somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জের পাথর শিল্প: “পরিবেশ রক্ষার” নামে এক অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ....

১২ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জের পাথর শিল্প: “পরিবেশ রক্ষার” নামে এক অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ....

ভোলাগঞ্জ-কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথরের ব্যবসা ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। আমার পরিচিত একজন ব্যবসায়ীও ঐ অঞ্চলে পাথর ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তার কাছে বিস্তারিত তথ্য জেনে আমি এই পোস্ট লিখছি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জ, একসময় দেশের অন্যতম সক্রিয় অর্থনৈতিক কর্মাঞ্চল ছিল। এখানকার সাদা পাথর শুধু দেশের নির্মাণশিল্পকেই জোগান দিত না, রপ্তানি হয়ে ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা পর্যন্ত পৌঁছাত।


কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে “পরিবেশ রক্ষা”র নামে এই অঞ্চলের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম ধাপে ধাপে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে—

★ শত শত পাথর কোয়ারি বন্ধ হয়ে পড়ে।
★ হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়ে।
★ কোম্পানিগঞ্জের প্রাণচঞ্চল বাজারগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে।
★ পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি ধসে পড়ে।
★ ভারতের লাভ, বাংলাদেশের ক্ষতি।

পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো তাদের নিজস্ব পাথর মজুত রাখতে পারত না। ফলে ভারতকে বাংলাদেশের পাথরের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশে উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর ভারত তাদের অংশে শত শত কোয়ারি স্থাপন করে, পাহাড় কেটে বিপুল পরিমাণ পাথর সংগ্রহ করে।
বর্তমানে তারা বছরে গড়ে ৫০০–৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রাশড স্টোন বাংলাদেশকেই বিক্রি করছে- যে পাথর একসময় আমাদের মাটির নিচে বিনামূল্যে পাওয়া যেতো।

এতে দুই ধরণের ক্ষতি হচ্ছেঃ

(১) অর্থনৈতিক ক্ষতি: আমদানি খাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়
(২) কর্মসংস্থানের ক্ষতি: স্থানীয় মানুষ কাজ হারাচ্ছে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

পরিবেশ বনাম বাস্তবতাঃ

পার্শ্ববর্তী উজানের দেশ থেকে ভাটি অঞ্চল বাংলাদেশের
ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জে প্রাকৃতিক নিয়মেই লাখ লাখ টন পাথর নেমে আসতো। নেমে আসা পাথরগুলোই ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জের মানুষ উত্তলন করে বিক্রি করতো। যে যুক্তিতে বাংলাদেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিলো- "পরিবেশ রক্ষা"- তা বাস্তবে দ্বিমুখী ফল দিয়েছে।

★ নদীর নাব্যতা কমে গেছে।
★পাথরের প্রাকৃতিক বাধা অপসারণ না হওয়ায় বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নামতে পারছে না, ফলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।

২০২২ সালের জুনে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪৫২ মিমি। ২০২৪ সালের জুনে তা বেড়ে ২১৫৫ মিমি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও শিলং মালভূমিতে বৃষ্টির পানি ডাউকি ও সারি নদী হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে, কিন্তু নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়- ফলে সিলেট ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে।

পাথর; প্রাকৃতিক আশীর্বাদ থেকে অভিশাপের যাত্রা....

এই অঞ্চলের সাদা পাথর ছিল প্রকৃতির দেওয়া বিরল অর্থনৈতিক সম্পদ। রাষ্ট্র যদি দায়িত্বশীলভাবে- পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে- পাথর শিল্প চালু রাখত, তাহলে-
★দেশের নির্মাণ শিল্প আমদানি নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেত।
★ রপ্তানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ত।
★ স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেত।
★ নদীর নাব্যতা রক্ষা পেয়ে বন্যার ক্ষতি কমানো সম্ভব হতো।

রাষ্ট্রের করণীয়ঃ

(১) বিজ্ঞানভিত্তিক কোয়ারি ম্যানেজমেন্টঃ পরিবেশগত মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট সময় ও এলাকায় পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া।
(২) শ্রমিক পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণঃ বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের আবার এই শিল্পে ফিরিয়ে আনা।
(৩) স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনঃ বাজার, পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন সক্রিয় করা।
(৪) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কৌশলঃ ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিন্যাস করে পাথর রপ্তানি পুনরায় চালু করা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×