somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

'বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে'- পাঠপ্রতিক্রিয়া।

১২ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে'- পাঠপ্রতিক্রিয়া।

গল্প, উপন্যাস, কবিতার বই এক বসাতেই পড়ে শেষ করে যা বোঝার তা বোঝা যায়। কিন্তু প্রবন্ধের বই পড়া আমার কাছে একটু কঠিন। তারউপর উপলব্ধি করা আরও বেশী কঠিন এবং প্রয়োগ, বাস্তবায়ন সুদূর পরাহত নাহলেও অদূর পরাহততো বটেই।



ব্যাক্তিগত ভাবে আমি গল্প উপন্যাস, কবিতা খুব দ্রুতই পড়ি। কিন্তু প্রবন্ধের বেলায় যথেষ্ট সময় নিয়ে পড়তে হয়, একই লেখা একাধিক বার পড়তে হয়। আরোও সমস্যা কিম্বা বদ অভ্যাস হলো, আমি পড়ি আর মার্কার দিয়ে লাইন বাই লাইন দাঁগ দেই! এই দাঁগানোর কারণে আমি কোনো প্রবন্ধের বই কারোর থেকে ধারকর্জ করে এনে একবার পড়ে ভালো লাগলে নিজের সংগ্রহে রাখতে বইটা কিনে নিজের ইচ্চে মতো দাঁগাই। আলোচ্য 'বাংগালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে' বইটাও আচ্ছামত দাঁগীয়েছি!

১৮২ পৃষ্ঠার বইয়ে বাঙালির বিপ্লব, শেকায়েতনামা, অপ্রমিত, ইংরেজিতে বিজ্ঞান চর্চা- যে কারণে দরকার, বাংলা নিউমেরাল প্রসঙ্গে, শাহবাগীদের দেশপ্রেম, ডিডোরো এফেক্ট, "উইল ডু" জেনারেশান, কেওস- কণ্টক, শরীরী প্রেম, বাংলাদেশের আস্তিক -নাস্তিক বাইনারী নিয়ে একটি "বিজ্ঞানমনস্ক" আলোচনা, বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ, 'পাকিস্তান', 'মেহেরজান' এবং বাংলা ব্লগস্ফেয়ার এবং পিতা কন্যাকে শিরোনামে মোট ১৪ টি প্রবন্ধ আছে। ইচ্ছে করে, প্রতিটি প্রবন্ধ নিয়ে নিজের পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখি...কিন্তু তাতে 'বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে' বইয়ের চাইতে অনেক বড়ো একটা বই হয়ে যাবে! ফলাফল হবে আমার ২৩২ ফ্রেন্ডস অর্ধেকই স্বেচ্ছায় নিষ্ক্রান্ত হবে! অতএব, অতি সংক্ষেপে নিজ পাঠপ্রতিক্রিয়া শেয়ার করছি(কেউ পড়লে পড়বে, না পড়লে নাই)।

কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের প্রথম ব্যাচের ক্যাডেট, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী Faham Abdus Salam সাহেবের লেখা 'বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে' বইয়ের প্রথম প্রবন্ধ বাংগালীর বিপ্লব' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, "আমি কোনো ভাষাবিদ নই এবং ভাষাতত্ত্বে যে কোনো প্রশিক্ষণ নেই সেটা বলে রাখা ভালো" - ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ একজন লেখকের বিনয় ছাড়া অন্যকিছু নয় সেটা প্রমাণিত হয়েছে গোটা বই জুড়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বহুমাত্রিক ব্যবহারে!

লেখক বাংলা ভাষার সীমাবদ্ধতার কথা বারবার তুলে ধরেছেন আবার তাঁর 'শেকায়েতনামা' প্রবন্ধে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়েছেন একটা বাংলা শব্দের কতগুলো প্রতিশব্দ লিখেছেন শ্রী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার "বংগীয় শব্দকোষ" বইয়ে- যা আমার আগে জানার সুযোগ হয়নি। আমার পাঠক বন্ধুদের জন্য সেই শব্দটার আংশিক তুলে ধরছিঃ- "তীর্থ" শব্দটির ৪২ টি অর্থ করা যায়, যেমন - যোনী, নারী, রতিস্থান/ক্রীড়াস্থান, পাত্র/সৎপাত্র, আগুন, খেয়াঘাট এমনকি মন্ত্রীও আছে....কোথায় আগুন, কোথায় যোনী আর কোথায় মন্ত্রী'!
আমার জানা মতে ওই বস্তুর ইংরেজি নামও আছে কমপক্ষে দুই ডজন! যোনী'র অবস্থা হয়েছে 'আন্ডা'র মতো। 'আন্ডা' যেমন ডিম, এগ, এগ ফ্রাই, অমলেট, মামলেট, পোস, হাফ বয়েল, বয়েল্ড হয়ে যায়!

