somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Equilibrium(2002) মুভি রিভিউ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
“আপনার অনুভূতি কি?”- মুন্নী সাহা'র এই প্রশ্ন নিয়ে আমাদের অনেকেরই সুখস্মৃতি আছে। অনেক ট্রোল আছে অনলাইনে।


আচ্ছা,এমন একটি পৃথিবীর কথা কল্পনা করুন যেখানে অনুভূতি'র অস্তিত্ব নেই। কেউ কিছুই অনুভব করছে না; রাগ,ক্ষোভ,দুঃখ,উদারতা,সহানুভূতি আর ভালবাসা-এসব শুধুমাত্র শব্দ। কেমন হবে সে সমাজ?? আপাতদৃষ্টিতে নির্ঝঞ্ঝাট হওয়ার কথা। কেননা আপনি যদি কিছুই অনুভব না করতে পারেন তাহলে আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্যান্ত তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ডুবে গেলে আপনি মন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবেন না। আপনার যদি রাগ হিসেবে পরিচিত কোন অনুভূতি না থাকে আপনি ধর্ষণের হুমকি দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পিটিয়ে বের করে দেওয়া নিয়ে কিছুই বলবেন না। সাগর-রুনি'র হত্যার বিচার চাইবেন তো দূরের কথা,মহসিন আলীর সমালোচনাও করবেন না। চিৎকার করে কাঁদতে চাইবেন না স্বাধীন দেশের মাটিতেই বীর সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস মৃত্যু দেখে। কতটাই না নির্ঝঞ্ঝাট হবে সেই সমাজ।


Equilibrium মুভিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তেমনই এক সমাজের চিত্র। এ হলো ২০৭২ সালের এক সমাজব্যবস্থা যার নাম Libria। মানবজাতির উন্নতি,সমৃদ্ধি আর ঐক্যের লক্ষ্যে সে সমাজকে করা হয়েছে অনুভুতিহীন। জাতির এক স্বপ্নদ্রষ্টা পিতা এমন সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে Grammaton Cleric,ধ্বংস করছে মানুষের মনে অনুভূতি জাগ্রত করার সকল উৎস।

Libria এর পতাকা।

নিজেদের অনুভূতি শূণ্য রাখার জন্য সকল নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে Prozium নামের ঔষধ। অতঃপর যে বা যারা ঝামেলা বাঁধানোর সুপ্ত অথবা বিলুপ্ত প্রয়াসে অনুভূতিসম্পন্ন থাকবেন তাদের দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।
কি ভাবছেন? বাঁচতে চান এমন সমাজে? অবশ্যই নাহ। কারণ without feelings, breath is just a clock ticking.. মুভিটিকে সায়েন্স ফিকশন হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইটে। মুভিটির কাহিনী এগিয়েছে এমন এক Cleric কে দিয়ে যার স্ত্রীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল অনুভূতিসম্পন্ন হওয়ার অপরাধে। সেই Cleric জাতির জনকের স্বপ্নের প্রতি এতটাই আজ্ঞাবহ ছিলেন যে এই ঘটনা তাঁর কাছে কিছুই ছিল না। অবশেষে তিনিই অনুভব করতে শুরু করেন এবং যোগ দেন সেই সব লোকদের দলে যারা এই অনুভূতি শূন্য সমাজব্যবস্থার অবসান চায়।

council অফিস হিসেবে বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়াম ব্যবহৃত হয়েছে মুভিতে।


মুভিটিতে বেশ কিছু দৃশ্যের দৃশ্যায়ণ ছিল অনবদ্য। যেমন প্রথম একশন সিনটি। এক অন্ধকার বদ্ধ ঘরে আশ্রয় নেয়া সশস্ত্র প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হত্যা করতে Cleric দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করেন। এরপর তার অস্ত্র চালনার পারদর্শীতা দেখাতে ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র গান ফ্ল্যাশকে। এবং হত্যাযজ্ঞের পর Cleric এর দানবীয় রূপ প্রকাশে ব্যবহার করা হয় অস্ত্রের উত্তপ্ত মুখকে।


সেই দৃশ্যের ভিডিও লিংক

Cleric এর মনের মধ্যে চলতে থাকা দ্বন্দ্বকে নগ্নভাবে দেখাতে ব্যবহার করা হয়েছে আয়নার। এক মহিলার বাড়িতে অভিযান চালাতে গিয়ে Cleric মহিলাকে জোর করেন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতে। কিন্তু তিনি নিজেই নিজের এই বর্বর রূপ দেখে ভেতরে চমকে উঠেন।


