somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পাথর চোখের কান্না- ৩

১৪ ই মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্ধকারের ভাবনা.....

চোখের সমস্যার জন্য নানাবিধ টেস্ট করিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম Ophthalmoscopy, Funduscopy, Optic fundus, OCT (Optical Coherence Tomography এছাড়াও যেহেতু মাথায় যন্ত্রণা থাকে সেজন্য CT Scan এবং MRI করতে হয়েছে। উপর্যুপরি ইলেক্ট্রিক শক দেওয়ায় চোখের সাথে সংযুক্ত মাথা এবং কানের নার্ভ/সেল ড্রাই হয়ে গিয়েছে তাই লেজার সার্জারি এবং থেরাপি পজিটিভ রেজাল্ট নিয়ে ডক্টর তেমন আশাবাদ ব্যক্ত করেননি এবং আমাকেও আশাবাদী হতে না করে ছিলেন। অপ্রত্যাশিত ভালো রেজাল্ট না পেলেও আমাদের দেশের বেশীরভাগ ডক্টরদের অনৈতিকতার উর্ধ্বে উঠে তিনজন ডক্টর আর্থিক বিষয়টাকে প্রধান্য না দিয়ে আন্তরিক এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন- আমার অবস্থা আরও খারাপ না হয়ে অন্তত স্থিতিশীল রাখতে, যা সত্যিই প্রসংশা যোগ্য।

ভাগ্যকে মেনে নিয়ে এখন আলোর চাইতে আঁধারেই আমি আলো খুঁজে পেতে চেষ্টা করছি। আলো যেখানে অগম, আমার মনো রাজ্যে আঁধার সেখানে পৌঁছে যায় অনায়সে। আলো আসে, অন্ধকারের মাঝে। অন্ধকার আসেনা, অন্ধকার থাকে, আলো চলে গেলে সবকিছুই অন্ধকার। আঁধার কোথাও যায়না, আসেওনা, সে সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিরাজিত। তাইতো আলো আসে তার কাছে, আঁধার সেই আলোর জন্য আপন বুকের মাঝে জায়গা করে দেয় অকৃপণ ভালোবাসায়।

তাই আঁধার-ই শ্রেষ্ঠ সত্য।
এই তথ্য ও তত্ত্ব দর্শনের সময় অন্তরে এক অসীম পুলক বোধ হয়। আমার মনে হয় সৃষ্টিকর্তার অসীমের মাঝে ডুবে থেকে এতদিন এই দৃশ্যমান সহজ সত্যিটা অগোচরেই ছিলো? প্রচলিত সত্যানুযায়ী যিনি স্রস্টা, তিনি সৃষ্টি করেন। কিন্তু তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেননি, তিনি সয়ম্ভূ, তিনি অসীম, অশেষ। সকল সৃষ্টির মাঝে তার প্রকাশ, তিনি সর্বময় বিরাজিত। তিনি সর্ববৃহৎ, সর্বব্যাপী। এই মহাবিশ্বের সকলি তিনি ধারণ করে আছেন। তিনি নিরাকার, জ্যোতির্ময়।

এই মহাবিশ্বের যা কিছু তা অন্ধকারের মাঝে ডুবে আছে। সমস্ত গ্রহ, নক্ষত্র, গ্রহাণু সহ সকল জ্যোতিষ্ক মণ্ডলী আঁধারেই নিমজ্জিত। আঁধারের মাঝেই আলোর প্রকাশ। আঁধার আছে, তাই আছে আলো। নতুবা আলোর কী দশা হতো! কী নামে ডাকতে তাঁকে? আঁধারই জ্যোতির্ময়। কোটি কোটি জ্যোতিষ্ক খচিত আঁধার যে কী অপরূপ রূপের আধার- সেতো রাতের আকাশে পলক ফেললেই দৃশ্যমান। আঁধারের আধারেই সকল জ্যোতি, সকল আলোর প্রকাশ। অর্থাৎ, আঁধার জ্যোতির্ময় এবং এই মহাবিশ্বের সবকিছু ধারণ করে আছে। তার অন্তরের জ্যোতিতেই সবের আত্মপ্রকাশ।
আঁধার অজ্ঞেয়, অসীম, অজানিত। কিন্তু আলোর উৎস জানিত, জ্ঞেয়, ক্ষুদ্র ও সসীম। কারণ, ছোট্ট এই সৌরজগতের মালিক যে সূর্য, সেই সূর্যের আলো শুধুমাত্র, মহাবিশ্বের তুলনায় ধূলিকণা সমান সামান্য পৃথিবীটাকেই একসাথে আলোকিত করতে ব্যর্থ। পক্ষান্তরে এই মহাবিশ্বকে অনায়াসেই আঁধারে আবৃত করতে সক্ষম। আলো যেখানে অগম, অন্ধকার সেখানে পৌঁছে যায় অনায়াসেই। অথচ, বহু জ্ঞানী, ঋষি মহাঋষি , পণ্ডিত, কবিসাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, যাজক ও মহাপুরুষ গণ কখনো কখনো গ্রীক পুরাণের সূর্য ঈশ্বর, বিভিন্ন mythology তে স্বীকৃত সূর্য দেবতা, ইত্যাকার আলোক বন্দনায় ব্যস্ত। আলো নিয়ে কতো লেখা। কতো গবেষণায় প্রাণের উৎস হিসেবে সূর্যকে দেখালেন। কিন্তু সেই সূর্যের ধারক ও স্রষ্টা আঁধার বন্দনা আঁধারেই রয়েগেলো। আজও জানা হলোনা অন্ধকারের উৎস। এমনকি বিজ্ঞান আজও ভাবলোওনা সে নিয়ে, মিললোও না তার উৎসের সন্ধান। হয়তো মিলবেনা কোনদিন। তাইতো সে অজ্ঞেয়।

