২০২০ এ আমার গৃহকর্মী নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম শিরোনাম ছিল
বুয়াদের জ্ঞ্যান গরিমা পোস্টের বিষয়বস্ত ছিল বিভিন্ন বিষয়ে তাদের পান্ডিত্য। পুথিগত শিক্ষা না থাকলেও জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় নানা বিষয়ে নানান অভিজ্ঞতা থেকে তারা অনেক ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে।
আমি বেশ কিছুদিন পেটের ব্যাথায় ভুগছিলাম। কোথায় ব্যাথা, কেমন ব্যাথা,কতক্ষণ থাকে, কি খেলে হয় জেনে শুনে সে বলেছিল "ডড়াইয়েন না খালাম্মা এইডা ঘেষ্টিকের ব্যাতা, তেল মরিচ কম খান আর বেশি ব্যাতা করলে দুকান থিকা একটা ঘেষ্টিকের বড়ি আইনা খাইয়েন, ভালা হইয়া যাইবেন, বড়িডা কইলাম চুইষা খাইতে হয়"।
আমার স্বামী যথারীতি বুয়ার ট্রিটমেন্ট এ ভরষা করতে পারলো না। নিয়ে গেল প্রাক্তন এপলো বর্তমান এভার কেয়ারে। এই বিষয়ের সেরা বিশেষজ্ঞের সাথে এপয়েন্টমেন্ট করে। উনি তো আমাকে এই টেস্ট সেই টেস্ট করিয়ে বিশ হাজারের উপর টাকা খসিয়ে একটা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিল। সেখানে বিতিকিচ্ছিরি ভাবে একটা রোগের নাম লেখা যা ডায়গনোসিস করা হয়েছে। আমি নার্ভাস ভাবে জানতে চাইলাম "সহজ ভাষায় বলেন ডাক্তার সাহেব আমার কি অসুখ"? উত্তর আসলো "গ্যাস্টিক, ঔষধ লিখে দিয়েছি, নিয়ম করে খাবেন"।
আমি চমকে গেলাম,বুয়াতো তাহলে ঠিকি ধরেছিল আমার অসুখ তবে তার প্রেসক্রিপশনে ওমিপ্রাজল / সার্জিলের নাম ছিল না এই যা আর আমার থেকে টেস্ট বাবদ মোটা টাকাও খসায় নি সে।
যাই হোক অনেক দিন পর অর্থাৎ কোভিডের সময় দেশে গিয়ে থিতু হবার পর কাল দুপুরে নীচ থেকে ইন্টারকমে কেয়ার টেকার জানালো, "ম্যাডাম আপনার পুরনো বুয়া সোহাগের মা এসেছে, পাঠাবো"?
আমি সাগ্রহে বলে উঠি "হ্যা হ্যা পাঠাও'।
চিরাচরিত ম্যাক্সি পরা মাথায় ওরনা সোহাগের মা এসে হাজির। বসার ঘরে এসি ছেড়ে বসলাম, জিজ্ঞেস করলো "খালাম্মা ভালো আছেন তো? আপনাগো কথা ভুলতে পারি না, সব সময় মনে হয় "। আমরা আছি একরকম জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম " তোমার কি খবর সোহাগের মা? নাতি পুতি নিয়ে ভালো আছো তো "?
আমার কথা শুনে হঠাৎ সে ঝরঝর করে কেদে উঠলো, আমি তো হকচকিয়ে গেলাম, বললাম "কি হয়েছে? কি হয়েছে? কাদছো ক্যানো"!
সে পেটে হাত দিয়ে আমার দিকে করুন চোখে চেয়ে বল্লো " খালাম্মা আমার পেটের এইখানে একটা টিউমার হইছে, ডাক্তার আল্টাসনু করছে এখন সন্দেহ করতাছে সময় মত অপারেশন না করলে ক্যান্সার হইতে পারে "। সে হাত দিয়ে যে সাইজ দেখালো তা প্রায় একটা টেনিস বলের মত।
ক্যান্সারে মারা যাওয়া মায়ের মেয়ে আমি আর্ত গলায় প্রশ্ন করলাম " এত বড় টিউমার তো আগে টের পাও নি"! কাদতে কাদতে জানালো "না খালাম্মা"। চোখের পানি মুছিয়ে তার হাতে সামান্য কিছু সাহায্য করলাম যা এই চিকিৎসায় কিছুই না। কিছু খেলো না, বল্লো খেলে বমি আসে।
ভবিষ্যতে যোগাযোগ করার জন্য বললাম। জানিনা আর আসবে কি না, মনটা খারাপ হয়ে গেল। শুধু ভাবছি হায়রে সোহাগের মা তুমি আমার অসুখটা কত সহজে ধরে ফেললে আর নিজের এত বড় অসুখটা ধরতে পারলে না!
ছবি নেট
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৪