শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....
জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর, জুনাগড়, ইত্যাদি ভারত কিভাবে দখল করে নেয় সেসব কথা সবাই জানেন। সবশেষে নানা ফন্দি-ফিকির কাহিনী করে ১৯৭৫ সালে দখল করে নেয় স্বাধীন সিকিম। এবার এক ঝলক দেখে নিন ভারতের লুটেরা চেহারা। আমরা অনেকেই জানি না বাংলাদেশে ভারতের এই লুটপাট কি পরিমাণ ছিল।
(১) আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ শেষে প্রায় দুইশো ওয়াগন রেলগাড়ী ভর্তি করে ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্রসস্ত্র লুটের অভিযোগ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার।
(সূত্রঃ দৈনিক অমৃতবাজার, ১২ মে,১৯৭৪)
(২) শস্য লুটঃ
★ধান-চাল-গম (৭০-৮০ লাখ টন, গড়ে ১০০ টাকা ধরে): ২১৬০ কোটি টাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
★পাট(৫০ লাখ বেলের উপরে): ৪০০ কোটি টাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
★ত্রাণ-সামগ্রী পাচার: ১৫০০ কোটি টাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার।
★যুদ্ধাস্ত্র, ঔষধ, মাছ, গরু, বনজ সম্পদ: ১০০০ কোটি টাকা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার।
সর্বমোট: ৫০০০ কোটি টাকা যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।
(সূত্র: জনতার মুখপাত্র, ১ নভেম্বর ১৯৭৫)
(৩) বাংলাদেশের শিল্প কারখানা থেকে যন্ত্রাংশ চুরি করে আগরতলায় পাঁচটি নতুন পাটকল স্থাপন! (সূত্রঃ আখতারুল আলম, দু:শাসনের ১৩৩৮ রজনী, পৃষ্ঠা: ১১৫-১১৬)
(৪) যুদ্ধের পর সীমান্তের ১০ মাইল এলাকা ট্রেডের জন্য উম্মুক্ত ঘোষনা। এর ফলে চোরাচালানের মুক্ত এলাকা গড়ে উঠে। পাচার হয়ে যায় দেশের সম্পদ।
( সূত্রঃ আবুল মনসুর আহমদ: আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর, পৃষ্ঠা: ৪৯৮)
(৫) ভারতে বাংলাদেশী জাল টাকা ছেপে এদেশে ছেড়ে দেয়া হত। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ সে সময় বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘জালনোট আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করিয়া দিয়াছে’।
(সূত্রঃ আব্দুর রহিম আজাদ: ৭১ এর গণহত্যার নায়ক কে: পৃষ্ঠা: ৫২)
(৬) আমাদের চোখের সামনে চাল-পাট পাচার হয়ে গেছে সীমান্তের ওপারে, আর বাংলার অসহায় মানুষ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে। (মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম: :দুঃশাসনের ১৩৩৮ রজনী, পৃষ্ঠা: ১১৯-১২৬)
(৭) ১৯৭১ এর অবাঙ্গালীদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তির হরিলুট (সূত্রঃ এম এ মোহায়মেন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগ, পৃষ্ঠা ১৪, ৪৪)
(৮) ফারাক্কা বাধের নামে মরুভূমি করার চক্রান্ত, টাকা বিনিময়ের নামে জাল টাকা ছড়ানো, বর্ডার বানিজ্যের নামে ভারতের বস্তাপঁচা মালের বাজার সৃষ্টি।
(সূত্রঃ আখতারুল আলম, দু:শাসনের ১৩৩৮ রজনী, পৃষ্ঠা: ১১৫-১১৬)
(৯) জয়দেবপুর অর্ডিনেন্স ফ্যাক্টরী থেকে অস্ত্র নির্মানের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ভারতে স্থানান্তরিত হয়। (অলি আহাদ: জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ‘৭৫, পৃ:৫২৮-৫৩১)
(১০) “ঢাকায় এতসব বিদেশী জিনিস পাওয়া যায়! এসব তো আগে দেখেনি ভারতীয়রা। রেফ্রিজারেটর, টিভি, টু-ইন-ওয়ান, কার্পেট, টিনের খাবার-এইসব ভর্তি হতে লাগলো ভারতীয় সৈন্যদের ট্রাকে।”— সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পূর্ব-পশ্চিম, পৃ: ৯২৩
৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ভারত দ্বারা লুট করে নিয়ে যাওয়া এই সম্পদ রক্ষা করতে যেয়েই, অস্ত্র জমা না দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ বিদ্রোহ করেছিল, তার ফলাফল বলা হয় প্রায় ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিহত বা গুম হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের এই অবদান ওই অবদানের জবাবে তাঁদের লুটপাটের এই সকল তথ্য সাথে রাখুন। তাঁদের অবদান আমরা অস্বীকার করি না কিন্তু এর অর্থ আজীবন দাসত্ব বা চিরকৃতজ্ঞতা নয়। চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ বলে কোথাও কিছু নেই।
এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও উল্লেখ করছি, অখন্ড ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা জওহরলাল নেহেরু তার ইন্ডিয়া ডকট্রিনে বলেছেন- ভারত অবশ্যই এ এলাকায় তার প্রভুত্বের বিস্তার ঘটাবে। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য সৃষ্টি করবে। ছোট রাষ্ট্রগুলির বিলোপ অথবা সর্বনাশ ঘটানো হবে। এগুলো রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকবে না, তবে সাংস্কৃতিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে থাকতে পারে। ভারতীয় শাসকদের আদর্শের সাথে হুবুহু মিল আছে -ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েলের।
ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন, ভারতের কাশ্মির, উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবংগ যা ঘটছে একদিন প্রমাণিত হবে এইসব গভর্নমেন্ট এর ফুল নলেজেই হয়েছিলো। ইজরায়েলে তাই প্রমাণও হয়ে গেছে অলরেডি। ভারতে বহুদিন থেকে চলমান মুসলিম নির্যাতন ও নিধন তরান্বিত করতে পহেলগাম ঘটনার চাইতে সুবিজনক এক্সকিউজ হয়না। কেউ যদি মনে করেন মোদি নেতানিয়াহুর চাইতে কোন অংশে কম করবে, ভুল করছেন। গ্রাউন্ড লেভেলে সে বহুদিন ধরেই খেলছে। মুসলিমদের ওপর নীরব নির্যাতন ও খুন খারাপি চলছে বহুদিন যাবত। ইজরায়েল অনলি ইহুদি রাষ্ট্র চায় এবং পলিটিক্যালি মধ্যপ্রাচ্যোর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে চায়। ভারত এই উপমহাদেশে নিয়ন্ত্রণ চায় এবং অনলি হিন্দু রাষ্ট্র চায়। মুসলিম নিধন তাদের জনণের (এট লার্জ) সমর্থন ও মতামতেই হয়। গুটিকয়েক মানুষ হিন্দু বা জিউস সেখানে ম্যাটার করেনা। তাদের মাস পপুলেশনের স্বপ্নই জন্ম দিয়েছে মোদি আর নেতানিয়াহুর। নেতানিয়াহুবাহিনী বোমায় ধ্বংস করছে, ভারত দেশের অভ্যন্তরে সেটা সহজে করতে পারছেনা, মোদিবাহিনী গ্রাউন্ডে মুসলিম নিধন চালাচ্ছে।
পার্থক্য এটাই।
এবার গাজার মুসলিমদের ধর্মের নামে সবচে ভয়াবহ জেনোসাইডের মধ্য দিয়ে একপ্রকার মুছে ফেলেছে ইসরায়েল, কিছু করেনি কেউ। এতোদিন আরো আগ্রহ নিয়ে প্রত্যক্ষ করেছে ভারত (এবং এতে তারা সাহায্যও করেছে)। এখন একই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। এদের চিরদিনের ইচ্ছা ভারতবর্ষ শাসন করার। মোদি বুচার ক্ষমতায় আসার পর- দে আর ডুয়িং এভরিথিং ইন দেয়ার পাওয়ার টু এচিভ দ্য গোল, বহুদিনের গোল। আরো আগেই হতো, রেশিয়ালি পশ্চিমারা এদের লো প্রোফাইলে রাখায় এরা ফুল স্কেল জেনোসাইডে যেতে পারেনি। কিন্তু এখন এরা জানে যে কেউ কিছুই বলবেনা। হিন্দুস্তানে নির্দ্বিধায় আবারো রক্তবন্যা শুরু হবার দ্বারপ্রান্তে। ভারত মুসলিম জেনোসাইড। জানিনা ঠিক কতদূর বিস্তৃত হবে হত্যাযজ্ঞ, বাট দে’ল ট্রাই দেয়ার বেস্ট ফর শিওর।
