ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জের পাথর শিল্প: “পরিবেশ রক্ষার” নামে এক অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞ....
ভোলাগঞ্জ-কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথরের ব্যবসা ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। আমার পরিচিত একজন ব্যবসায়ীও ঐ অঞ্চলে পাথর ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তার কাছে বিস্তারিত তথ্য জেনে আমি এই পোস্ট লিখছি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জ, একসময় দেশের অন্যতম সক্রিয় অর্থনৈতিক কর্মাঞ্চল ছিল। এখানকার সাদা পাথর শুধু দেশের নির্মাণশিল্পকেই জোগান দিত না, রপ্তানি হয়ে ভারতের মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা পর্যন্ত পৌঁছাত।

কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে “পরিবেশ রক্ষা”র নামে এই অঞ্চলের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম ধাপে ধাপে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে—
★ শত শত পাথর কোয়ারি বন্ধ হয়ে পড়ে।
★ হাজার হাজার শ্রমিক ও ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়ে।
★ কোম্পানিগঞ্জের প্রাণচঞ্চল বাজারগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে।
★ পুরো অঞ্চলের অর্থনীতি ধসে পড়ে।
★ ভারতের লাভ, বাংলাদেশের ক্ষতি।
পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার আগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো তাদের নিজস্ব পাথর মজুত রাখতে পারত না। ফলে ভারতকে বাংলাদেশের পাথরের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশে উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর ভারত তাদের অংশে শত শত কোয়ারি স্থাপন করে, পাহাড় কেটে বিপুল পরিমাণ পাথর সংগ্রহ করে।
বর্তমানে তারা বছরে গড়ে ৫০০–৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রাশড স্টোন বাংলাদেশকেই বিক্রি করছে- যে পাথর একসময় আমাদের মাটির নিচে বিনামূল্যে পাওয়া যেতো।
এতে দুই ধরণের ক্ষতি হচ্ছেঃ
(১) অর্থনৈতিক ক্ষতি: আমদানি খাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়
(২) কর্মসংস্থানের ক্ষতি: স্থানীয় মানুষ কাজ হারাচ্ছে, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে
পরিবেশ বনাম বাস্তবতাঃ
পার্শ্ববর্তী উজানের দেশ থেকে ভাটি অঞ্চল বাংলাদেশের
ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জে প্রাকৃতিক নিয়মেই লাখ লাখ টন পাথর নেমে আসতো। নেমে আসা পাথরগুলোই ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানিগঞ্জের মানুষ উত্তলন করে বিক্রি করতো। যে যুক্তিতে বাংলাদেশে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছিলো- "পরিবেশ রক্ষা"- তা বাস্তবে দ্বিমুখী ফল দিয়েছে।
★ নদীর নাব্যতা কমে গেছে।
★পাথরের প্রাকৃতিক বাধা অপসারণ না হওয়ায় বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নামতে পারছে না, ফলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
২০২২ সালের জুনে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৪৫২ মিমি। ২০২৪ সালের জুনে তা বেড়ে ২১৫৫ মিমি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও শিলং মালভূমিতে বৃষ্টির পানি ডাউকি ও সারি নদী হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে, কিন্তু নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়- ফলে সিলেট ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে।
পাথর; প্রাকৃতিক আশীর্বাদ থেকে অভিশাপের যাত্রা....
এই অঞ্চলের সাদা পাথর ছিল প্রকৃতির দেওয়া বিরল অর্থনৈতিক সম্পদ। রাষ্ট্র যদি দায়িত্বশীলভাবে- পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে- পাথর শিল্প চালু রাখত, তাহলে-
★দেশের নির্মাণ শিল্প আমদানি নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেত।
★ রপ্তানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ত।
★ স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেত।
★ নদীর নাব্যতা রক্ষা পেয়ে বন্যার ক্ষতি কমানো সম্ভব হতো।
রাষ্ট্রের করণীয়ঃ
(১) বিজ্ঞানভিত্তিক কোয়ারি ম্যানেজমেন্টঃ পরিবেশগত মূল্যায়ন করে নির্দিষ্ট সময় ও এলাকায় পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া।
(২) শ্রমিক পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণঃ বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের আবার এই শিল্পে ফিরিয়ে আনা।
(৩) স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনঃ বাজার, পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন সক্রিয় করা।
(৪) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কৌশলঃ ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিন্যাস করে পাথর রপ্তানি পুনরায় চালু করা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