'অপ্রমিত' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, 'আপনার ঘরে যদি একটি ১৫ বছরের কাজের মেয়ে থাকে তাহলে সে সম্ভবত যোনীপথ, জেনিটাল বা ভ্যাজাইনা বলতে পারবে না। লেখকের ধারণা, মেয়েটির একমাত্র জানা শব্দ 'ভোদা'!' কিম্বা আপনার ড্রাইভারের সাথে গোপনে দেখা সাক্ষাত করে আরও যদি একটু 'কদাকার স্মার্ট' হয় তাহলে 'সাউয়া' শব্দটাও জানবে।
হ্যা, কথা সত্য। বাংগালীদের ভোদা শব্দটা খুবই প্রচলিত। তবে আমার জানামতে ওই শব্দটির চাইতেও বহুল ব্যবহৃত তিনটা প্রতি শব্দ আছে 'স', 'ছ', 'প' বর্গীয় শব্দে।

লেখক বাংলা ভাষার উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হবার কথা বলেছেন, ব্যাক্তি, বিজ্ঞান, সামাজিক ও রাস্ট্রীয় উন্নয়নের জন্য ইংরেজি ভাষায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন- যা সত্যিই প্রয়োজন।

প্রত্যেকটা প্রবন্ধ পড়ে বিস্মিত হই- কী নিখুঁত সুন্দর করে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন বিভিন্ন ভাবে উদাহরণ দিয়ে। আমাদের অনেক বিশিষ্ট জনেরা চেহারা দেখানোর সুযোগ পেলেই মাতৃভাষার মাধ্যমে বিশ্বজয়ের নসিহত করেন, যাদের সন্তানেরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে দেশ বিদেশে ভালো চাকরি বাগিয়ে নেয়। আবার ফেব্রুয়ারী মাসেতো কোট টাই পরা সব শ্রেণীর বিশিষ্ট কুতুবেরা বাংলা বাংলা বলে কার্তিক মাসের সামরমেয়র মতো উজাইয়া ওঠে। সেই শ্রেণীর বাংলাভাষা প্রেমিদের পড়া উচিৎ "ইংরেজিতে বিজ্ঞান চর্চা- যে কারণে দরকার" প্রবন্ধটি।

'বাংলা নিউমেরাল প্রসঙ্গে' প্রবন্ধ না পড়লে ধারণাও করতে পারবেন না আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির গোড়ায় গলদ, শিক্ষকতা ও শিক্ষার মান কেনো বিশ্ব মানচিত্র থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। ঠিক একই ভাবে বইটি না পড়লে 'শাহবাগীদের দেশপ্রেম' এর ভণ্ডামির আমলনামা অনুধাবন করা যেতো না।

প্রচুর ইংরেজি শব্দ এবং প্রমিত বাংলা কঠিন শব্দ প্রয়োগে লেখা বইটি পাঠে এক ভিন্ন রকম ভালো লাগা অনুভূত হয়েছে। 'ডিডেরো এফেক্ট', উইল ডু" জেনারেশান, কেওস- কণ্টক, শরীরী প্রেম, বাংলাদেশের আস্তিক -নাস্তিক বাইনারী নিয়ে একটি "বিজ্ঞানমনস্ক" আলোচনা, বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ, 'পাকিস্তান', 'মেহেরজান' এবং বাংলা ব্লগস্ফেয়ার' এবং 'পিতা কন্যাকে'- প্রতিটি প্রবন্ধ পড়ে পাঠকের অন্তঃচক্ষু নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন করে।

তবে 'শরীরী প্রেম' এবং 'বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ' প্রবন্ধের ৬ টা পৃষ্ঠা সবটুকু পড়তে পারিনি প্রিন্টিং ত্রুটির জন্য। বইয়ের ১৩০,১৩১, ১৩৪, ১৩৫, ১৪২, ১৪৩ পৃষ্ঠায় ছাপার কালি ঢেলে দেওয়ায় পড়তে বিড়ম্বনা হয়েছে। বইটি পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার আগে যথাযথ দায়িত্ব প্রাপ্তদের কোয়ালিটি লক্ষ্য করা উচিৎ ছিল।

যায়যায়দিন পাঠক ও অল্পস্বল্প লেখালেখি, একাডেমি ফ্লিম সোসাইটির সক্রিয় সদস্য এবং রাজনৈতিক কারণে শ্রদ্ধেয় শফিক রেহমান স্যারের যৎসামান্য সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। আবার বিলেত প্রবাসী ভারতীয় লেখক নীরদ চৌধুরী, উপমহাদেশের বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরীর লেখার একজন নগন্য পাঠক হিসেবে উভয় ব্যাক্তিত্বের মতাদর্শের সাথে ধারণা নিয়ে বলতে ইচ্ছা করে, ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ, প্রয়োগ, গুরুত্ব, ভাষা, শব্দ ও বানান রীতিতে 'বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে' বইয়ের লেখক সত্ত্বা
সম্মানজনক একাত্মতা আছে।

অসাধারণ উপলব্ধি!
আমরা মিথ্যা জাত্যাভিমানে আকন্ঠ নিমজ্জিত। জাতিগত ভাবনাকে মেকি ও মিথ্যা মিশ্রিত ফ্রেমে বন্দি করে দেয়ার প্রক্রিয়া বেশ পাকাপোক্তভাবে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সত্যিকার মুক্তচিন্তার লেখক মনন হারাতে বসেছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাস্থানের বিছিস্ট এনছিপি নেতা হাবদাল্লা।ভারতের সিস্টার না হলেও নিজেদের সিস্টারদের ..।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১০



আপাতত সেভেন সিস্টার পৃথক না করতে পারলেও । সিক্স সিস্টার অত্যন্ত সফলতার সাথে সার্জারি করে পৃথক করে ফেলেছেন । এই কারণে আপনারা সবাই রাজুতে চলে আসুন। উনি অজাতিদের উদ্দেশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৪



ইয়ে মানে বছর শেষ। ২০২৫ সাল বিদায় নিচ্ছে । তা আপনার কাছে ২০২৫ সালের সেরা মশকরা কোনটি ?


আমার কাছে সেরা মশকরা হচ্ছে- এনসিপির জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করা।

আরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×