আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনেই আমি বুঝে গেছি যে, ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের সাথে আমার দা-কুমড়ো সম্পর্ক। আমার হাতে কিছুই টেকে না। হয় আমিই কিছু ঘটাই নাহয় আমার সাথেই কিছু না কিছু ঘটে। ছোটবেলায় আমি ছিলাম ঘড়ির যম আর মেঝ বেলা থেকে হয়েছি মুঠফোনের যম।
গত দশ বছর ধরে নিজের মুঠোফোনের আছে। তবে এই সময়ে বছর সংখ্যার প্রায় সমান মুঠোফোন আমার হাত থেকে চলেও গেছে। তবে প্রথম মুঠোফোনের কথাটা আজো ভুলতে পারি না। আমার প্রথম প্রেম আর প্রথম মুঠোফোনের জন্ম প্রায় সমসাময়িক। সেই প্রেম আজ নেই সেই philips160 টা নেই। আমি তখন কলেজে যাওয়া শুরু করেছি। পছন্দের মানুষটিও ধরা দিচ্ছি দিচ্ছি করছে। এমন সময়ে আমার হাতে একটা মুঠফোন না থাকলে কি চলে?? অন্তত প্রেমটা গাঢ় করতে একটা মুঠোফোন দরকার। কিন্তু আমার বাবা-মা তো একটি পয়সাও দিবে না।
কলেজে টিফিন খাবার জন্য ১০-২০ টাকার বেশি পেতাম না। বেশ কিছুদিন আমার টিফিন খাওয়া হয় নি, টাকা জমিয়েছি। তাও হচ্ছিল না। তাই কলেজের বেতন নিয়েছি বাসা থেকে। এভাবে একদিন টাকাটা জমে গেল। কিনে ফেললাম আমার প্রথম মুঠোফোন। প্রেমের প্রথমদিনগুলো বেশ ভালোই কাটছিলো। রাত জেগে কত কথা হত। বাসার ছাদ দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় কথা চলতে চলতে কখন যে ৬০০ টাকার কার্ড ফুরিয়ে যেত তা টেরই পেতাম না। একদিন সেই সুখের ইতি ঘটল।
গত দশ বছরে কত সেট আসলো আর গেল। কিছুই আমার হাতে টেকে না। প্রেমটা তাও টিকলোনা। মাজে মাজে কিছু কথা হয় কিছু সময় পরে হয়তো আর কথা ও হবে না, যদিও মনের ভেতরকার সম্পর্কটা ছিড়ে যাবার নয়। আজও কান্না পাচ্ছে, কিন্তু কাঁদবো না। আমি বড় হয়েছি না! প্রায় ১০ টা বছর পর কিছু হারিয়ে কাঁদার বয়স আমার আর নেই।