লুকিয়ে অনুভূতির স্বাদ নিয়ে চলা Cleric দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে উঠেন। এমন করে জেগে উঠা অন্ধকারে বাস করা মানুষের আলো দেখতে চাওয়ার যে তৃষ্ণা এবং নিজের চারদিকের অন্ধকার চিড়ে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে Cleric কে দিয়ে জানালার পর্দা ছিঁড়ে,অতঃপর দৌড়ে নিজের ডোজ নিতে গিয়েও শেষ মুহুর্তে না নেওয়ার মধ্য দিয়ে।


লুকিয়ে আরো যারা অনুভূতির চর্চা করেন,তাদের গোপন আস্তানা গুড়িয়ে দিতে গিয়ে Cleric এর রক্ত দেখে আঁতকে উঠা এবং লুকিয়ে বোটোফেন শুনে কেঁদে উঠা Cleric এর মানসিক বিদ্রোহের প্রকাশ ছিল। এরই পথ ধরে একটি কুকুরছানাকে বাঁচাতে গিয়ে বাহিনীর বাকিদেরকে মেরে ফেলার মধ্য দিয়ে আসে সেই বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশ। যদিও কুকুর মেরে ফেলার দৃশ্যের ব্যবহৃত অস্ত্র আর সাউন্ড ইফেক্টে ব্যবহৃত একই ছিল না।


বোটোফেন শুনে কান্নার দৃশ্য
কুকুর ছানাকে বাঁচানোর দৃশ্য

ডায়ালগের দিক দিয়ে ভাল লেগেছে Cleric-Mary O’Brien এর জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যকার সংলাপ।
সংলাপের লিংক
এছাড়া Vice-Council Dupont এর সাথে Cleric এর প্রথম সাক্ষাত এর সংলাপ গুলোও যুতসই।
Cleric এর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন Christian Bale। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে Emily Watson, Taye Digges, William Fichtner এর অভিনয় ভাল লেগেছে। Equilibrium পরিচালনা করেছেন Kurt Wimmer,কাহিনীও তাঁর। ভদ্রলোক এর ঝুড়ি থেকে এরপর Salt, Total Recall এর মত কাহিনীও বেরিয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফির যজ্ঞ সামলেছেন Memoirs of a Geisha’র জন্য একাডেমী এওয়ার্ড পাওয়া Dion Beebe। হালের Gangster Squad, Green Lantern এরও তিনিই সিনেমাটোগ্রাফার।

বার্লিনের এই subway কে মুভিতে Cleric দের হেডকোয়ার্টার হিসেবে দেখানো হয়।

২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Equilibrium এর কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটে Cleric এর হাতে Libria সমাজব্যবস্থার স্বপ্নদ্রষ্টা পিতার উত্তরসূরি Tetragrammaton Council এর পতনের মধ্য দিয়ে। এই মুভির IMDb রেটিং ৭.৬/১০।
বর্তমান পৃথিবীর সবগুলো Libria’র পতন হোক। অনুভূতির জয় হোক।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৩৭
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঘ আর কুকুরের গল্প......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

বাঘ আর কুকুর দুটোই হিংস্র এবং সাহসী প্রাণী। বাঘ, কুকুর যতই হিস্র হোক মানুষের কাছে ওরা নেহায়েতই পোষ মেনে যায়। আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে অনেক নেতাদের 'বাঘের বাচ্চা' বলে বিরাটত্ব জাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমরা উকিলরা কেউ চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াবো না , না এবং না

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২




সাবাস বাংলাদেশের উকিল । ...বাকিটুকু পড়ুন

আগরতলায় হাইকমিশনে হামলা কাকতালীয় না কি পরিকল্পিত?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২

গতকাল (২ ডিসেম্বর) ভোরে আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভের পর ন্যাক্কারজনকভাবে আক্রমণ করে। বিভিন্ন তথ্যে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের সাথে যুদ্ধ করে ভারত লাভবান হবে বলে মনে করি না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০



আমাদের দেশে অনেক মুসলিম থাকে আর ভারতে থাকে অনেক হিন্দু। ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধে মুসলিমদের সাফল্য হতাশা জনক নয়। সেজন্য মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশ সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছে।মুসলিমরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড - শেখ হাসিনা।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৬


৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পলায়নের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করা নতুন সরকার কে বিপদে ফেলতে একের পর এক রেকর্ড ফোন কল ফাঁস করতে থাকেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×