
ইদানিং উত্তর কোরিয়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী শাসক কিম জং-উনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া সরব। সাম্প্রতিক বিশ্ব মিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে যে, কিম জং উনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক। গত কিছুদিন থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে অপ্রত্যাশিতভাবে গরহাজির থাকতে দেখা যায় কিমকে। CNN-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, "অস্ত্রোপচারের পর বিপজ্জনক অবস্থা হতে পারে কিমের"। সংবাদমাধ্যম ডেইলি এন-এর খবর অনুযায়ী, "কার্ডিয়ো ভাসকিউলার অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক"।
স্বৈরাচারী ভাবমূর্তির নিয়েও কোনো সরকার প্রধান যে নিজ দেশে এবং বহির্বিশ্বেও জনপ্রিয় হতে পারে তার প্রমাণ উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী শাসক কিম জং উনকে কতটা চিনি আমরা? গোয়েন্দা তথ্যসূত্রে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত কিম জং উন সম্পর্কে যেসব খবর বিভিন্ন সময় প্রচার কিম্বা অপপ্রচার হয়েছে তার কিছু অংশ থেকে জেনে নেই কিম জং-উন কে...
রহস্যময় শৈশব এবং বয়স নিয়ে ধোঁয়াশাঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজের ছোটবেলার ছবি দেখাতে পছন্দ করেন না কিম। তবে ২০১৪ সালের সামরিক ছুটিতে উত্তর কোরিয়ায় বড় পর্দায় একটি ছবি দেখানো হয়েছিল। মনে করা হয়, সেটাই কিমের শৈশবের ছবি। তবে নিজেকে বয়স্ক হিসেবেই দেখাতে পছন্দ করেন উত্তর কোরিয়াস শাসক। তাঁর জন্মের সাল এবং তারিখ নিয়ে নানান ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছেন কিম নিজেই। কোথাও বলা হয় কিমের জন্ম ১৯৮২ সালে। কোথাও আবার ১৯৮৩। এমনকী কোথাও কোথাও কিমের জন্মের সাল ১৯৮৪ ও করা হয়েছে। শুধু সাল নয়। জন্ম তারিখ নিয়েও বিস্তর ধন্দ্ব। যে সমস্ত জায়গায় এই সালগুলি লেখা হয় সেখানে কিমের জন্ম তারিখ হিসেবে হয় ৮ জানুয়ারি না হলে ৬ জুলাই লেখা হয়। তবে কিম কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে নিজের জন্মের সাল লেখেন ১৯৮২। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার এক গোয়েন্দা সংস্থা বিগত কিছু বছর আগেই জানিয়েছিল কিমের জন্ম ১৯৮৪ সালে।
অন্য নামে পড়াশোনাঃ
~~~~~~~~~~~~
১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল অবধি তিনি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত Liebefeld-Steinhölzli পাবলিক স্কুলে পড়াশোনো করেন। উত্তর কোরিয়ান দূতাবাসে তাঁর রেজিস্ট্রেশন অবশ্য হয়েছিল ভিন্ন নামে। অর্থাৎ কিম জং উন নিজের পরিচয় গোপন করে পড়াশোনা করেছেন। কিম বা উত্তর কোরিয়ার তরফে বিষয়টি স্বীকার না করা হলেও, তাঁর ওই সময়ের সহপাঠীরা ছবি দেখে হলফ করে বলেন যে তাদের বন্ধুই এখন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর এক রাষ্ট্র নায়ক। পাশাপাশিই কিম জং উনের সহপাঠীরা এ-ও বলেন যে, ছাত্র হিসেবে তেমন ভালো ছিলেন না কিম জং। যদিও পদার্থবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রি রয়েছে কিম জং উনের।
বিয়েতে স্ত্রীকে ব্যয়বহুল উপহারঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
২০০৯ সালে কিছুটা লুকোছাপা করেই 'রি সোল জু'(**)-কে বিয়ে করেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম। দেশের মানুষও কিমের বিয়ের কোনও খবর পাননি। তবে সেই সময়ে নানান সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বিয়ের দিন স্ত্রীকে 'ক্রিশ্চিয়ান ডায়ার' ব্রান্ডের
দামী একটি হ্যান্ড ব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন কিম জং উন। ব্যাগটির দাম ১৪৫৭ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের টাকায় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।
খাদ্যরসিক কিমঃ