যার সর্বশেষ উদাহরণঃ
ভারতে বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মুম্বাইয়ে জৈন মন্দির ভাঙার বিরুদ্ধে আন্দোলন, চরম বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, ব্যর্থ বিদেশনীতি, ওষুধ পেট্রল ডিজেলসহ সব নিত্যপন্যের দাম বৃদ্ধি এসব সামলানোর জন্য সবচেয়ে বড় কূটবুদ্ধি হলো হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগিয়ে দেওয়া! এতে সহজেই মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরে যাবে, সবাই দাঙ্গা ফ্যাসাদ নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে! আর উপমহাদেশের একশ্রেণির মানুষরা বুঝে হোক আর না বুঝে হোক ধর্মীয় দাঙ্গা ফ্যাসাদে জড়িয়ে যেতে একমুহূর্তেও দেরি করেনা। মোদি, অমিত শাহ'র মত সাক্ষাৎ শয়তানরা এই সুযোগটাই খুব ভালোভাবে কাজে লাগায়! সেজন্যই মনে হয় কাশ্মীরে জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। সেখানে টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষসহ প্রায় ২৬ জনকে এই নাটকে বলি দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টানও ছিলো।
মোদি সরকার কাশ্মিরের পেহেলগাম ইস্যুতে ভারত পাকিস্তানের সাথে ১৯৬০ সালের 'সিন্ধু নদীর পানিবন্টন চুক্তি' স্থগিত করেছে। ভারত পাকিস্তানের সাথে ওয়াঘা-আটারি এবং অমৃতসর-লাহোর সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারত ইসলামাবাদ থেকে সমস্ত কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে এবং সমস্ত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের নয়াদিল্লি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ, যেকোনো মুহূর্তে দুদেশের যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
ফিরে আসি স্বদেশ ভূমে। বাংলাদেশ ভারতের আগ্রাসনে ক্ষতবিক্ষত একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হলেও এমন কোনো দিক নেই, যেদিকে ভারত বাংলাদেশের উপর আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ না করেছে। এ জন্য আমাদের নষ্ট ভ্রষ্ট রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবও দায়ি। দেশে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সরকার না থাকায় ভারত বিভিন্ন ইস্যুতে জোর ধাক্কার উপর আছে।
প্রেডিকশনঃ -
★ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশকে আবারও জংগী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
★ বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সংঘাত বেড়ে যাবে।
★ মোদি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি করবে।
★ ফ্যাসিবাদের দোসরদের মাধ্যমে দেশজুড়ে গুপ্তহত্যা, নাশকতা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
★ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যার্থ করতে সর্বস্তরে প্রশাসনিক অসহযোগিতা এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত আরও ভয়াবহ হবে।
★ আরাকানে বাংলাদেশ ইন্ডিয়া প্রক্সি যুদ্ধ হবে।
★ পুর্ব তিমুর এর মত স্বাধীন খ্রিস্টান রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
★ পাকিস্তানকে যুদ্ধের দিকে নিতে চাইবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৮