আমার চোখের আলো নিভে যাচ্ছে এখন আমার মনে আলো সৃষ্টি যোগ্য। আঁধার সৃষ্টির অতীত। তাকে কেউ সৃষ্টি করতে পারেনা। অর্থাৎ, সে সয়ম্ভূ। সে সবসময় থাকে। আলো ক্রয় বিক্রয় যোগ্য। আলো আনতে বিনিময় লাগে, সৃষ্টি করতে খরচ করতে হয়। অন্ধকার সেখানে অমূল্য কিম্বা ম্যুল্যহীন। অন্ধকার কেনাবেচা হয়না। আলোর দোকান আছে। অন্ধকার সর্বময় উপস্থিত। তাকে ডাকলেও পাওয়া যায়না আবার ওমনিই সে আসে। আলোর প্রাচীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বসে সে সবি অবলোকন করে। সবেরই একটা আকার আছে, তবে আঁধারের কিবা আকার? তাইতো সে নিরাকার। সে নির্লিপ্ত, দৃঢ় অটল। কেবল মাঝেমাঝে অদৃশ্য হয়।

অন্ধকারের মাঝেই সবকিছু সৃষ্টি হয়। অঙ্কুর, ভ্রূণ সবি আঁধারের গহনে হয় সৃষ্টি। আঁধারের অগম কিছু নাই। বাইরে যাই দৃশ্য হোক, সে সবের মাঝেই অন্ধকার বিরাজিত। সকল হৃদয়ের গহীনে গভীর অন্ধকার। দর্শন ইন্দ্রিয় মুদিত হলে শুধু তাঁরই অনন্ত উপস্থিতি। চোখ বুজেও তাঁকে দেখাযায়, খুলেও দেখাযায়। তাইতো সেই পরম সত্যি।

আলো মিথ্যে, তাই, দুচোখ বুজলে আর তাকে দেখা যায়না। আর চাঁদের আলোতো সবচেয়ে বড়ো ফাঁকি। নিজের মোটেও কিছু নয়, শুধু পরের ধনে পোদ্দারি। কিন্তু কতোইনা তার বন্দনা, কতো কবিতা, কতো গীতি। তাই-ই তো হওয়ার। কারণ, আমরা যে কেবলি মিথ্যে, মেকী আর ফাঁকি নিয়েই মেতেআছি। তাতেই বেশী আগ্রহ, বেশী তার গুণগান। কিন্তু সে যে শুধু সত্যেরে অপমান।

আজও হলোনা সেই সুবৃহৎ আঁধারের রহস্য ভেদ করা। জানাগেলনা- কৃষ্ণগহ্বরের জমাট গভীর অন্ধকারের পাঁকে কতো নক্ষত্র পথ হারালো, মিলিয়ে গেল তার অসীম রহস্যঘন অন্তরতলে, সকল জ্ঞানের অন্তরালে সেই অস্পষ্ট ছায়াবীথি বিজ্ঞান কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আজও। সাত আসমান জুড়ে সমস্ত সৃষ্টিকে ঘিরে চলে তার সদা আনন্দ নৃত্য। ভেসে ভেসে কেবলি ছুটেচলে জগৎময় সেই আঁধারের ভেলা- ভূমি, অন্তরীক্ষ, পাতাল, সর্বময় যেন তাঁর সৃষ্টির পুতুল নিয়ে চলে আঁধারের নিত্যকার খেলা। তাইতো কবি লিখেছেন- "খেলিছ, এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে।"

আঁধার, তুমি দিয়েছ আলোর সম্মান,
আমি তাই গেয়ে যাই তোমারি জয়গান।
দিকে দিকে ধ্বনিত হোক আঁধারের গাঁথা
শ্রেষ্ঠ সত্য সরূপে তোমার কথকতা!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন হাদিসই যদি মানতে হবে তবে আল্লাহ ফিকাহ মানতে বললেন কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৬




সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন থাপ্পড় খাবি!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩



ঘটনাঃ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দামের পতনের সময়।
চৈত্র মাস। সারাদিন প্রচন্ড গরম। জামাই তার বউকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সুন্দর গ্রামের রাস্তা। পড়ন্ত বিকেল। বউটা সুন্দর করে সেজেছে। গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×