আজ ১৬ জুলাই, ২০২৫ বুধবার মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং ইউনাইটেড ফর দ্য ভিকটিমস অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস (UVED)-এর একটি প্রতিনিধিদলের মধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে আলোচ্য বিষয় ছিলঃ-
★ শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে গুম হওয়া নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন এবং যাঁরা এখনো নিখোঁজ, তাঁদের পরিবারের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা।
★ নিখোঁজদের ভাগ্য ও অবস্থান নির্ধারণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, এই মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর জন্য অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, ক্ষতিপূরণ ও আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসন, জীবিত ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য মনোসামাজিক সহায়তা এবং ভবিষ্যতে এমন গুম যেন আর না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ।
★ এখনও নিখোঁজ থাকা ব্যক্তিদের ভাগ্য ও অবস্থান নির্ধারণে একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
★ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) আওতায় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও অমানবিক কার্যকলাপে জড়িত বাহিনীর সদস্যদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (ICT) আওতায় বিচার করতে হবে। গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত একটি স্বাধীন আইন অবিলম্বে প্রণয়ন করতে হবে।
★ “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন”-এর আদলে একটি স্বাধীন ও দক্ষ ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে। যা রাষ্ট্রীয় সহিংসতার শিকার ও তাঁদের পরিবারের আর্থিক, মানসিক ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করবে। শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ৩,৫০০ ব্যক্তি enforced disappearance-এর শিকার হয়েছেন, যাঁদের অনেকেই এখনো চরম শারীরিক, মানসিক, আইনি ও অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।
★ রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের সমস্ত আইনি খরচ বহন করতে হবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগ করে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের বিপুল অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে যেন ভুক্তভোগীরা অসহায় না থাকেন, সেজন্য UVED আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠনের আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রের সমন্বয়ে এই দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।
★ “নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (প্রতিরোধ) আইন, ২০১৩”-এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্লাস্ট বনাম বাংলাদেশ মামলায় উচ্চ আদালত ও আপিল বিভাগের নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতে হবে। রিমান্ডের নামে হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
★ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের জন্য বহুলভাবে অভিযুক্ত RAB বিলুপ্ত করতে হবে। গুমকে ন্যায্যতা দিতে বহুল অপব্যবহৃত "সন্ত্রাসবিরোধী আইন" অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
UVED বিশ্বাস করে, উপরোক্ত দাবিগুলোর বাস্তবায়ন ভুক্তভোগীদের সত্য, বিচার ও মর্যাদার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। একইসঙ্গে, এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও আইনশাসনের রাষ্ট্রে রূপান্তরের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
UVED থেকে প্রায় ২০০ জন গুম হওয়া ব্যক্তির তালিকা মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গুম সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি সুসংগঠিত প্রস্তাবনা পেশ করে।
আলোচ্য সভায় এটর্নি জেনারেল মহোদয়কে দাপ্তরিক সহায়তা করেন এস্টিস্ট্যন্ট এটর্নি জেনারেল এডভোকেট কাজী তামান্না ফেরদৌস এবং UVED এর পক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ভুক্তভোগী UVED আহ্বায়ক মারুফ জামান। উপস্থিত ছিলেন UVED সদস্য সচিব Humayun Kabir, সদস্য Iqbal Chowdhury Nasrin Jahan Smrity এবং জাহিদ হাসান।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




