধ করে মেইন গেটে তালা লাগিয়ে তাড়ি গিলে শুয়ে পড়ে কেয়ারটেকার খোকন। তখন পুরো বিল্ডিং ভেঙে পড়লেও তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না হয়তো।

সিঁড়িতে যাতে কোনো রকম শব্দ না হয় আগেই জুতো জোড়া খুলে হাতে নিয়ে নিয়েছে সে। এখন তার ভাবনা হলো মেইন গেট বন্ধ। সেদিক দিয়ে বের হবার কোনো উপায় নেই। তবে, বেজমেন্টে একটা সুরঙ্গের মতো ছোট্ট গেট আছে। যেখান দিয়ে সুইপার আর ড্রাইভারদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া করে। পথটা অবশ্য সামসুদ্দিনই তাকে দেখিয়ে দিয়েছিল।

শহরের উঁচু উঁচু বহুতল ভবনগুলোর বেশিরভাগ মালিকেরই একটা অন্ধকার অতীত আবছা মতন হলেও থাকে। এ ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাদের অবস্থাও প্রায় অন্ধকার ঘেঁষা। পাঁচ তলার একটি ইউনিটে প্রায়ই পুলিশ রেড হতো। একবার তো তের তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে বেশ কজন শিশু সহ মালিককে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

বেজমেন্টে নামতে নামতে তার ঘাম ছুটে যায়। পিঠের দিকটা ভেজা ভেজা মনে হচ্ছিল। এখানকার অন্ধকারটা বেশ গাঢ়। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে যেমন চারপাশে একটা ঘন অন্ধকার লাফিয়ে নামে, এমন একটা অন্ধকার চারপাশে। দিক ঠাওর করতে পারে না সে। হাতের মোবাইলটার ডিসপ্লে অন করতেই ভালো রকম আলো পাওয়া যায়। ছোট্ট গেটটা চোখে পড়তেই লাফিয়ে সেদিকটায় এগিয়ে যায় পিলু। হুড়কোটা খুলে গেটের পাল্লা ধরে টান দিতেই সেটা মৃদু ক্যাঁচ শব্দে প্রতিবাদ করে যেন। আরো সতর্কভাবে গেট খোলে সে। তারপর বাইরে বের হয়ে আসে। গেটের পাল্লাটা বাইরে থেকে টেনে আবার বন্ধ করে দিয়ে সরু পথটা দিয়ে আগাতে থাকে। কিন্তু পথটার শেষ মাথায় একটি কুকুর কয়েকটি ছানাপোনা নিয়ে শুয়ে আছে। আলো দেখতে পেয়েই গলা দিয়ে মৃদু একটা গরগর শব্দ করতে থাকে। এমনিতেই কুকুর খুব ভয় পেতো পিলু। কিন্তু এখন মোটেও ভয় করছিল না তার। মা কুকুরটাকে কোনো রকম বিরক্ত না করেই সে বাইরের খোলা হাওয়ায় এসে দাঁড়ায়।

তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে আবাসিক এলাকা ছাড়িয়ে রাস্তায় উঠে আসে। রাতের শীতল বাতাসে তার যাবতীয় ভয় আর ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই দূর হয়ে যায়।

মোটামুটি ব্যস্ত রাস্তা। রিকশা, গাড়ি, ট্রাক, সিএনজি অটো রিকশা সবই চলছিল। তবে দিনের বেলার চেয়ে অনেক কম। হঠাৎ একটি সাদা মাইক্রো বাস তার সামনে দাঁড়াতেই কিছুটা ঘাবড়ে যায় সে। এমন গাড়িতে করেই তারা আসে আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মানুষকে তুলে নিয়ে যায়। কারো কারো হদিস পাওয়া গেলেও বেশিভাগের কোনো খবর থাকে না। পেছন দিকের খোলা জানালা দিয়ে একটি মুখ বের হয়ে বলে, রেট কি বেশি? আমরা তিনজন আছি।

এমন একটা ব্যাপার ঘটতে পারে তা আগেই জানা ছিল। এমন কি তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে কেউ কেউ। আবার পুলিশের জেরার মুখেও পড়তে হতে পারে। তাই রাগ বা বিরক্ত না হয়েই বলল, কয়েকদিন আর সম্ভব না বস। কিছুক্ষণ আগেই ব্লিডিং শুরু হয়েছে।

গাড়িটা চলে যেতেই তার ভয়টা ফিরে আসে যেন। কয়েকজন নেমে এসে মুখ চাপা দিয়ে ধরলে কী বা করতে পারতো সে?

