(চলতি প্রথা বিরোধী একটা পোস্ট)
আমাদের সেনাবাহিনীর অনেক সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা আছে কিম্বা থাকতে পারে। মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকী, জেনারেল আজিজ, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, ব্রীগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল (আশা)দের মতো অনেক নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া বর্বর সদস্যও সেনাবাহিনীতে কম নাই- এটা অস্বীকার করা যায় না(এই শ্রেণীর সেনা কর্মকর্তারা সবাই শেখ হাসিনার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সেনাবাহিনীর নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দানবে পরিনত হয়েছে)। কিন্তু স্বৈরশাসক উৎখাতের সময় বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকারই সব বাহিনীকে নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।
এখন কিছু রাজনৈতিক নেতা ও ইউটিউবার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছে এবং বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমুলক প্রচারণা চালাচ্ছে। এনসিপি নামক দলের নেতারা প্রকাশ্যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড খুবই বিপজ্জনক। ইতিহাস সাক্ষী- সেনা বা জনতা উস্কানিতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হলে তা সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রত্যাশিত এবং ধ্বংসাত্মক ফলাফল ডেকে আনতে পারে। সেনাবাহিনীকে অযাচিতভাবে আক্রমণ করা মানে- দেশের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলা। অতএব, আমাদের উচিত, সংযম বজায় রাখা।
একই সাথে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যেভাবে ড. ইউনুস সাহেবকে অপমান-অপদস্ত ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে- এটা মোটেই শোভন নয়। দেশের সবচেয়ে অস্থিতিশীল মুহূর্তে তাঁকেই ধরে এনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাই তাঁকে ঘিরে বিষোদ্গার করা মোটেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ডক্টর ইউনুস হয়তো প্রশাসনিক অভিজ্ঞতায় খুব দক্ষ নন এবং তার টিমের বেশীরভাগ সদস্যই তাদের দায়িত্বে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেননি। তবে একথা বিশ্বাস করি- ডক্টর ইউনুস কখনোই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না।
ড. আসিফ নজরুল দীর্ঘদিন ধরেই ফ্যাসিবাদ, দমননীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। লেখক, শিক্ষক ও নাগরিক হিসেবে তিনি স্পষ্টভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রজনতার অন্যতম দায়িত্বশীল অবিভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন। উপদেষ্টা হিসেবেও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে।
কিন্তু দুঃখজনক হলো- এমন একজন মানুষকে নিয়েও অপমান, অপদস্ত ও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। এটি কেবল ব্যক্তিকে নয়, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও আঘাত করে। সমালোচনা গ্রহণযোগ্য, কিন্তু কে কার শাশুড়ি, কে কার স্ত্রীর বান্ধবী- তা নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ কখনো কাম্য নয়।
গণতান্ত্রিক সমাজে সমালোচনা থাকবে, ভিন্নমত থাকবে- কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ বা অবমাননা কোনো সভ্য আলোচনার অংশ হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনার মতো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার নয়। যারা ড. আসিফ নজরুলকে আক্রমণ করছেন, তারা মূলত সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে অবস্থান করছেন।
আমরা কেউই ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে নই। যাকে তাকে ইচ্ছামত দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর এবং বিভিন্ন দেশের এজেন্ট বানিয়ে দিচ্ছি- এটা ঠিক নয়। ব্যক্তি নয়- তার কাজ, নীতি ও ভূমিকা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা প্রয়োজন। কারণ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে প্রতিটি সাহসী কণ্ঠই মূল্যবান। তাই ব্যাক্তি সমালোচনা নয়, বরং দায়িত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা উচিৎ- যাতে দ্বায়িত্বশীল যারা তারা দেশ ও জাতির স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাহসী কণ্ঠগুলোকে আমাদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



