শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণেঃ
ইদানীং খুব জোরেসোরে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ তাদের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা চলছে। বিষয়টি আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও মনে করি, মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকগণ তাদের অর্জিত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক ও মনস্তাত্ত্বিক ইতিবাচক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে উদ্যোগী হবেন। আর এজন্য তাদের অবশ্যই স্বশিক্ষিত, সুশিক্ষিত এবং বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কিন্তু এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আজ পর্যন্ত আলোচনায় আসছে না। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে কিংবা শিক্ষার মানোন্নয়নে যেমন শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে, তেমনি ন্যূনতম স্নাতক পাস একজন শিক্ষককে পরিচালনা করতে যে অনুরূপ সমশিক্ষিত একজন ব্যক্তির অত্যন্ত প্রয়োজন- সেটি কেউই উপলব্ধি করছেন না। অথচ শিক্ষকদের কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে খুনী, মস্তান ও অশিক্ষিত লোক এসে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই কলঙ্কিত করে তুলছে এবং কাঙিক্ষত শিক্ষার মানোন্নয়নে ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে অন্তরায় সৃষ্টির প্রধানতম বাহক হিসেবে কাজ করছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অষ্টম শ্রেণি পাস লোক গভর্নিং বডির সভাপতি, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান বৃদ্ধির পরিবর্তে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায়। এ সকল লোক দাপট দেখিয়ে কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পকেটে পুরে শান্তিপ্রিয় ও মেধাবী শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাদের অতিষ্ঠ করে তুলছে এবং সামগ্রিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশকে অস্থির ও অশান্ত করছে।
এধরনের বর্বর জণপ্রতিনিধিদের হাত থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষা করার প্রয়াসে বিগত সেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের মেয়াদের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে গুণগত কিছু পরিবর্তন আনতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন- যেটির সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে কার্যকর করলে নেহায়েত মন্দ হতো না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বর্তমান সরকার সেটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং সেই সংগে দলীয় ক্যাডার মাস্তানদের হাতেই স্কুল কলেজ পরিচালনা কার্য্যক্রম ফিরিয়ে দিয়েছে! নিশ্চয়ই অধিকতর যুগোপযোগী করার মানসে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে অহেতুক অনাকাঙিক্ষত ঘটনা না ঘটে এবং সত্যিকার বিদ্যানুরাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়- সেদিক বিবেচনা করে সেনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জারিকৃত ঐ প্রজ্ঞাপনটি সংস্কার সাধন করে সেটি অচিরেই বলবৎ করবে বলে সাধারন মানুষ প্রত্যাশা করেন। তবে সরকার সর্বগ্রাসী দলীয় করনের কারনে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে অর্ধশিক্ষিত মাস্তান শ্রেণীর হাতেই রেখেছে।
শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের জবাবদিহিতায় আনা, তাদের কাজের মূল্যায়ন সুপারভিশন এবং বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দেওয়া বা পদোন্নতি না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সময়ের বিবেচনায় বা অনুপাতের ভিত্তিতে পদোন্নতির পরিবর্তে পারফরম্যান্সবেজ পদোন্নতির ব্যবস্থা করলে শিক্ষকদের পেশাদারিত্বের উন্নয়নে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারে। প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা প্রয়োজন, দলীয়করণের কালচারের পরিবর্তন হওয়া জরুরি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আদলে বিকল্প নিয়োগ কমিশন গঠন করা যেতে পারে।
সাম্প্রতিককালে কারিকুলাম এবং সিলেবাস থেকে প্রগতিশীল কবি ও লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হবে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ ও হেফাজতীকরণ পরিহার করে যুক্তি দর্শন, বিজ্ঞান ও কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর প্রয়োজন। শিক্ষায় বরাদ্দ-সংক্রান্ত সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজেট প্রদান, শিক্ষা প্রশাসনের সবস্তরে দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করা জরুরি। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিশ্বায়ন যেভাবে ত্বরান্বিত হচ্ছে; সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষকদের তথ্য ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে না বাড়ালে তাদের এ পেশায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সবার আগে শিক্ষা ধ্বংশকারী শিক্ষামন্ত্রীর অপসারণ জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