একটি সিএনজি অটো রিকশা এসে থামতেই সে প্রথমে চালকের দিকে তাকায়। মধ্যবয়সী। মুখের খোঁচাখোঁচা দাড়ি-গোঁফ স্ট্রিট লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

- কই যাইবেন?

লোকটি নিজেই জানতে চায়।

কিছু না ভেবেই পিলু বলল, গাবতলি।

- উঠেন।

- কত দিতে হবে?

- মিটারে না চুক্তিতে?

- কোনটা ভালো?

- চুক্তিতে দুইজনের লাভ। মিটারে আমার লাভ।

- কত দিতে হবে?

- সাফ তিনশ।

- আচ্ছা।

বলেই, যাত্রীর আসনে উঠে পড়ে পিলু।

চালক নিজেই দুপাশের দরজাগুলো আটকে দিয়ে বলে, রাইতে রাস্তাঘাট নিরাপদ না। কয়েকজন মিল্লা গাড়ি আটকাইলেও ডরাইবেন না।
তারপর নিজের দিকের দরজাটা ভেতর দিয়ে আটকে দিয়ে স্টার্ট দেয়।

অটোরিকশা চলতে থাকলে একটু একটু ভালো লাগতে থাকে পিলুর। যদিও বিপদ এখনো কাটেনি, তবু তার মনে হয় তেমন বড় কোনো বিপদ আর নেই।

সেই যে প্রথমবার এক অঁজপাড়াগাঁ থেকে চাচাতো বোন মাহফুজার হাত ধরে এসে নেমেছিল, ফিরতি পথে আর এদিকে আসা হয়নি। কত বছর আগে সে এসেছিল কোনো সন বা তারিখ মনে রাখেনি সে। মনে রাখবার মতো পরিস্থিতি সেদিন ছিল না। শুধু মনে আছে দুপুরের দিকে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই টের পেয়েছিল দু ঊরুর মাঝে প্যাকপ্যাকে তরল কিছু। হাত দিয়ে রক্তের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল। মাহফুজার দিকে ফ্যাকাসে মুখে তাকিয়ে বলেছিল, অ বুজি, আমার ওহান থেনে রক্ত বারাচ্ছে ক্যান? আমি কি মারা যাচ্ছি?

কণ্ঠস্বরে কৌতুক মাখিয়ে মাহফুজা বলেছিল, আগে ইরাম হয়নি?

- না।

- ও।

- এহন আমার কী হবে?

বলেই ভ্যা করে কেঁদে উঠেছিল পিলু।

মাহফুজা তাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, মাগি, কান্নার হলোডা কি, অ্যাঁ? মেয়েগের সবারই ইরাম হয়।

- আমি বাঁচবো তো?

- আমি কি মইরে গেছি? আমাগের মা চাচি খালারা কি সব মইরে গেছে? আজ থেনে তুই সোমত্ত হইয়ে গেলি। ব্যাটাছৌলগুলার কাছ থেনে দূরে থাকবি কলাম!

তারপর ব্যাগ থেকে একটি ছোট্ট তুলোর বালিশের মতো কী একটা হাতে দিয়ে টানতে টানতে মাহফুজা তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল পাবলিক টয়লেট লেখা একটি খুপরি ঘরের ভেতর। তারপর নিজের হাতেই সব করে দিয়েছিল। আর সেদিন থেকেই যেন তার বয়স বেড়ে গিয়েছিল দ্বিগুণ আর পরিচিত হয়ে উঠেছিল প্রকৃতির আরেকটি অমোঘ নিয়মের সঙ্গে।

অনেকগুলো বছর মাহফুজার সঙ্গে একই ছাদের নিচে ছিল সে। বিয়ে করে মেয়েটা স্বামীর সঙ্গে চলে গিয়েছিল গ্রামে। জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেছিল মুরগির খামার। তারপরও বেশ কিছুকাল সম্পর্ক ছিল ওর সঙ্গে। ফোনে যোগাযোগ হতো। কিন্তু সামসুদ্দিনের পাল্লায় পড়ে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে তাকে। যোগাযোগটা ধরে রাখতে পারেনি আর। এক সময় মায়ের মমতা দিয়ে আগলে রাখা মাহফুজা এতদিন পর তাকে দেখতে পেলে নিশ্চয় খুশি হবে।

