somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্যরকম ক্লাসরুম!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চারদিকে কুয়াশা। আশপাশের কিছুই দেখার উপায় নেই। দূর থেকে বাতাসের সাথে ভেসে আসছে বাচ্চাদের কোলাহল। আমি শীতে থরথর করে কাঁপছি, হাত-পা শীতল হয়ে আসছে। আমি অনেক চেষ্টা করছি পা সামনে এগোতে কিন্তু পারছি না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে দেখলাম কোন লাভ হচ্ছে না। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম। এরপর আবার চেষ্টা করলাম। এইতো এইবার আমি হাঁটতে পারছি। আমার চারপাশে কেমন যেন একটা বিষণ্ণতার ঘোর লাগা ভাব। একটু সামনে এগোতেই দেখলাম স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাচ্ছে। তখনই বুঝলাম আমি একটা স্কুলের মাঠে দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম বাচ্চারা যার যার শ্রেণীকক্ষে ঢুকে যাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য পুরো মাঠটা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। শুধু আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম আর আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। কিভাবে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে সকাল বেলা বন্ধুদের সাথে হাঁটতে হাঁটতে স্কুলে যেতাম আর বিকেলে কি খেলবো সেটার প্লান করতাম! স্কুলে যাওয়াটাও যেন একটা খেলা ছিলো। কিছুক্ষণ পর আমি এগিয়ে গেলাম শ্রেণীকক্ষের কাছে। একটি জানালা ধরে আমি দাঁড়ালাম এবং খুব আগ্রহ নিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলাম কি হচ্ছে। দেখলাম ক্লাসের পেছনের দুই সারির বাচ্চারা একদল আরেক দলের সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তাদের ডানপাশে দুজন কলম খেলছে আর বাকিরা যে যার মত কথা বলছে। এই দৃশ্য দেখে আমি ভাবলাম যাই আমি একটু ভেতরে ঢুকে ওদের সাথে খেলি। যেই ভাবা সেই কাজ। দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখলাম চেয়ারে বসে একজন খুব মনোযোগের সাথে মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ গেম খেলছে তাই আমি ও আর ক্লাসে ঢুকতে না পেরে হাল্কা একটা ক্রাশ খেলাম এরপর এক বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'উনি কে?' বাচ্চাটি বলল, 'আমগো ম্যাডাম।' আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, 'তোমরা কোন ক্লাসে পড়?' বাচ্চাটি বলল, 'আমরা কেলাস টু।
আমি তখন বললাম, 'তোমাদের টিচার তোমাদের পড়াচ্ছে না কেন?' বাচ্চাটি বলল, 'আমরা তো পড়তাছি, দেখতাছেন না আমগো সামনে বই খুলা, ম্যাডামের পড়ানো লাগবো কেন?' এই উত্তর শুনে আমি আবার জানালায় গিয়ে দাঁড়ালাম। কেমন একটা শনশন ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগছে তাই আমি আর ঐ জানালায় দাঁড়াতে পারলাম না। এবার দেখলাম দ্বিতীয় ক্লাসরুমের একটা জানালার পাশের দেয়ালে লেখা, 'দ্যা মেডিওকার টিচার টেলস, দ্যা গুড টিচার এক্সপ্লেইন্স, দ্যা সুপিরিয়র টিচার ডেমন্সট্রেট, দ্যা গ্রেট টিচার ইন্সপায়ার।' লেখাটি দেখে আমি খুব অবাক হয়ে ভাবলাম, বাহ কি চমৎকার কথা! আমি দৌড়ে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম। যে ক্লাসের দেয়ালে এত সুন্দর কথা লেখা সেখানে নিশ্চয়ই অন্যরকম কিছু হবে। দেখলাম ক্লাশরুমের সব বাচ্চারা তাদের খাতায় লিখছে কিন্তু চোখগুলো বোর্ডের দিকে। আর একজন শিক্ষিকা যা যা লিখছে বাচ্চাগুলিও ঠিক তাই তাই তাদের খাতায় লিখছে। তখন ভাবলাম শিক্ষকটি সুপিরিয়র তাই ডেমন্সট্রেট করছে। হঠাৎ একজন দাড়িয়ে বলল, 'ম্যাডাম রুকসানা তো আপনি যা লিখতেছেন সবই তুলতাসে। কিন্তু আফনি না কইলেন যে খালি উত্তর তুলবার।' এরপর ম্যাডাম বলল, 'পরীক্ষার সবকিছু বোর্ডে লিখা দিচ্ছি তাও ঠিকমত তুলবার পারোস না? খালি উত্তর তুলবি।' আমি তখন একটি বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কি পরীক্ষা হচ্ছে তোমাদের?' বাচ্চাটি বলল, 'ফাইলান পরীক্ষা।'
বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সত্যিই অন্যরকম ক্লাসরুম! তারপর হঠাত মনে হল কে যেন আমাকে দূর থেকে ডাকছে। আমি খুব চেষ্টা করলাম বোঝার, আসলে আমার সাথে কি হচ্ছে? আমি কোথায় এসেছি? কি দেখছি? কি শুনছি? এরপর আমি অনুভব করলাম, আমার চোখের উপর থেকে কানের দিকে শীতল ঠাণ্ডা কিছু বয়ে যাচ্ছে। আমি সাথেসাথে লাফ দিয়ে উঠলাম এবং দেখলাম ঘড়িতে সকাল ৯ টা বাজে। এরপর বুঝলাম আমি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম আর এলারম টা ও শুনি নাই। পানির ছিটা না দিলে তো আজ ঘুমই ভাঙত না। কিন্তু আমার যে অফিসে যেতে হবে। এখন? আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা না করেই বেরিয়ে পড়লাম। অফিসে এসে আমার ডেস্কে বসে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম। তারপর ল্যাপটপটা ওপেন করে দেখলাম ৯ টা বেজে ৪৪ মিনিট। মানে ১৪ মিনিট লেট। এত তাড়াহুড়াতে গতরাতের স্বপ্নের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। কাজ করতে করতে হঠাত ইউনেস্কোর একটি আর্টিকেল চোখে পড়ল। সেখানে দেখলাম, বাংলাদেশের ৯০ % শিশু সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয় যা বাংলাদেশের মত একটা দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। কিন্তু এই ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে প্রাইমারী স্কুল শেষ করে মাত্র ৫০ % যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এবং যারা প্রাইমারী স্কুল শেষ করে যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই আবার ঠিকমত লিখতে পড়তে ও গুনতে পারে না মানে বেসিক লিটারেসি স্কিলগুলো পারে না। তারমানে স্কুলে ৬ বছরে তাহলে তারা কি করছে? আর পরীক্ষায় কিভাবে পাশ করে বেরোচ্ছে? পিএসসি পরীক্ষায় এত জিপিএ ৫ ই বা কিভাবে পাচ্ছে? এত এত প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরতে আরম্ভ করল। ঠিক তখনই গতরাতের স্বপ্নটি মনে পড়ে গেলো। আচ্ছা এই স্বপ্নের মানে কি? কেউ কি বলতে পারবেন এই স্বপ্নের সাথে আমার পড়া আর্টিকেলটার কোন যোগসূত্র আছে কি না? প্রতিদিনকার মত অফিস শেষ করে বাসায় এসে চা খেলাম, টিভি দেখলাম, খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমাতে গিয়ে ভাবলাম, শীতকাল আসার আগেই আমাদের শহরে শীত নেমে গেলো। ঋতু হল শরত, বাইরে দেখি বর্ষা আর অনুভব করি শীত। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার ঠিক আমার স্বপ্নের মত!
অন্যরকম ক্লাসরুম
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×