somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মৃত’ সোলাইমান যখন সাক্ষ্য দিতে হাজির হবেন আদালতে...

৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




শনিবার (৩১ মে ২০২৫) আজকের পত্রিকার একটা প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে চমকে ওঠেছিলাম। শিরোনাম: “শেখ হাসিনা যাঁকে ঢাকায় ‘হত্যা করলেন’, তিনি ময়মনসিংহে জীবিত!”; প্রতিবেদক ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ।

প্রতিবেদনে প্রতিবেদক লেখেন: “মামলায় ‘নিহত’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পর কোনো মানুষ যখন নিজের পায়ে থানায় হাজির হয়ে বলেন, ‘আমি মরিনি, বেঁচে আছি’—তখন তা শুধু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং দেশের বিচারব্যবস্থা ও তদন্তপ্রক্রিয়ার বড় ব্যর্থতা তুলে ধরে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ব্যবসায়ী মো. সোলাইমান হোসেন সেলিমকে জীবিত থাকা অবস্থায় ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ বানিয়ে মামলা ঠুকে দিয়েছেন তাঁরই সহোদর বড় ভাই গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু।

আর এই মামলার আসামির তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছেন জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। মামলায় তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৪১ জনের নাম যুক্ত করে অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পেছনে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে সংঘাত এবং তা থেকে উদ্ভূত ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে পদ্ধতিগত দুর্বলতা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে।”

এ-বিষয়ে আরেক প্রতিবেদন দেখলাম আজকের পত্রিকায়। ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম: “জীবিত ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলায় সাক্ষীও দুই ভাই, নেপথ্যে যা জানা গেল”।

প্রথমত ঘটনা দুঃখজনক। দ্বিতীয়ত জুলাই-অস্থিরতাকে উপলক্ষ করে এটা আরও একটা ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা। এইধরনের মামলা নতুন নয়। জুলাই-অস্থিরতার সময়ে নিহত হিসেবে নথিভুক্ত অনেকেই ফিরে আসার নজির আছে দেশে। এটা তারই নতুন আরও এক প্রমাণ।

আজকের পত্রিকার প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এটা তাদের পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ অথবা সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অভিসন্ধি থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়: “জীবিত সেলিমকে কেন নিহত দেখিয়ে মামলা করলেন তাঁরই ভাই মস্তু? ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে তাঁদের বাবা আব্দুল হাকিম মারা যান। এরপর থেকেই ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। সেলিমের শুধু দুই কন্যাসন্তান থাকায় তাঁর ভাগের সম্পত্তিতে নজর পড়ে বাকি তিন ভাইয়ের। দুটি হত্যাসহ চারটি মামলায় জড়িয়ে নিঃস্ব মস্তু ফন্দি আঁটেন সেলিমকে নিয়ে। এ বিষয়ে মো. সোলাইমান হোসেন সেলিম বলেন, ‘মস্তু এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত। সে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ১৫ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। কিন্তু বাকি দুই ভাইকে দিয়ে আমার সম্পত্তি গ্রাস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমার ছেলেসন্তান নেই বলে সবকিছু তাদের লিখে দিতে বলে। তাদের অত্যাচারে ধামর বেলতলি বাজারে আড়াই শতক জমি কিনে বাড়ি ও দোকান করে চলেছি। বাপের ভিটায় গেলেই ঝগড়া হয়, তাই যাওয়া হয় না।’”

পারিবারিক বিরোধের প্রসঙ্গটুকু না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু এখানে কি প্রশ্ন ওঠে না, মামলার বাদী গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু ডাকাত কীভাবে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪১ জনকে অভিযুক্ত করলেন? ময়মনসিংহের স্থানীয় এক 'ডাকাত' কীভাবে এত আওয়ামী লীগ নেতার নাম জানলেন? কীভাবে তিনি অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে অভিযুক্ত করলেন?

এখানে কি রাজনৈতিক যোগসূত্র থাকে না? এখানে কি রাজনীতির সঙ্গে থাকা কেউ যুক্ত নন?