যশোর-বেনাপোল লেখা একটি কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতেই দুটো ষণ্ডামার্কা চেহারার লোক দুপাশ থেকে তাকে চেপে ধরবে এমন ভঙ্গিতে বলে, আপা কই যাবেন, যশোর-বেনাপোল-কুষ্টিয়া-বগুড়া? আর বিশ মিনিট পরেই বাস ছাড়বে।

মাহফুজার শ্বশুর বাড়ির নামটা মনে করতে চেষ্টা করে সে। পারলে একবার নিজের বাপের ভিটেটুকুও মাড়িয়ে আসতে গ্রামে ঢুঁ মারবে।

টিকেট কেটে গাড়িতে উঠে বসতেই নিজেকে আরো নির্ভার আর নিরাপদ মনে হচ্ছিল পিলুর। এখন বাসটা ছেড়ে দিলেই নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত বলে ধরে নিতে পারবে। হঠাৎ বাসের জানালায় সামসুদ্দিনের মতোই কাউকে দেখে আঁতকে ওঠে। তারপর নিজেকে সাহস দিতেই যেন সে বিড়বিড় করে বলে, ব্যাটা এহানে আসপি কোত্থেনে?

তবু তার সংশয় কাটে না। হাতের মোবাইলটার ডিসপ্লে অন করে সময় দেখে। বিশ মিনিট হতে আরো এগারো মিনিট বাকি।

গলাটা কেমন শুকিয়ে গেছে মনে হয়। পানি খেতে পারলে ভালো হতো। বাসের জানালা দিয়ে টার্মিনালের দোকানগুলোর দিকে তাকায় সে। নৈশ যাত্রীদের অনেকেই এখানে ওখানে ঘুরাঘুরি করছে। তাদেরই কয়েকজন প্রায় হুটোপুটি করার মতো ব্যস্ততা নিয়ে গাড়িতে ওঠে। বিভিন্ন আসনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়ে কেউ কেউ। কেউ বা তাদের হাতের ছোটখাটো ব্যাগগুলো উপরের ক্যারিয়ারে ঠেলে ঠেলে ঢুকাতে চেষ্টা করছে। পাশে একজন ঘুরে ঘুরে তাদের কাজে টুকটাক সাহায্যও করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল লোকটি গাড়িরই কেউ হবে। তাকে উদ্দেশ্য করে পিলু বলল, এই যে ভাই, আপনি কি গাড়ির কেউ?

- হ্যাঁ। সুপারভাইজার। কোনো প্রয়োজনে আমাকে বলবেন।

- খাওয়ার পানি পাওয়া যাবে?

- হ্যাঁ। আমরা তো আপনাদের প্রত্যেককে এক বোতল করে পানি দেবো।

- এখন কি আমাকে একটা দিতে পারেন?

- আচ্ছা, এখনি আসছি!

বলে, সুপারভাইজার লোকটা গাড়ির সামনে গিয়ে আধা লিটার একটি পানি ভর্তি বোতল নিয়ে আসে।

বোতলটা হাতে নিয়ে পিলু তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকনা খুলে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি খায়। কিন্তু তারপরও যেন তৃষ্ণা মেটে না।

হঠাৎ বাসটা মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠতেই ইঞ্জিনের হালকা গর্জন শুনতে পায় সে। আর তখনই আরো বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ যাত্রী বাসে ওঠে। মোটামুটি পুরো বাসটিই ভর্তি হয়ে যায়।

গাড়িটা নড়ে চড়ে উঠে চলতে আরম্ভ করে। ঠিক তখনই এক সুদর্শন তরুণ বয়সের যাত্রী হাতে একটি কালো ব্যাগ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওঠে। খানিকটা হেলেদুলে বাসের দোলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে এসে পিলুর আসনের পাশে দাঁড়িয়ে বলে, ম্যাডাম, জানালার পাশে আমার সিট। বসতে পারবো?

- হ্যাঁ হ্যাঁ। অবশ্যই!

বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে জায়গা করে দেয় পিলু।

লোকটি নিজের আসনে বসে একবার পিলুর দিকে তাকিয়ে বলে, থ্যাংকস। বসে পড়েন, বসে পড়েন!

- হ্যাঁ হ্যাঁ!