~~~~~~~~~~
রোজ নিয়ম করে মাংস চাই কিম জং উনের। ডেনমার্কের ইম্পোর্ট করা উচ্চমানের শুয়োরের মাংস পছন্দ করেন কিম। ইরানের ক্যাভিয়ারও তাঁর বেশ মনপসন্দ। জাপানের বিখ্যাত থালা সুসি এবং শ্যাম্পেন কিম একপ্রকার নিয়ম করে খান। গোরুর দুধ খেতেও তিনি খুবই পছন্দ করেন। এছাড়াও তাঁর পছন্দ ওয়াইনের সাথে সাপের তৈরি খাবার-দাবার।
নামী-দামি সিগারেট ও ওয়াইনের শখঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নানা ধরনের বিলিতি মদের প্রতি খুবই ভালোবাসা কিমের। প্রতি বছর কিমের মদের খরচার পিছনেই চলে যায় ৩০ মিলিয়ান ডলার। টাকার মূল্যে যে হিসেবটা দাঁড়ায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই স্বৈরশাসকের সবথেকে প্রিয় ওয়াইন হল হেনেসির ওয়াইন, যা বিশ্বের অন্যতম দামি ওয়াইনগুলির একটি। আর এই এক বোতল ওয়াইনেরই দাম প্রায় ২১১৫ ডলার। কিম যে সিগারেটে সুখটান দেন তার দাম ৪৪ ডলারের মতো।
সিনেমার পোকা আর ১০০ গাড়ির মালিকঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সিনেমার খুবই ভক্ত কিম জং উন। তাঁর কাছে কমপক্ষে ২০ হাজার সিনেমার ডিভিডির কালেকশন রয়েছে। তাঁর প্রিয় দুই ছবি 'র্যাম্বো' এবং 'গডজিলা'। কিম জং উন সিনেমার এমনই অনুরাগী যে নিজের বাড়িতেই ১০০০ আসনের একটি সিনেমা হল বানিয়েছেন। গাড়ির প্রতিও প্রচণ্ড আসক্ত কিম। কিমের গ্যারেজে ১০০টি গাড়ি রয়েছে। সব ধরনের বিখ্যাত ছোট-বড় সবরকমের গাড়িই রয়েছে উত্তর কোরিয়ার শাসকের। তবে কিমের সবথেকে পছন্দের গাড়ি মার্সিডিজ বেঞ্জ।
বাস্কেটবল প্রীতিঃ
~~~~~~~~~
সুইজারল্যান্ডে কিমের সহপাঠীরাই জানিয়েছেন যে, বাস্কেটবল খেলতে দারুণ পছন্দ করত তাঁদের বন্ধু। এমনকী বাস্কেটবল তারকা মাইকেল জর্ডানের ছবিও আঁকতেন কিম। ২০১৩ সালে কিম জং উন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যানের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব দ্বীপে দেখা করেন। দু’জনের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক থাকা সত্ত্বেও দু’জনের চরম সখ্যতা তৈরি হয়। কিমের সঙ্গে দেখা করার পরই ডেনিস বলেছিলেন, "হয়তো ও পাগল, তবে আমি তার কিছুই খুঁজে পাইনি।"
সদা হাসি এবং ক্রমশ ছোট হয়ে আসা ভ্রু-র রহস্যঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যে কোনও পরিস্থিতিতে, যে কোনও মুহূর্তে ঠোঁটে হাসি থাকে কিম জং উনের। আর ঠোঁটের কোণে এই হাসির মূল কারণ, কিম চান সবাই তাঁকে আমুদে হিসেবেই চিনুক। তবে কিমের নানান সময়ের ছবি দেখলে মনে হবে যেন দিনে দিনে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে তাঁর ভ্রু। নানান সংবাদমাধ্যমে এর আগেও বহুবার বিষয়টি নিয়ে বলা হয়েছে যে, আদপে নিজেকে বাবা কিং জং ইলের মত দেখাতে ইচ্ছে করেই ভ্রু ছোট করছেন উন। কিন্তু এই ব্যাপারে একটি টু শব্দ কখনও করতে শোনা যায়নি কিমকে।
কে হতে পারেন কিম জং-উনের উত্তরসূরিঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কিম জং উনের অসুস্থতা নিয়ে এখন বিশ্বের রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছে। একাধিক সংবাদমাধ্যম দাবি করে মৃতপ্রায় অবস্থা কিমের। তাই তার মধ্যেই উঠে এসেছে কিম পরবর্তী উত্তর কোরিয়ার শাসকের নাম।
উত্তর কোরিয়ায় শাসকদের বেশিরভাগ অংশ শাসন ভার কিম পরিবারের মধ্যেই। কিমের ঘনিষ্ঠ জনদের মত এই পরিবারেরই কেউ যেন দায়িত্ব সামলান। তাই উঠে আসছে কিমের বোনের নাম। পিয়ংইয়ংয়ের দায়িত্ব সামলাতে পারেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ সোস্যাল মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন সময়ে কিম জং উন কে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ। হতে পারে এগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার বাড়াবাড়ি কিম্বা সত্য।(২০২০ সালে ফেসবুকে আমার পুরনো লেখা, সামান্য এডিট করেছি)।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



