বাংলাদেশী পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এবং বাস্তবতা......
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যে এতোদিন ট্যারিফ ছিলো ১৫%। গতকাল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৫% থেকে বাড়িয়ে ৩৭% ট্যারিফ বসানোর ঘটনায় হা-হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এটা আজ হোক বা কাল এটা তো হওয়ারই ছিল। তবে এমন এককেন্দ্রিক (আরএমজি/(রেডি মেইড গার্মেন্টস) ইকোনোমি, এক্সপোর্ট ডেস্টিনেশনের বৈচিত্র্যহীনতা (ইউএস বেইজড) একদিন না একদিন ধাক্কা তো খাওয়াই লাগতো।
কারণ এই সেক্টর টিকাইয়া রাখলে জুলুমের সাম্রাজ্যও টিকাইয়া রাখা যায়। সারামাস কাজ করাইয়া, ওয়াশরুমে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে প্রোডাকশন আদায় করে ঈদের আগে বেতন না দিয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় ঠেলে দেয়া যায়।সুঁই সুতা, বোতাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কিনা তা চেক করার নামে পুরুষ সুপারভাইজার কতৃক সব বয়সের নারী শ্রমিকদের দিনে একাধিকবার যৌন হেনস্তা সহ্য করাই যেন গার্মেন্টস নারী শ্রমিকদের "জন্মই আজন্ম পাপ" এর শাস্তি! ৪০ বছর যাবত চলছে এই অমানবিকতা।
ফ্যাসিবাদের পতনের পর সংস্কারের ধোয়া উঠছে চারদিক থেকে। দেশে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। অনেক কিছুতেই সংস্কার চায় কিন্তু বেনিয়া মহাজন গোষ্ঠীর কাউকে বলতে শুনবেন না আমাদের ইকোনোমিক সিস্টেম সংস্কার করার দাবী করেছে, কেউ ইকোনমিক সংস্কারের রোডম্যাপ দাবী করছেনা! আমাদের দেশের মূল শক্তি ছিল কৃষি, অথচ আমরা কৃষিপণ্য এক্সপোর্টে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারিনি। কেউ তলিয়ে দেখছিনা- কেন আমাদের পাট, চা, চিংড়ির মত অর্থকরী পণ্যের এক্সপোর্ট কমে গেলো? নিজেরা এত কাপড় বানাই, বিশ্বজুড়ে আমাদের গার্মেন্টস পণ্য, কিন্তু আমরা কেন বিশ্বে অন্তত একটা কাপড়ের ব্রান্ড দাড় করাইতে পারলাম না? আমরা যেটাকে গর্ব করে বলি- গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, সেটা আসলে শুধু দর্জির কাজ। কৃষি খাতের অনেক যন্ত্রপাতি বানানোয় আমাদের ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠান এখন স্বনির্ভর। অথচ সেখানে রাষ্ট্রের কোনো আনুকুল্য নাই।
যদিও বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯% ভাগ রপ্তানি পণ্য আরএমজি। তবুও অন্য সেক্টরের কথাও চলে আসে। যেমন, সিজনে আলু, আম, কাঠাল, আনারস ছাড়াও আরও অনেক কৃষিজাত লাখ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়, প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে কিভাবে ভ্যালু এড করা যায় সেইটা আমরা শিখিনাই। ফুড প্রসেসিংয়ের কোন আইডিয়া আমাদের নাই। ভারত-থাইল্যান্ড-সিংগাপুর থেকে আমাদের মেডিকেল ডেস্টিনেশন এখন চীনে শিফট করার ধুন্ধুমার আয়োজন চলতেছে। অথচ শুধু মেডিক্যাল সেক্টরেই স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারলে, শুধু দেশী রোগীদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাইতে পারলে নতুন করে ৫-৮ লাখ মানুষের মেডিকেল সেক্টরেই চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব।
যে মেয়েগুলা গার্মেন্টসে রাতদিন মেশিন ঘুরাচ্ছে তারা হাসপাতালে ল্যাব টেকনেশিয়ান, নার্স, আয়া, ফ্রন্টডেস্ক কর্মী, রোগীর এটেনডেন্স হিসেবে কাজ করতে পারতো।
ইপিবি এবং বিজিএমইএ'র হিসাব মতে আমরা বছরে ৫-৬ বিলিয়ন আরএমজি এক্সপোর্ট করছি। অথচ দর্জিগিরির বিল বাদে বাকিসব ম্যাটেরিয়াল ইম্পোর্ট করতে চলে যায়। ফেব্রিক, সুতা, কেমিক্যাল, বোতাম আরএমজির এমন কোন র ম্যাটেরিয়াল আছে যেটা ইম্পোর্ট করতে হয়না?
স্থানীয়ভাবে এতবছরেও আরএমজির র ম্যাটেরিয়ালের কোন উৎপাদনব্যবস্থা করতে পারলাম না। ভারত থেকে গরু চোরাচালান বন্ধ হওয়ায় আমরা গরুর গোসত খাবার বিলাসিতা ছেড়েছি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে কান্নাকাটি করি, আমেরিকা ট্যারিফ বসালে হাহুতাশ করি, চীন জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে কান্নাকাটি করি- আমাদের কান্নাকাটির শেষ নাই, হাহুতাশের শেষ নাই। পরনির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে কান্নাকাটি তো চলতেই থাকবে এই "দুঃখিনী বাংলা" নাম স্বার্থক করতে।
এই ধরনের লাথিগুলা খাওয়া একদিক দিয়ে ভালো। এই যে আরএমজি এক্সপোর্ট করে পেটেভাতে বেঁচে থাকার যে কম্ফোর্টেবল ব্যবস্থায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, সেটা থেকে বের হয়ে আসার সময় এখনই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