বলতে বলতে পিলু নিজের আসনে বসে পড়লেও কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করে। মন থেকে সেটা ঝেড়ে ফেলতেই যেন লোকটির দিকে তাকিয়ে একটু কাষ্ঠ হাসি হাসে।

জবাবেই হয়তো লোকটিও হাসে। তারপর বলে, আমি মামুন। মামুন তালুকদার। কলকাতা বেড়াতে যাচ্ছি। বেনাপোল হয়ে।

- ও আচ্ছা। আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। বহুদিন পর। যশোর।

- তাহলে তো ভালোই হলো। বেশ কিছুটা পথ একসঙ্গে যাওয়া যাবে।

নিজের বাচালতার কথা যেন মনে পড়লো। এমন ভাবে বললো, আমি একটু বেশি বলছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন না তো?

- না না, বাস জার্নি এমনিতেই বোরিং। চুপচাপ থাকলে ঘুম পায় ভীষণ। আবার নিশ্চিন্তে ঘুমানোও যায় না।

- অসুবিধা নেই। ঘুমোতে চাইলে ঘুমান। আমি মোটেও বিরক্ত করবো না। সঙ্গে আমার নোটবুক আছে। সময় কেটে যাবে।

মনে মনে খুশি হয়ে ওঠে পিলু। কিছুক্ষণ আগের অস্বস্তি দূর হয়ে যায়। তার হঠাৎ মনে হয় লোকটা বিবাহিত নাকি অবিবাহিত? অবিবাহিত হলে কি প্রেমিকা আছে? অবশ্য অতটা বয়সে নারী বা পুরুষের প্রেমিক অথবা প্রেমিকা নেই ভাবনাটাই কেমন অস্বাভাবিক মনে হয়। লোকটা যে তাকে অপছন্দ করছে না তা বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অবস্থা দেখে টাকা-পয়সাও ভালোই আছে বলতে হবে। তার ইচ্ছে হয় লোকটার হাঁড়ির সব খবর টেনে বের করে আনতে। তাই বলে, না না, তা বলছেন কেন? আমি মোটেও বিরক্ত হচ্ছি না। আমি পিলু। একটা এনজিওতে কাজ করতাম। কিন্তু বসের নজরটা কিছুদিন ধরে ভালো লাগছিল না বলে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। অনেকদিন পর ন-টা পাঁচটার বন্ধন নেই বলে গ্রামটা দেখতে মনটা খুব হাহাকার করছিল।

- আমরা তো আজকাল গ্রামের কথা ভুলেই যাচ্ছি। তো কে কে আছে গ্রামে? বাবা, মা...।

- নাহ, তেমন কেউ নেই। জগতে খুবই একা আমি।

বিষণ্ণ হবার ভান করে পিলু। তখনই বাসটা হঠাৎ বাঁক নেয়। মামুনের দিকে হেলে পড়লেও নিজেকে সামলে নেয় সে।

- ভ্যারি স্যাড! আসলে কোনো কোনো মানুষ অনেক কারণেই একা হয়ে যায়। অবশ্য আমার বাবা-মা দুজনেই বেঁচে আছেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন। শহরে আসতে চান না। বলেন, আমি এখনও বিয়ে করিনি। কে তাদের যত্ন করবে? তাই জোর করি না। মাসে একবার গ্রামে যাই। তাদের দেখে আসি। তা ছাড়া ব্যবসার কাজে এখানে ওখানে ছুটাছুটি করতে হয়। কলকাতা যাচ্ছি ব্যবসার কাজেই।

পিলু মনেমনে খুশি হয়ে ওঠে। সিঙ্গেল পুরুষ মেয়েদের ফাঁদে পড়ে যায় টপাটপ। এমন একটা কিছুই যেন সে খুঁজছিল। হঠাৎ সিটে হেলান দিয়ে বলে, সারাটা দিনে পাঁচটা মিনিটের জন্যও বিশ্রাম পাইনি। আমি একটু চোখ বুজি কেমন?

