somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

এ বি এম খায়রুল হকঃ বিচারবিভাগের কলংক....

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বি এম খায়রুল হকঃ বিচারবিভাগের কলংক....

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রধান বিচারপতির আসনে বসে অনৈতিকতা ও বিতর্কের সবচেয়ে কুখ্যাত দৃষ্টান্তগুলোর একটি হয়ে আছেন এ বি এম খায়রুল হক। এক সময় যিনি “আইনের শাসন” ও "ন্যায় প্রতিষ্ঠা''র শপথ নিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাকেই হাতকড়া পরা অবস্থায় নিম্ন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের জামিন চাইতে হয়েছে!

১. ক্ষমতার আসনে নৈতিক দেউলিয়াত্বঃ
প্রধান বিচারপতির পদ শুধু একটি দায়িত্ব নয়- বরং ন্যায়, সততা ও নিরপেক্ষতার প্রতীক। কিন্তু খায়রুল হক সেই মর্যাদাকে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার বানিয়েছেন।
তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ধ্বংস করেন, যা দেশকে একতরফা নির্বাচনের পথে ঠেলে দেয় এবং শেখ হাসিনাকে নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক তৈরী করতে সহায়তা করেছে। তিনি রায় জালিয়াতি ও সংশোধন করে সংবিধান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। প্রকাশ্য রাজনৈতিক পক্ষপাত দেখিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা কলঙ্কিত করেছেন। পদলেহন করা নিকৃষ্ট মানুষ হিসেবে নিজেকে ইতিহাসের পাতায় প্রতিষ্ঠত করেছেন।

২. গুরুতর অভিযোগঃ
অবসরের পরও তিনি আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো গুরুতর। নিজেকে দুস্থ দেখিয়ে রাষ্ট্রের ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন।
নিজ নামে পূর্বাচল প্লট নিয়ে কেলেঙ্কারি করেছেন।

এসব অভিযোগের প্রক্রিয়া চলতে চলতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং তাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা হয়- যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন দৃশ্য।

৩. হাতকড়ার প্রতীকী বার্তাঃ
আইনের চোখে সবাই সমান- তা তিনি রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি বা সাধারণ নাগরিক হোন। প্রধান বিচারপতির মতো ক্ষমতাবান ব্যক্তি যখন হাতকড়া পরে আদালতে আসেন, তখন তা এক কঠিন শিক্ষা দেয়- “ন্যায়ের আসনে বসে অন্যায় করলে, শেষ পরিণতি হাতকড়া আর কাঠগড়া।”

৪. আদালতের বিব্রতকর দৃশ্যঃ
যিনি একদিন আদালতের সর্বোচ্চ আসনে বসতেন, তিনি আজ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের মুক্তির জন্য আকুতি করছেন- এই দৃশ্য বিচার বিভাগের জন্য এক করুণ কিন্তু শিক্ষণীয় অধ্যায়।

৫. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিচারপতিদের জন্য সতর্কবার্তাঃ
পদমর্যাদা আপনাকে অপরাধ থেকে রক্ষা করবে না।
রাজনৈতিক স্বার্থে রায় দিলে ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না। অবসরের পরও আইন আপনাকে খুঁজে বের করবে। ন্যায়বিচার বিক্রি করলে তার মূল্য দিতে হবে নিজের হাতেই হাতকড়া পরে।

৬. জনগণের প্রত্যাশাঃ
বাংলাদেশের জনগণ চায় বিচারপতিরা হবেন সৎ, নিরপেক্ষ ও দায়বদ্ধ। খায়রুল হকের মতো কেউ যেন আর বিচারকের আসনে বসে আইনের শাসনকে কলুষিত করতে না পারে- এ জন্য কঠোর নজরদারি ও শাস্তির দৃষ্টান্ত রাখতে হবে।

উপসংহারঃ
খায়রুল হক এখন শুধুই একটি নাম নয়- এটি বিচার বিভাগের জন্য সতর্ক সংকেত। ন্যায়ের আসনে বসে অন্যায় করলে, শেষ পরিণতি হাতকড়া আর কাঠগড়া। যারা ক্ষমতার দালালি করবে, ইতিহাস তাদের টেনে নামাবে, আর আইন বেঁধে দেবে লোহার শিকলে।

****

হাতকড়া বিতর্কঃ
এডভোকেট জেড আই খান পান্না ও
জবি'র আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের জামিন প্রক্রিয়ায় ‘অদৃশ্য বাধা’ ও তার পক্ষে ন্যায়সংগত আইনি লড়াইয়ের পথ খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন!

