somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

দেশপ্রেমের রকমফের......

১১ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৪ সাল , ইংল্যান্ডের কেন্ট-এর একটি ছোট্ট গ্রামের এক সাধারণ বাড়িতে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের পুলিশ দরোজায় কড়া নারে।

৮২ বছরের এক বয়স্ক বিধবা মহিলা দরজা খুলে দেয়। পুলিশ তার নাম জিজ্ঞেস করে কনফার্ম হতেই বয়স্ক নারীকে জানায় - তাকে দেশের বিরুদ্ধে স্পাইয়িং এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজের জন্য গ্রেফতার করা হলো।

৮২ বছরের বুড়ি মিসেস মেলিটা নরউড প্রথম ধাক্কাটা সামলে নিয়ে বললো - অসম্ভব , আমি একজন দেশপ্রেমিক , আমার দেশের বিরুদ্ধে আমি কোন অন্যায় কাজই করতে পারি না। তোমরা ভুল করছো।

***
১৯৩৮ সাল , দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু তখন হয়নি । মিস মেলিটা কেমব্রিজ ইউনিভার্সিতে ফিজিক্স পড়তে ভর্তি হয়।

সফ্ট হার্টেড দরদী মেলিটা নতুন পরিচয় হওয়া এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে কম্যুনিজমের একটি গোপন বৈঠকে কিউরোসিটিতে থেকে জয়েন করে।
সেখানে জার্মানি থেকে বিতাড়িত খুবই শার্প এক ইহুদি ছেলে ( লিও ) এর সাথে পরিচয় হয়। সে কম্যুনিজমের একজন ঘোর সমর্থক এবং সিক্রেট কর্মী।

সময় গড়িয়ে যায় , দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ততদিনে, মেলিটা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে একটি রিসার্চে কাজে যোগ দেয় এক প্রফেসরের আন্ডারে।

কিন্তু অল্পদিনেই বুঝতে পারে প্রফেসর এবং তার টিম আসলে যে রিসার্চ করছে আর বাইরে যা প্রকাশ করা হয় , এই দুইয়ের সাথে কোন মিল নেই। গোপন কিছু হচ্ছে যা মেলিটা ধরতে পারছে না।

ইতিমধ্যে অবশ্য প্রফেসরের আস্থা অর্জন করে মেলিটা , এবং একদিন প্রফেসর জানায় ব্রিটেন এটমিক বোম্ব তৈরি জন্য কাজ করছে। তাদের মূল কাজ হচ্ছে যতদ্রুত সম্ভব এই কাজ করা।
আমেরিকা এবং জার্মানিও একই কাজ করছে কিন্তু সে সবার আগে এই বোমা তৈরী করতে যায়। বিশেষ করে জার্মানির আগে
করতে চায় যাতে জার্মানিকে পরাস্থ করা যায় এই যুদ্ধে।

বুদ্ধিদীপ্ত মেলিটা প্রফেসরকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে এবং এক সময় প্রফেসরের পার্সোন্যাল সেক্রেটারি হিসেবে কাজ শুরু করে। ফলে এটম বোমার সমস্ত ডকুমেন্ট তার হাতে আসতে থাকে এবং মেলিটা টাইপ করে ফাইলিং কেবিনেটে সংরক্ষণ করতে থাকে।

এরমধ্যে সেই ইহুদি ছেলে লিওর সাথে তার "লাভ এন্ড হেইট" সম্পর্ক চলতে থাকে এবং মেলিটাও কমুনিজমের কাজের সাথে সিক্রেটলি জড়িয়ে যায় এবং সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পরে।

লিও কেজিবির সাহায্যে জানতে পারে মেলিটা আসলে কোথায় কাজ করে এবং কি করে।

লিও ভালোবাসার দোহাই এবং নানা ধরণের টোপ ফেলে মেলিটার কাজে এটম বোমার নকশার কাগজপত্র চায় কমিউনিজমকে সাহায্য করার জন্য।

কিন্তু মেলিটা দেশের টপ সিক্রেট ডকুমেন্ট লিও-কে দিতে অস্বীকার করে।
এতে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়, তবুও মেলিটা দেশের বিরুদ্ধে যেতে চায় না কম্যুনিজমের কর্মী হয়েও।

এরমধ্যে আমেরিকা ব্রিটেনের আগেই এটম বোমা তৈরী করে ফেলে সফল পরীক্ষা করে, এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে দুটি বোমা ফেলে সারা বিশ্বেকে তাক লাগিয়ে দেয়।

এই বোমার ভয়াবহতা দেখে মেলিটা ভেঙে পরে , সে কিসের জন্য কাজ করছে !
সে মানবসভ্যতা ধ্বংসের জন্য কাজ করছে !!!

তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয় মানুষকে বাঁচানোর জন্য তাকে কিছু করতে হবে।

এরপর মেলিটা তার পুরোনো বন্ধুর মধ্যমে কেজিবির সাথে যোগাযোগ করে ব্রিটেনের এটোমিক বোমার বিভিন্ন তথ্য , নকশাসহ গোপন ডকুমেন্ট রাশিয়ায় পাঠাতে থাকে।

১৯৭২ সালে মেলিটা রিটায়ার্মেন্টে যায়, এবং এর বহু পরে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস তার এই কার্যকলাপ সম্মন্ধে জানতে পারে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর।

তখন ছয় ট্রাঙ্ক ভর্তি ডকুমেন্টসহ এক কেজিবি সদস্য ডিফেক্ট করে ব্রিটেনে আশ্রয় নেয়। তার কাছে মেলিটার পাঠানো ডকুমেন্ট পাওয়া যায়।

এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর মেলিটাকে ট্রেইটর , রাষ্ট্রদ্রোহী বলে মানুষ ঘৃণা করতে শুরু করে।

মেলিটার ছেলে একজন বড় ব্যারিস্টার, সে নিজেও সবজেনে মাকে ডিফেন্ড করতে এগিয়ে আসে না। উল্টো ভর্ৎসনা করে মায়ের সাথে সম্পর্ক এক প্রকার ত্যাগ করে।

উপায় না দেখে বয়স্ক মেলিটা নিজেই নিজের বাড়ির সামনে একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলে- আমি নিজেকে কখনোই দেশদ্রোহী মনে করি না। আমি একজন দেশপ্রেমিক এবং সর্বদাই দেশের ভালোর জন্য কাজ করেগেছি।
আমি নির্দোষ এবং আমি কোন ভুল করি নাই।

এরপর অবশ্য তার কেইস কোর্টে যায়।

তখন অবশ্য তার উকিল ছেলে মাকে ডিফেন্ড করতে এগিয়ে আসে।

মেলিটা তার ছেলেকে বলে- আমি দেখতে পেয়েছিলাম এই ভয়ানক অস্ত্র যদি একটিমাত্র শক্তির কাছে থাকে তবে বিশ্বে ইম্ব্যাল্যান্স তৈরী হবে। একটি পক্ষ প্রয়োজনে ব্যবহার করে অগণিত মানুষ হত্যা করবে।

কিন্তু যদি উভয় পক্ষের হাতে এই মারণাস্ত্র থাকে তবে লাভক্ষতি চিন্তা করে এই অস্ত্র কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

ফলে বিশ্বের মানুষ বেঁচে যাবে এই ভয়ানক অস্ত্রের হাত থেকে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। এজন্যই আমি পশ্চিমের শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে এই গোপন তথ্য পাঠাই ।

কোর্টের ফাইনাল শুনানিতে ছেলে তার মায়ের পক্ষে বলে,

- আমার মা যা করেছে একজন সাধারণ নাগরিকের চোখে হয়তো অপরাধ মনে হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি বিবেকবান মানবিক মানুষ মাত্রই চায় সারা দুনিয়াতে শান্তি আন্তে।
কিন্তু কেউ জানে না কি করে সেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এবং কিছু করতেও পারে না।

আমার মা মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে , বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে নিজ উদ্যোগে কিছু করেত চেয়েছিল। আর তাই এই ভয়ানক অস্ত্রের টেকনোলজি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে মানব সভ্যতাকে হয়তো রক্ষা করেছে।

তবে সবকিছু জানার পর বিচারক মেলিটার বয়স বিবেচনা করে মেলিটাকে মামলা থেকে খালাস দেয়।

২০০৫ সালে মিসেস মেলিটা নরউড ৯৩ বছর বয়সে মারা যায়।

*** মেলিটার এই কাহিনী ব্রিটেনে "গ্র্যানী স্পাই " নাম পরিচিত লাভ করে। ১৯৯৯ সালে এই সত্য কাহিনী নিয়ে একটি বই লেখা হয়। এর উপর ভিত্তি করে একটি মুভি বানানো হয় - "রেড জোয়ান " নামে।
মুভিটি বিবিসির আইপ্লেয়ারে ফ্রি দেখা যাবে যদি দেখতে চান।

তবে মূল ঘটনা থেকে বই এবং মুভি কিছুটা ভিন্ন ( হয়তো ড্রামাটাইজড করার জন্য )।
আমি মুভি থেকে নিয়ে সংক্ষেপে এখানে উপস্থাপন করেছি।

বিঃ দ্রঃ মেলিটা বিশ্ব শান্তির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা ডিক্টেটর স্টালিনকে আণবিক বোমার তথ্য দেয় , আমিও ঠিক সেই একই কারণে রাশিয়ার উত্থানকে সাপোর্ট করছি।

শুধুমাত্র ইউক্রেনের দিকে ফোকাস না করে আপনাকে দেখতে হবে , রাশিয়া নিজে আগ্রাসন চালিয়ে আসলে কাদের আগ্রাসনকে ঠেকালো।

(কপি-পেস্ট, ইষত পরিমার্জিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৫৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাস্থানের বিছিস্ট এনছিপি নেতা হাবদাল্লা।ভারতের সিস্টার না হলেও নিজেদের সিস্টারদের ..।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১০



আপাতত সেভেন সিস্টার পৃথক না করতে পারলেও । সিক্স সিস্টার অত্যন্ত সফলতার সাথে সার্জারি করে পৃথক করে ফেলেছেন । এই কারণে আপনারা সবাই রাজুতে চলে আসুন। উনি অজাতিদের উদ্দেশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×