ব্যবহারে বংশের পরিচয়.....
বাদশাহর দরবারে একটা লোক এসে বললো, "জাঁহাপনা, দয়া করে আমাকে একটি চাকরি দিন।"
বাদশাহ লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তোমার কি যোগ্যতা আছে?'
লোকটি বললো, "জাহাঁপনা, আমি মানুষ বা যে কোনো প্রাণীর মুখ দেখে তার বংশ পরিচয় বলে দিতে পারি।"
বাদশাহ ভাবলেন, বাহ্, চমৎকার তো! দেখা যাক লোকটাকে পরীক্ষা করে। তিনি লোকটিকে তাঁর ঘোড়ার আস্তাবলের ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করলেন।
কিছুদিন পর বাদশাহ লোকটিকে দরবারে তলব করে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ঘোড়াটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, 'বলো তো আমার ওই ঘোড়াটির জাত কেমন?'
লোকটি বাদশাহকে বললো, "জাঁহাপনা, ঘোড়াটির জাত ভালো না।"
এই কথা শুনে বাদশাহ ভীষণ রেগে বললেন, 'কি বলছো তুমি? আমি জাত দেখে লাখ লাখ টাকা খরচ করে ওকে কিনেছি, পালছি! আর তুমি বলছো ওর জাত ভালো না?'
লোকটি তবুও তার কথায় অনড় রইলো।
বাদশাহ তখন সেই ঘোড়াটির বিক্রেতাকে দরবারে ধরে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন।
ঘোড়া বিক্রেতা দরবারে হাজির হলে বাদশাহ তাকে বললেন, 'সত্যি কথা বলো, তা না হলে গর্দান যাবে- ঘোড়ার জীবন বৃত্তান্ত।'
তখন ঘোড়া বিক্রেতা বললো, "জাঁহাপনা, আমাকে দয়া করে ক্ষমা করুন। আসলে এই ঘোড়াটির মা মারা যায় ও যখন খুব ছোট ছিল। তাই তখন থেকে ওকে আমি গরুর দুধ খাইয়ে বড়ো করেছি।"
বাদশাহ তখন আস্তাবলের ব্যবস্থাপক লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি এটা বুঝলে কিভাবে?'
লোকটি বললো, "জাঁহাপনা, ঘোড়ারা মাথা নিচু করে খাবার মুখে নিয়ে মাথা উঁচু করে খায়। এই ঘোড়াটি গরুর মতো মাথা নিচু করে খাবার খায়।"
বাদশাহ খুশি হয়ে লোকটিকে কয়েকশো মুরগী উপহার দিলেন।
কিছুদিন পর বাদশাহ লোকটিকে দরবারে তলব করে বললেন, 'আমার রানীর বংশ কেমন, তা তোমাকে বলতে হবে।'
লোকটি বললো, জাঁহাপনা, আমাকে কয়েকদিন সময় দিন। কয়েকদিন পর লোকটা এসে বাদশাহর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললো, "জাঁহাপনা, রানীমাতার বংশের ব্যাপারে কিছু বলার আগে আমাকে কথা দিতে হবে, আমার ওপর রাগ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না৷ আগে যাচাই-বাছাই করবেন।"
বাদশাহ বললেন, 'বেশ তা'ই হবে।'
লোকটি বললো, "রানীমা কোনো রাজবংশের মেয়ে না।
তিনি এক সাধারণ পরিবারের মেয়ে।"
বাদশাহ এবার সত্যি সত্যিই রেগে গেলেন।
নিজে দেখেশুনে পিতা-মাতার পছন্দসই অন্য রাজ্যের বাদশাহর মেয়ে বিয়ে করেছেন, আর ব্যাটা বলে কি না তিনি রাজবংশেরই মেয়ে না। যাই হোক, বাদশাহ কথা দিয়েছেন, আগে যাচাই-বাছাই করবেন।
অতএব, বাদশাহ তাঁর শাশুড়িকে চেপে ধরলেন সত্যি বলার জন্য।
এক পর্যায়ে শাশুড়ি ভেঙে পড়ে বললেন, "বাবা, সত্যি কথা বলতে কি, তোমার শ্বশুর আর তোমার বাবা মিলে ঠিক করেছিলেন, তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেবেন। আমার মেয়েটা ছয় মাস বয়সে মারা গেলে আমরা সেই সময় অন্যের কাছ থেকে ওই বয়সের একটি মেয়েকে নিয়ে এসে লালন-পালন করি।"
যাই হোক, বাদশাহ লোকটিকে একপাল ভেড়া, ছাগল ও গরু গাধা উপহার দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুমি বিষয়টা কিভাবে বুঝলে?'
লোকটি বললো, "হুজুর, রানীমা যে ভাষায় চাকর-বাকর, কর্মচারিদের সাথে কথা বলেন, যে ব্যবহার করেন, তা রাজকন্যা বা রাজমাতাসুলভ নয়।"
আবার একদিন বাদশাহ লোকটিকে রাজ দরবারে তলব করে বললেন, 'সবার বংশের কথা তো বললে, এবার আমার নিজের বংশের ব্যাপারে কিছু বলো তো?'
লোকটি বললো, "জাঁহাপনা, এই বিষয়ে আমি এখনই বলতে পারি। কিন্তু তার আগে আমার জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।"
বাদশাহ বললেন, 'যাও, দিলাম।'
লোকটি তখন বললো, "জাঁহাপনা, আপনি কোনো রাজা-বাদশাহর সন্তানই নন। আপনি একজন কৃষকের সন্তান।"
বাদশাহ রাগে গজগজ করেন- কিভাবে লোকটার গর্দান নেবেন.... ভাবতে ভাবতে মায়ের কাছে গিয়ে এই বিষয়ে জানতে চাইলেন।
রাজমাতা তখন বললেন, 'লোকটি ঠিক বলেছে।
তোমার পিতার কোনো ছেলে সন্তান না জন্মানোর কারণে যখন রাজত্ব জ্ঞাতিদের কাছে হারানোর আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন এক কৃষক পরিবার থেকে তোমাকে এনে দিয়েছিলেন বিশ্বস্ত উজির।"
বাদশাহ এবার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমার ব্যাপারে তুমি কিভাবে বুঝতে পারলে?'
লোকটি বললো, "এটা সহজ ছিল, জাঁহাপনা।
আপনি সত্যিই রাজা-বাদশাহর সন্তান হলে উপহার দিতেন হীরে-জহরত, মণি-মুক্তা সেসব না দিয়ে আপনি উপহার দেন, ভেড়া-গরু-গাধা, হাঁস-মুরগি।
আর রাজপ্রাসাদের অনুষ্ঠানে অতিথিদের রাজকীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন না করিয়ে এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিষ্টান্ন বিতরণ না করিয়ে সর্বদা খিচুড়ি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করান যা রাজবংশের কোন সন্তানের পরিচয় নয়।"
"মানুষের চরিত্র বুঝা যায় তার কর্মে"
(এই গল্পটা অনেক আগে শুনেছিলাম.... নিজের মতো করে লিখলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