- আচ্ছা ঠিক আছে।

বলতে বলতে মামুন কোলের ওপর রাখা কালো ব্যাগটা থেকে একটা নোটবুক বের করে কিছু একটা করতে থাকে। পিলু আড়চোখে একবার দেখে মামুনকে। দেখতে মন্দ না। কেবল কপালের কাছে চুলগুলো বেশ পাতলা।

মামুনের সঙ্গে আলাপ করতে করতে বিপুল এক সম্ভাবনার দরজা খোলা দেখতে পাচ্ছিল পিলু। তার সঙ্গে যদি কোনোভাবে নিজের জীবনটাকে জুড়ে নিতে পারে, তাহলে সামসুদ্দিনের শেখানো নোংরা পথ থেকে সরে আসবে। সম্ভব হলে পুরোপুরি গৃহী হয়ে যাবে। জগতে যার কেউ নেই তার জন্য একটা থিতু সংসারই স্বর্গীয়। যে স্বর্গের হাতছানি সে দেখতে পাচ্ছে তার সন্ধান কোনো কালেই পেতো না যদি সামসুদ্দিনের কালো থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারতো। আসলে সামসুদ্দিন তাকে একটা বেশ্যাই বানিয়ে ফেলেছিল। পেশাদার বেশ্যা আর তার মাঝে একটা পার্থক্য ছিল এই যে, প্রতি রাতে তাকে খদ্দের বদল করতে হতো না। তার একটি খদ্দের জুটতো খানিকটা লম্বা সময়ের জন্য। এমন জীবন কখনোই চায়নি সে। এখন যদি মামুনকে কব্জা করা যায় তো যে করেই হোক চেষ্টা করবে বাকি জীবন তাকে আঁচলে জড়িয়ে রাখতে।

ভাবতে ভাবতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারে না। কানের কাছে মামুনের কর্কশ কণ্ঠস্বরে ঘুম ভেঙে যায় তার। হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই তার কেমন দিশেহারা লাগছিল। বাসটা যে থেমে আছে তা বুঝতেই অনেকটা সময় লেগে যায় তার।

মামুন ফের বলে, এই যে, আর কতক্ষণ লাগবে আপনাদের?

পিলু ভালো করে চোখ মেলতেই বুঝতে পারে ভোর হয়ে গেছে। বাসের যাত্রী সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।

পিলুকে জেগে উঠতে দেখে মামুন বলল, এই যে, আপনি জেগে গেছেন। আমাকে একটু বের হতে দেন তো! কী হচ্ছে দেখে আসি।

পিলু উঠে দাঁড়ালেও মামুনের পিছু পিছু ব্যাগ কাঁধে বাস থেকে নেমে আসে।

নিচে নামতেই জানতে পারে বাস ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে। পরের গাড়িতে তাদের তুলে দিতে চেষ্টা করবে বলে জানায় সুপারভাইজার।

এমন একটা জায়গায় গাড়িটা থেমে আছে, যেখানে কোনো দোকানপাট তো দূরের কথা আশপাশে কোনো ঘরবাড়িও চোখে পড়ে না।

- এভাবে আর কতক্ষণ কাটাবো?

পাশ থেকে মামুন বলে, পরের গাড়িতে যে উঠতে পারবেন তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

- অল্টারনেট কোনো ব্যবস্থা করা যায় না?

বলেই ভেতরে ভেতরে বেশ চমকে ওঠে পিলু। সামসুদ্দিন আর যাই হোক, শিখিয়ে পড়িয়ে তাকে উঁচু তলার মানুষদের সঙ্গে চলবার উপযোগী করে দিয়ে গেছে। কথাটা সে অস্বীকার করবে না কোনো ভাবে।

- অল্টারনেট ব্যবস্থা অনেক আছে।

বলেই সরাসরি পিলুর চোখে চোখ রাখে মামুন।

-যেমন?

পিলু কৌতূহল চেপে রাখতে পারে না।

- আমরা পরের কোনো একটা লোকাল বাসে চড়ে পরের স্টেশনে নেমে ভালো কোনো ট্রান্সপোর্ট নিতে পারি। আবার কোনো রেন্ট-এ কারের এজেন্টের সঙ্গে কথা বলতে পারি।

- ঠিক বলেছেন। রাস্তার মাঝখানে এভাবে পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। সঙ্গে কোনো খাবারও নাই। পানিও ফুরিয়ে গেছে!

- আচ্ছা, দেখছি।

বলেই কারো সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে আরম্ভ করে মামুন। তারপর কথা শেষ করে জানায়, যাদের সঙ্গে কথা বললাম, তাদের কোনো গাড়ি ফ্রি নেই।

- তাহলে?

