somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষন, ধর্ষক এবং ধর্ষিতা বিষয়ক

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে কিভাবে এতদিন আইনসংগত ছিল সেটাই মাথায় আসতেছে না। অপরাধী এবং ভিক্টিমের বিয়ে বৈধ থাকার কারণে ভিক্টিমকে ভয়, হুমকি কিংবা ব্লাকমেইল করে বিয়েতে রাজি করানো এবং বিনা শাস্তিতে অপরাধীর মাফ পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
আবার অপহরণ বা ধর্ষণজনিত কারণে সৃষ্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে (বিধিমালায় বিশেষ পরিস্থিতির ব্যাপারে কিছু বলা নাই) অভিভাবক এবং আদালতের সম্মতিতে বাল্য বিবাহেরও সুযোগ আছে…. বড়ই সৌন্দর্য!
অপরাধ অপরাধই। অপরাধ যা-ই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে, কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। ধর্ষণের মত ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের পক্ষে এহেন আইন প্রণয়ন করে কি আদালত ধর্ষকদের উস্কে দিচ্ছে না?
আজকে দেখলাম, নতুন বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, 'ধর্ষক, অপহরণকারী বা জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকারীর সঙ্গে বাল্য বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।'
এর মানে কি দাড়াল? ধর্ষিতা প্রাপ্ত বয়স্কা হলে তাকে ধর্ষণকারীর সাথে বিয়ে দেয়া যাবে?
অপরাধীর সাথে বাল্য বিয়ে যেমন নিষিদ্ধ হতে চলছে, প্রাপ্ত বয়স্কা ভিক্টিমের সাথে বিয়েও কি নিষিদ্ধ করা উচিৎ না?
ধরা যাক, ধর্ষণ পরবর্তী সময়ে উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ হল। তারপর? আইনি বিধিমালায় ধর্ষকদের জন্য যে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে তার কি হবে? বিয়ে করেই খালাস পেয়ে যাবে অপরাধী?
উভয়ের সম্মতিতে ধর্ষণকারীর সাথে ভিক্টিমের বিবাহ হয়ে গেলে জেল জরিমানা হবে না? সাতখুন মাফ?
আমাদের সমাজে এসব ক্ষেত্রে আইনী সহায়তার পরিবর্তে সালিশি ব্যবস্থার উপর বেশি নির্ভরশীল হতে দেখা যায়। বিশেষ করে অপরাধীরা এইসব ক্ষেত্রে ভাল এডভান্টেজ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধী নিজের পক্ষে রায় নিয়ে যায়। শাস্তির বদলে অপরাধীর সাথে ভিক্টিমের বিয়ে দেয়া হয় বা নামেমাত্র জরিমানা করা হয় বা উভয়ই ঘটে। আদালতও যেহেতু বিবাহ বৈধ করে দিয়েছে সেহেতু অপরাধীর রায় পক্ষে নিয়ে আসা সহজ হয়ে যায়। লোকলজ্জার ভয়, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বা অন্য কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিক্টিমও বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
যেসব পরিস্থিতিতে একজন পুরুষকে ধর্ষনকারী হিসেবে গণ্য করা হবে তার মধ্যে একটি হল, ' সম্মতি বা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে, যখন ভিক্টিমের বয়স চৌদ্দ বছরের নিচে ।'
এটাকে বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে অপরাধী এবং ভিক্টিমের বিবাহ বৈধ হলে সেটা গ্রহণ করা যায়। আবার এরকম ঘটলে ব্যাপারটা বাল্য বিবাহের মধ্যে পড়ে যাবে। এজন্য স্পষ্ট আইন থাকা জরুরী। 'বিশেষ পরিস্থিতি'র ট্যাগ লাগিয়ে শাস্তিযোগ্য ধর্ষণকেও বিশেষ পরিস্থিতির আওতায় আনার সুযোগ রেখে দিচ্ছে। অপরাধী মাথা গলিয়ে বের হয়ে যেতে পারে এত বিশাল ফাঁকও বলতে পারেন এটাকে।
আবার সম্মতিতে, যখন মেয়েটিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেটি সম্মতি আদায় করে ছেলেটি জানে ভবিষ্যতে সে মেয়েটিকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করবে না, সে ক্ষেত্রেও ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। এটার ব্যাখ্যা হাতের কাছে পাওয়া গেলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হত।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল হোসেন এবং আরাফাত সানীর বিরুদ্ধে তাদের প্রেমিকারা যথাক্রমে হ্যাপি এবং নাসরিন যে ধর্ষণ মামলা করেছিল তা কি এর আওতায় ছিল?
তারপরও ব্যাপারটা আমার কাছে হাস্যকরই মনে হচ্ছে। ধরা যাক, একজন পুরুষ কোন নারীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হল। তখন অবধি পুরুষটির নিয়ত ছিল এই মেয়েকেই বিয়ে করবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল পরিস্থিতি বদলে গেছে। কোন কারণে পুরুষটির পক্ষে ঐ মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব হচ্ছে না। ধরা যাক, পুরুষটির সামনে ঐ মেয়ের এমন কিছু বিষয় উন্মোচিত হল যার ফলে ঐ মেয়ের সঙ্গ পুরুষটিকে বিতৃষ্ণায় ভোগাচ্ছে। অসুখী দাম্পত্য জীবনের কথা চিন্তা করে পুরুষটি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত বাতিল করল। এহেন পরিস্থিতিতে মেয়ে যদি পুরুষটির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে তখন আদালত কি করিয়া অপরাধীর মনের অবস্থা বুঝিবে?
ধর্ষণ, ধর্ষক, ধর্ষিতা বিষয়ক আইনের ব্যাপারে মুখে মুখে শোনা ছিল। কখনো ভালোভাবে দেখতে যাওয়া হয় নাই। আজকে খুব আগ্রহ নিয়ে দেখলাম। দেখার পর আমার মনোভাব কেমন তা তো দেখলেনই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×