তারপর এডভোকেট জেড আই খান পান্না ও এডভোকেট মঞ্জিল মোর্শেদ হাইকোর্টে রিট পিটিশন করে বলেছেন- 'সাবেক প্রধান বিচারপতিকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা অন্যায়'।

আমার মতে, তাদের এই অবস্থান জনপ্রত্যাশা ও ন্যায়বিচারের মূলনীতির পরিপন্থী। প্রথমত, প্রধান বিচারপতির আসনে বসে যখন একের পর একটা কুকাজ করে যাচ্ছিলো, তখন এই তিন জ্ঞানপাপী একটা রিট করা দূরের কথা, এর বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেননি!

কেন আমার চোখে উল্লেখ্য তিনজনকে বাটপার এবং তাদের রিট৷ আবেদন সঠিক মনে হয় না-

বাংলাদেশের সংবিধান বলছে- “আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান।” সাবেক প্রধান বিচারপতি হলেও, তিনি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলে তার প্রতি আইন প্রয়োগে কোনো ভিন্ন আচরণের সুযোগ নেই। সাধারণ আসামিকে যেখানে হাতকড়া পরানো হয়, সেখানে সাবেক বিচারপতিকে ছাড় দেওয়াই হবে “আইন সবার জন্য সমান নয়”- এ বার্তা দেওয়া।

পদমর্যাদা অপরাধের ঢাল হতে পারে না।
যদি কেউ মনে করেন- উচ্চপদে থাকা ব্যক্তি হাতকড়া ছাড়া আদালতে আসবেন, তবে এটি একধরনের “পদমর্যাদাভিত্তিক বিশেষাধিকার”। এটি আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জনগণের আস্থা রক্ষার প্রশ্নঃ
বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা নির্ভর করে ন্যায় ও সমতার প্রয়োগে। ক্ষমতাধর বা প্রাক্তন ক্ষমতাধরদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিলে জনগণের মনে জন্মাবে- “আইন কেবল দুর্বলদের জন্য”। এই ধারণা বিচারব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।

প্রতীকী গুরুত্বঃ
খায়রুল হক ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ বিচারক। তার হাতকড়া পরা আদালতে উপস্থিতি শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়- বরং এটি প্রমাণ করে যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই প্রতীকী বার্তাই জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

শেষ কথাঃ
রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, হাতকড়া পরানো অন্যায়। কিন্তু আমি একজন সাধারণ সচেতন নাগরিক হিসাবে বলি- পদমর্যাদার কারণে হাতকড়া না পরানোই হবে আসল অন্যায়। আইনের প্রয়োগে ব্যতিক্রম তৈরি হলে সেটিই হবে ন্যায়বিচারের প্রতি চরম অবমাননা।
অতএব, ন্যায়বিচারের পথে আবেগ নয়, নীতি চাই।


ধন্যবাদ সবাইকে।

(বাংলাদেশ টেলিভিশনে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিচার প্রক্রিয়া কোন দৃষ্টিতে দেখি" আলোচনা অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনেক দিন পর দেখা হলো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ব্লগার বন্ধু বাকী বিল্লাহ (সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা), Faisal Ahmed Bahar (সাবেক ছাত্রদল নেতা, বর্তমানে চাঁদপুর জেলা যুব দলের সাধারণ সম্পাদক) এবং Saqeeb Anwar (সাংগঠনিক সম্পাদক, নাগরিক ঐক্য) অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় মজলুম সাংবাদিক Sayed Khan।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:০৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×