- বলেছে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলে জানাবে।

ঠিক তখনই একটি প্রায় ভাঙাচোরা লোকাল বাস ধুঁকতে ধুঁকতে আসে। কিন্তু অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মাঝে কোনো রকম ব্যস্ততা দেখা যায় না। কেবল একজন বুড়ো মানুষ উঠে পড়ে। সেদিকে তাকিয়ে মামুন বলে, উঠবেন নাকি?

পিলুর আগ্রহ হয় না। গাড়ির চেহারা দেখে তেমন ভরসা পায় না। এভাবে আরো তিনটি বাস তাদের সামনে এসে থামে। কিছু কিছু করে যাত্রীও তুলে নিয়ে যায়। পিলু দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু তাদের বাস ঠিক হবার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এমন কি পরের যে গাড়িতে তাদের তুলে দেবার কথা সুপারভাইজারের মুখে শুনেছিল, তেমন কোনো লক্ষণও পরিদৃষ্ট হয় না।

মামুন বলল, কী যে হবে! লোকজনের কথা বিশ্বাস করলেও আজকাল ঠকতে হয়। চারদিকে এত ঠগ-বাটপার যে, চিনে উঠবারও সুযোগ থাকে না।

মামুনের কথা শুনে ভেতরে ভেতরে খানিকটা দমে যায় পিলু। তার কোনো কথায় মামুন কিছু আঁচ করতে পারলো না তো? এ পর্যন্ত তো কত ধরনের কথাই সে বলেছে, অসাবধানে এমন কোনো কথা বলে ফেলেনি তো যাতে মামুনের মনে সন্দেহ হয়?

দূর থেকে সাদা রঙের একটি মাইক্রো-বাস আসতে দেখা যায়। থেমে থাকা বাসটির পাশে থেমে দরজাটা খুলতেই ভেতরে কিছু নারী-পুরুষ দেখা যায়। সামনের দরজা খুলে একজন লোক নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু হয়তো বলে। তখনই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একটি যুবক বাস থেকে নেমে মাইক্রোতে উঠে পড়ে।

মামুন বলল, যাবেন নাকি ওটায়? তার আগে জানতে হবে আমাদের জন্য জায়গা খালি আছে কি না কে জানে!

বলতে বলতে মামুন সেদিকেই এগিয়ে যায়। পেছন পেছন হাঁটতে থাকা পিলু শুনতে পায় মামুন বলছে, কতটা যাবেন আপনারা? আমি বেনাপোল যাবো আর আমার সঙ্গের ইনি যাবেন যশোর নিউমার্কেট পর্যন্ত।

একজন বলল, অতটা যাবে না। যশোর পর্যন্ত যেতে পারবেন।

কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো পিলু। মনেমনে ভাবে যে, মামুন না উঠলে সেও মাইক্রোতে উঠবে না। কিন্তু মামুনকে বলতে শুনলো, আগে তো যশোর যাই। সেখান থেকে বেনাপোল যাবার অনেক গাড়ি আছে।

লোকটি বললো, মাত্র দুজন উঠতে পারবেন স্যার।

মামুন মাইক্রোতে উঠবার আগে পিলুকে বলল, গেলে চলে আসেন।

কিছু না ভেবে পিলুও মাইক্রোতে উঠে পড়ে। কালো কাচের জন্য বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিলো না নারী-পুরুষ আর শিশু মিলে ভেতরে এত মানুষ। মামুনের পাশে একমাত্র শূন্য আসনটিতে বসে পিলু। গাড়ি ছেড়ে দিলে মামুনের বাহুর সঙ্গে তার বাহু লেপটে গেলে পুরো শরীর কেমন যেন শিউরে ওঠে। আর সঙ্গে সঙ্গে পাশের স্লাইডিং দরজাটা ঠেলে বন্ধ করে দিয়ে সামনের দিকে উঠে পড়ে লোকটি।

গাড়ি চলতে আরম্ভ করলে পিলু বলল, সামনে ভালো কোনো দোকান পেলে গাড়িটা থামাবেন কিন্তু!

- আচ্ছা আচ্ছা, থামাবো!