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে সবচেয়ে সহজ বিষয় হচ্ছে পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের নামে মামলা ঠুকে দেওয়া। সারাদেশে লাখ-লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মামলার আসামি। এমন অসংখ্য মামলা রয়েছে যেখান থেকে আসামির স্থানিক দূরত্ব কয়েকশ মাইলও। এমন অনেকেই মামলার আসামি হয়েছেন, যারা একই দিন নানা জায়গায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। এই মামলাগুলো যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। হয়রানি করতে এই মামলাগুলো যে হয়েছে, সেটা সরকারের লোকজনও বিভিন্ন সময় নানাভাবে স্বীকারও করেছেন।

মামলায় গণহারে আসামির নাম দেওয়া হয়েছে মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। এবং এগুলোতে সরাসরি জড়িত বিএনপির লোকজন। তাদের কেউ মামলা-বাণিজ্যের ফাঁদ পেতেছেন, কেউ কেউ প্রতিহিংসার বশে অনেকের নাম জুড়ে দিয়েছেন।

মো. সোলাইমান হোসেন সেলিমকে মৃত দেখিয়ে তাঁর ভাই গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তুর এই মামলাকে তাই স্রেফ পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত কাণ্ড হিসেবে ভাবার সুযোগ সামান্য। এখানে জড়িত নিশ্চিতভাবে স্থানীয় আওয়ামীবিরোধী কেউ। তারা এখানে গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু ডাকাতকে ব্যবহার করেছে।

এখন মিথ্যা মামলার অভিযোগে হয়ত আইনি ব্যবস্থার প্রসঙ্গ আসবে, এবং ওখানে গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু ডাকাতকেই কেবল অভিযুক্ত করা হতে পারে, কিন্তু ওই মামলার আসামির নাম জুড়ে দিতে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের কী হবে? তারা কি আড়ালেই থেকে যাবে?

এমন মামলার সংখ্যা তো দেশে এখন হাজার-হাজার, যেখানে বাদী চেনেন না আসামিদের, আসামিও চেনেন না বাদীকে।

এবার চলুন কিছু রঙ্গ করি

আদালতে উঠল মো. সোলাইমান হোসেন সেলিম হত্যা মামলা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রমাণে ব্যস্ত যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আসামিরা সেলিমকে গুলি করে হত্যা করেছেন এবং হত্যাকাণ্ডের অংশ ছিলেন।

উকিল **ল: ধর্মাবতার, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের নিজ হাতে গুলি করে মেরেছেন সোলাইমান হোসেন সেলিমকে। বয়স তাঁর ৫০ ধর্মাবতার। এই বয়সের শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত সেলিম সাহেব ধার্মিক মানুষ। তিনি নামাজে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু খুনিরা তাঁকে নামাজে যেতে দেয়নি।

উকিল **ল আরও বলেন, একটা ছোট্ট মুদি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ধর্মাবতার। অথচ কত পাশবিকভাবে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে ধর্মাবতার। আমরা এর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

আদালত প্রমাণ চাইলেন।

উকিল **ল: ধর্মাবতার, অনেক প্রমাণ তো উপস্থাপন করেছি। এবার এমন একটা প্রমাণ করব যিনি চাক্ষুষ সাক্ষী; আর গভীরভাবে বললে ধর্মাবতার বলা যায় হত্যাকাণ্ডের শিকার জুলাই-যোদ্ধা, জুলাই-শহিদ সেলিম সাহেবকে হাজির করব। মাননীয় ধর্মাবতার, এবার আপনি নিজ চোখে দেখবেন, নিজ কানে শুনবেন, কীভাবে তাঁকে গুলি করে মেরেছিল ফ্যাসিস্ট সরকার।

আদালত নড়েচড়ে বসলেন।

উকিল **ল: এরপর নিশ্চয় আর আদালতের কাছে প্রমাণের বাকি থাকবে না যে, আসামিরা কীভাবে সেলিম সাহেবকে শহিদ করেছিল। এভাবে কয়েক হাজার লোক শহিদ হয়েছেন; আমি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।

উচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত হলো: সোলাইমান হোসেন সেলিম হা-জি-র..

মামলার শুনানি সরাসরি দেখাচ্ছিল বিটিভিতে। উকিল জনাব ***লের যুক্তিতর্ক দেখে আবেগ উথলে ওঠল কয়েকজনের। একজন চোখের জল মুছতে মুছতে অসহায় দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে দুই হাত তুলে ফেলল।

আরেকজন আবেগ কিছুটা সামলে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে ওঠলেন--দেখলেন তো, কত পাশবিক কাণ্ড। মৃত ব্যক্তি নিজে এসে বলছে কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে; এরপরেও আর কী প্রমাণের বাকি থাকে!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:৩৯
৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×