সামনে থেকে ড্রাইভার বা অন্য কেউ কথাটা বলল বুঝতে পারে না পিলু।

মামুনের পাশে বসে নতুন এক উষ্ণতায় বুঁদ হতে হতে তার মাথা থেকে কখন যে সামসুদ্দিনের ব্যাপার আর ফেলে আসা অতীতটা উধাও হয়ে গিয়েছিল বলতে পারবে না সে। নিশ্চিন্ত আর নিরুদ্বেগ ঘুমটা ভাঙতেই মামুনের কাঁধে নিজের মাথাটাকে আবিষ্কার করে ভেতরে ভেতরে পুলকিত হয়ে ওঠে পিলু। কিন্তু এমন একটা ভাব করলো যেন ভেতরে ভেতরে লজ্জায় মরে যাচ্ছে।

মামুন সেটা বুঝতে পেরে বা না বুঝেই বলে, আমি কিছু মনে করিনি।

হঠাৎ বাইরে দৃষ্টি পড়তেই পিলু দেখতে পায় বড়বড় গাছের সারির ফাঁকে কাঁচা পথে ছুটে চলেছে গাড়িটা।

- এটা আবার কোন পথ?

ভয় পেয়েই প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠে পিলু।

- শর্টকাট!

পাশ থেকে মামুন বলে ওঠে।

- এ কেমন শর্টকাট? মেইন রোডে গেলে কী হতো?

- সময় বাঁচাতেই এ পথে যাচ্ছে।

পিলু মনেমনে অবাক হয়ে দেখলো গাড়িতে তেমন কোনো যাত্রী নেই। বাস থেকে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নামা ছেলেটি আর তারা দুজন। সামনে ড্রাইভার আর তার পাশের লোকটি আছে।

- আর লোকজন কোথায় গেল?

মামুনের দিকে তাকায় পিলু।

- যার যার জায়গায় নেমে গেছে।

পিলুর কানে মামুনের কথাগুলো কেমন অচেনা আর কর্কশ শোনায়। কথাগুলোতে যেন খানিকটা বিদ্রূপও মেশানো ছিল বলে মনে হয়।

আশপাশের অবস্থা দেখে মনের ভেতর কু ডাকতে আরম্ভ করেছে পিলুর। গাড়ির ভেতরকার পরিবেশটাও কেমন যেন থম মেরে আছে। সেই সঙ্গে একটা অচেনা ভয় বা অনিশ্চয়তা ক্রমশ জেঁকে বসতে আরম্ভ করেছে তার মনের ভেতর।

একসময় গাড়ির গতি কমতে আরম্ভ করলে গাছের ঘনত্বও বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে ঝোপঝাড়। সে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক নীরবতাও। এবার সত্যি সত্যিই ভয় পেতে থাকে পিলু। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করতে থাকে প্রবল বেগে। কপালে, নাকে, ওপরকার ঠোঁটে ফুটে উঠতে থাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম।

গাড়িটা থেমে যেতেই মামুন বলে ওঠে, গাড়ি থামলো কেন?

ড্রাইভার বলল, ইঞ্জিন তেতে গেছে। রেডিয়েটারে পানি দিতে হবে। আপনারা নেমে হাত-পায়ে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে নিতে পারেন।

মামুন বলল, আসেন নেমে পড়ি। বসে থেকে থেকে আমার হাত-পায়ে যেন জং ধরে গেছে এমন লাগছে।

বাধ্য হয়ে পিলুকেও নামতে হয়। আর নেমেই তার মনে পড়ে ফোনের কথা। -আরে আমার ফোনটা? বলেই গাড়ির ভেতর উঁকি দেয়।

মামুন বলে, আপনার ফোন আমার কাছে। সুইচড অফ!

- আমার ফোন আপনার কাছে কেন?

- এই দুঃসময়ে যাতে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন।

আস্তে ধীরে সেই যুবকটি সহ ড্রাইভার আর তার সঙ্গীও নেমে আসে। চারজন চারপাশ থেকে তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। চারজনের মুখেই নানা রকম হাসি ফুটে ওঠে। তাদের চার জোড়া চোখই বলে দিচ্ছিল যেন চারটি ক্ষুধার্ত হিংস্র জন্তু তাকে এক্ষুনি ছিঁড়ে খুঁড়ে ফালা ফালা করে দেবে।

নিজেকে শান্ত আর নির্ভীক রাখতে সচেষ্ট পিলু বলে ওঠে, আপনারা নিশ্চয় খারাপ লোক না?

- না না। আমরা খারাপ লোক হতে যাবো কেন? আমরা ব্যবসায়ী। জ্যান্ত মানুষ বেচা-কিনি করি। বিশেষ করে নারী মাংসের ব্যাপারী।

বলতে বলতে হা হা করে হেসে ওঠে মামুন তালুকদার।

(সমাপ্ত)



***আগে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×